শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে বিরোধের জেরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগ
Published: 13th, May 2025 GMT
পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটি ঘাটে লোড-আনলোডে শ্রমিক সরবারহ নিয়ে বিরোধের জেরে শাহিন মৃধা নামে এক ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) সকাল ১১টার দিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের মরিচবুনিয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম শাহিন মৃধা। তিনি ধানখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদার। তিনি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
আরো পড়ুন:
নাসিক ভবনে অটোরিকশাচালকদের হামলার অভিযোগ
রাতে আবার ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলা
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সার্ভিস জেটি ঘাটে লোড-আনলোডের শ্রমিক সরবারহকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে শাহিন মৃধা ও আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদার গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছে। এরই জেরে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৫০-৬০ লোক শাহিন মৃধার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেন। এসময় শাহিন মৃধা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ছিলেন। পরে স্থানীয়রা তাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন।
ঘটনা সম্পর্কে শাহীন মৃধার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে, তার ভাই রুবেল মৃধা বলেন, “এক নেতার নির্দেশে কিছু দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে আমার ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। মহসিন তালুকদার কলাপাড়া থেকে শতাধিক লোক ভাড়া করে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। আমরা বিচার দাবি করছি।”
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদার বলেন, “আমি ১২ লাখ টাকার একটি কাজ পেয়েছি। মানে বার্জ আর পেলুডার ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়েছি। কাজ পাওয়ার পরই শাহিন মৃধা আমার কাছে চাঁদা দাবি করেন। তাকে ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছি। পরে আরো ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছে, ওই টাকা না দেওয়ায় গতকাল সোমবার রাতে আমার লোকজনকে মেরে বার্জ আর পেলুডার ছিনতাই করেছে। সেগুলো কোথায় আছে তা জানি না।”
তিনি বলেন, “আজ সকালেও আমার লোকজনকে মারধর করা হয়েছে। আমি থানায় পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে অভিযোগ করেছি, কিন্তু পুলিশ কোনো ভূমিকা নেয়নি। আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি। আগুনের ঘটনার সঙ্গে আমি কোনভাবেই জড়িত না। তিনি (শাহিন মৃধা) নিজেই নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছেন।”
কলাপাড়া থানার ওসি জুয়েল ইসলাম বলেন, “ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আগ ন ল ইসল ম ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা দখল করে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়তে চান নেতানিয়াহু
নিজের জনগণকে ৬৭০ দিনের বেশি সময় ধরে ধ্বংস হতে দেখার বেদনা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এত কষ্ট, এত অপরাধের সাক্ষী হওয়ার পরও গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরেক দফা ইসরায়েলি হামলার কথা ভাবা পর্যন্ত কল্পনার বাইরে। অথচ বিশ্বের চোখের সামনেই এটি হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ব কি শুধু দাঁড়িয়ে দেখে যাবে?
ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা গাজায় এই নতুন হামলার ঘোষণা দিয়েছে। গাজা উপত্যকাকে ‘সম্পূর্ণ দখল’ করার জন্যই তারা সেখানকার জনবসতিগুলোয় হামলা চালানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এ হামলা শুরু হবে গাজা সিটি থেকেই। এর ফলাফল অনুমান করা কঠিন নয়।
২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক সতর্কবার্তা ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ অমান্য করে ইসরায়েল রাফা এলাকায় হামলা চালায়। আজ রাফার কোনো অস্তিত্ব নেই। এরপর ২০২৪ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে তারা উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া, বেইত হনুন ও জাবালিয়া শহরে হামলা চালিয়ে সেগুলো ধ্বংস করে দেয়।
আরও পড়ুনমুখ ফিরিয়েছে বিশ্ব, গাজা কি নিভে আসছে ০৯ জুন ২০২৫সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালন এ অভিযানকে বলেছেন ‘জাতিগত নিধন’। এরপর ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফেলে, ২০ লাখ বেঁচে থাকা মানুষকে অনাহারে রাখে এবং দক্ষিণের খান ইউনিস শহর ধ্বংস করে দেয়। এসব কাজ ২০২৪ সালের জানুয়ারি, মার্চ ও মে মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের দেওয়া তিনটি গণহত্যাবিরোধী রায়ের সরাসরি লঙ্ঘন।
জানুয়ারিতে আদালত গাজায় গণহত্যার ঝুঁকি আছে বলে জানান এবং তা ঠেকাতে কিছু ব্যবস্থা নিতে বলেন। এর মধ্যে ছিল গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু দেখা গেল, ইসরায়েল এই নির্দেশ মানছে না। গাজা সিটিতে হামলা হলে তা এই গণহত্যা অভিযানের শেষ ধাপ হবে।
যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা দেশগুলো গত দুই বছরে ইসরায়েলের গণ–অত্যাচারের সহযোগিতার দায় থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারবে না। ইসরায়েলকে জবাবদিহি থেকে মুক্তি দিয়ে এবং এই দুষ্ট রাষ্ট্রকে অস্ত্র সরবরাহ করে পশ্চিমারা এই অপরাধগুলোকে সম্ভব করেছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার যে ঘোষণাগুলো এসেছে, তা কেবল প্রচারমূলক চাল ও মনোযোগ সরানোর কৌশল।৭ অক্টোবরের পরপরই ইসরায়েলের নেতা, রাজনীতিক, সামরিক কমান্ডার ও সেনারা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তাঁরা গাজাকে ধ্বংস করে দেবেন, পুড়িয়ে দেবেন এবং সমতল করে দেবেন। তাঁরা ঠিক সেটাই করেছেন। তাঁরা গাজার ৯০ শতাংশ এলাকা কার্যত ধ্বংস করে এটিকে জনমানবহীন মরুভূমিতে পরিণত করেছেন। বাকি জনসংখ্যাকে ঠাসা অবস্থায় মাত্র ১২ শতাংশ এলাকায় গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। সেখানে মানুষের বেঁচে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নেই। অবরোধ আর বোমাবর্ষণের মাধ্যমে ইসরায়েল গাজায় কোনো নিরাপদ জায়গা রাখেনি। বাইরে যাওয়ারও কোনো পথ রাখেনি।
এখন গাজা সিটি, দেইর আল-বালাহ বা আল-মাওয়াসির বাকি জনবসতিতে হামলার মানে হবে নতুন গণহত্যা, আরও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি এবং অবশিষ্ট অনাহারগ্রস্ত মানুষকে সরাসরি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এর মানে ইসরায়েল আসলে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়ার মেসিয়ানি কল্পনা ও অপরাধমূলক প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে—ইসরায়েলের লক্ষ্য ‘সর্বোচ্চ পরিমাণ জমি, সর্বনিম্নসংখ্যক আরব’।
গাজায় দাতব্য রান্নাঘরের সরবরাহ করা খাবার সংগ্রহ করতে ফিলিস্তিনিদের ভিড়।