টাকা সরিয়ে ধরা পড়ায় দুই খালাকে খুন করে কিশোর: ডিবি
Published: 12th, May 2025 GMT
পুরোনো বাইসাইকেল কিনতে ৩ হাজার টাকা দরকার ছিল ১৫ বছর বয়সী কিশোরের। এ জন্য রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুরে খালার বাসায় টাকা চাইতে যায় সে। ভাগনের জন্য শরবত বানাতে ডাইনিংরুমে যান খালা মরিয়ম বেগম। এ সময় খালার মানিব্যাগ থেকে টাকা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে কিশোরটি। খালা তার মাকে বলে দেবেন বলে ভয় দেখান। তখন তাকে ছুরিকাঘাত করে সে। চিৎকার শুনে অন্য কক্ষ থেকে আরেক খালা সুফিয়া বেগম এগিয়ে এলে তাঁকেও ছুরিকাঘাত করে ওই কিশোর।
আজ সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছুরিকাঘাতের পর ওই কিশোর বাসার রান্নাঘরে গিয়ে পাটা এনে দুই খালার মাথায় আঘাত করে।
গত শুক্রবার রাজধানীর পশ্চিম শেওড়াপাড়ার একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাবেক কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম (৬০) ও তাঁর ছোট বোন সুফিয়া বেগমকে (৫২) ছুরিকাঘাত, শিলনোড়ার আঘাতে হত্যা করা হয়। সেদিন রাত ১১টার দিকে পুলিশ তাঁদের লাশ উদ্ধার করে।
ওই কিশোরকে আইনের সংস্পর্শে আনা হয়েছে বলে জানান ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবার বেলা ১২টা ৪৭ মিনিটে খালার বাসায় যায় ওই কিশোর। দুই খালাকে হত্যার পর বেলা ১টা ৫৭ মিনিটে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় সে। বাসায় যখন যায়, তখন তার পরনে ছিল লাল টি–শার্ট, মাথায় ক্যাপ ও জিনস প্যান্ট। হত্যার পর পরনের টি–শার্ট পরিবর্তন করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় ওই কিশোর।
ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণে ওই কিশোরকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল গভীর রাতে ঝালকাঠির সদর উপজেলার আছিয়ার গ্রাম থেকে তাকে পরিবারসহ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর এই হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করে।’
আরও পড়ুনশেওড়াপাড়ায় দুই বোনকে হত্যায় সিসিটিভিতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তি গ্রেপ্তার: পুলিশ৩ ঘণ্টা আগেডিবি জানায়, এই কিশোর শুরু থেকেই পুলিশের তৎপরতার ওপর নজর রাখছিল। তদন্তের কাজে পুলিশ যেখানে যায়, সেখানে গিয়ে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিল। পুলিশকে সে নানা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছিল।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ঘটনার পেছনে জমি-সম্পদ নিয়ে কোনো বিরোধ ছিল কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরে যেসব বিষয় গুরুত্ব পাবে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ মঙ্গলবার চার দিনের মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ সফরে যাচ্ছেন। এই সফরে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে একাধিক বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। ট্রাম্প এমন সময় এই সফর করছেন, যখন মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই সফরে গাজায় যুদ্ধবিরতি, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, বাণিজ্য ও তেলের দাম কমানো নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। এসব দেশে তাঁর সন্তানদের একাধিক ব্যবসা ও আবাসন প্রকল্প আছে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে দুটি দেশ সৌদি আরবে বৈঠকে বসেছে। এ কারণে সৌদি আরব ওয়াশিংটনের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় সংক্রান্ত আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে কাতার।
ট্রাম্পের সফরের প্রথম দিনেই সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ ফোরাম অনুষ্ঠিত হবে। চলতি সপ্তাহেই এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এতে অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে ব্ল্যাকরকের সিইও ল্যারি ফিঙ্ক, প্যালান্টিয়রের সিইও অ্যালেক্স কার্প এবং সিটি গ্রুপ, আইবিএম, কোয়ালকম, অ্যালফাবেট ও ফ্রাঙ্কলিন টেম্পলটনের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা। এ ছাড়া হোয়াইট হাউসের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ক্রিপ্টোবিষয়ক উপদেষ্টা ডেভিড স্যাকসও এই ফোরামে অংশ নেবেন।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিকে ঘিরে বৈশ্বিক কেন্দ্র হতে চাইছে। এ জন্য তারা এআই অবকাঠামোতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। এ কারণে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সেমিকন্ডাক্টর কিনতে চাইছে। বাইডেনের আমলে এ বিষয়ে আইনি জটিলতা থাকলও ট্রাম্প প্রশাসন সে বিষয়টি সহজ করতে চাইছে।
পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব। অন্যদিকে সৌদি আরব নিজস্ব বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে চায়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ও সহায়তা চেয়েছে দেশটি।
ইসরায়েল-গাজা আলোচনাট্রাম্পের সফরের আরেকটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ। তিনি এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে গাজা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যও করেছেন তিনি। সম্প্রতি বলেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তা-ই নয়, তিনি গাজাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ আবাসন প্রকল্প’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।’
তেলের দাম এবং অর্থনীতিসিরিয়ার নতুন সরকারের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয় নিয়েও এই সফরে আলোচনা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ব্রাঞ্চ। এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন পারস্য উপসাগরের নাম পাল্টে ‘আরব উপসাগর’ হিসেবে ঘোষণা দিতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। আরব দেশগুলো নতুন নাম উত্সাহের সঙ্গে গ্রহণ করলেও ইরান কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।
তেলের দাম নিয়ে আলোচনাও গুরুত্ব পাবে। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোকে (ওপেক) তেলের উৎপাদন বাড়াতে চাপ দিয়ে আসছিলেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের জন্য দাম কমানো যায়। তাই এই সফরে তেলের উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে।