শেখ হাসিনা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দিল্লির কাছে আত্মনিবেদন করে
Published: 13th, May 2025 GMT
শেখ হাসিনা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে দিল্লির কাছে এমনভাবে আত্মনিবেদন করেছিলেন, সে আত্মনিবেদন থেকে তিনি ফিরে আসতে চাননি। তিনি সেটা করলেন এবং তার এফেক্ট শুরু হয়েছে। এর বর্জ্য নদীতে পড়ছে। দিনকে দিন নদীগুলোর পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে এবং আমরা ভয়ংকর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুর পৌনে একটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহর হোসেন চৌধুরী হলে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির উদ্যোগে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ফারাক্কা লং মার্চ স্মরণে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, ‘‘ফারাক্কা বাঁধ চালু করার বিষয়ে শেখ মুজিবকে জানানো হয়েছিল যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। তখন শেখ মুজিব অনুমতি দিলেন। সর্বনাশ সেদিনই হয়ে গেছে। এরপর আর তারা (ভারত) মনেই করেনি বাংলাদেশের সাথে কথা বলা দরকার।’’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘‘ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কথা বলেছেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘একটা স্টাইল হয়েছে যে, ভারতের বিরুদ্ধে কিছু বললে সে বোধহয় পশ্চাৎপদ, সে বোধহয় আধুনিক নয়, সে প্রগতিশীল থাকবে না এরকম প্রবণতা খুব পরিকল্পিতভাবে মাইন্ডসেট চালানো হয়েছে। আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবি থেকে শুরু করে অনেকের মধ্যে এই প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু এদেশে ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে এই শব্দগুলো ব্যবহার করেছে বামপন্থীরা। কিন্তু এখন সেভাবে তারা সোচ্চার নেই।’’
গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
ঢাকা/রায়হান
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতার দিকে সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রা
নির্বাহী বিভাগের গুরুত্ব বিশ্বজুড়েই বেড়েছে। রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান কাজ ও জটিল পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কার্যকর নেতৃত্ব দেওয়া এখন নির্বাহীর অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু একই সঙ্গে এই বাড়তি নির্বাহী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা করাও কঠিন হয়ে উঠেছে। গবেষকেরা বলেন, নির্বাহী ও আইন পরিষদের মধ্যে সম্পর্কই সরকারের মূল সংযোগ। এই সম্পর্ক জাতীয় রাজনীতির চরিত্র, প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা ও ক্ষমতার ভারসাম্য নির্ধারণ করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাহীর প্রভাব রাজনৈতিক কাঠামো, গণতন্ত্রের ধরন ও জরুরি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়ে থাকে।
ওয়েস্টমিস্টার পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই কেন্দ্রীয় চরিত্র। যুক্তরাজ্য, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীরা প্রায় একই রকম ক্ষমতা ভোগ করেন, যদিও ক্ষমতা প্রয়োগের ধরনে পার্থক্য আছে। অনেক সময় সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর এই বাড়তি ক্ষমতা শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা গেলেও সেটি গণতন্ত্রের ভারসাম্য ও জবাবদিহির জন্য হুমকি হতে পারে।
কে এম মহিউদ্দিন তাঁর বইটিতে সংসদীয় শাসনে প্রধান নির্বাহীর ক্ষমতা কীভাবে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, মন্ত্রিসভার সম্মিলিত দায়বদ্ধতা কীভাবে ক্ষীণ হয়ে পড়ছে এবং এতে গণতন্ত্রের ওপর কী প্রভাব পড়ছে, তা বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। বইটির শুরুতেই লেখক আলোচ্য বিষয়ের পরিসর ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন। এরপর তিনি ১১টি অধ্যায়ে ভাগ করে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরেছেন: প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র আধিপত্য বনাম মন্ত্রিপরিষদের সম্মিলিত নেতৃত্ব, প্রধানমন্ত্রীর দায়বদ্ধতা ও ক্ষমতার পরিধি, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ক্ষমতার ভারসাম্য, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, প্রধান নির্বাহীর কার্যালয়ের ভূমিকা, সাংবিধানিক কাঠামোতে জবাবদিহি, নির্বাচনে প্রতিনিধিত্ব, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিসরে দায়বদ্ধতা এবং শেষ অধ্যায়ে এক অমীমাংসিত প্রশ্ন হিসেবে হাইব্রিড গণতন্ত্রের মধ্যে একনায়কতন্ত্রের উত্থান।
লেখকের মূল যুক্তি হচ্ছে যদিও সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে উৎসাহ দেওয়া হয়, বাস্তবে প্রধানমন্ত্রীই হয়ে উঠেছেন সর্বত্র ক্ষমতাধর। ঐতিহাসিক ও তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে লেখক দেখিয়েছেন কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদের যৌথ নেতৃত্ব ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং একক নির্বাহী ক্ষমতা বাড়ছে।
বইয়ের আকর্ষণীয় অংশ হলো এই ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণের পেছনে কাঠামোগত উপাদানগুলোর বিশ্লেষণ—যেমন দলীয় রাজনীতির ধরন, নেতৃত্বপূজা, নির্বাচনী কৌশল, পৃষ্ঠপোষকতার সংস্কৃতি, সংবিধানের বাইরে গিয়ে ক্ষমতার ব্যবহার, বিরোধী পক্ষকে দুর্বল করা, জবাবদিহির অভাব ও কর্তৃত্ববাদী মনোভাব। এসব উপাদানের ভিত্তিতে লেখক দেখিয়েছেন—সংসদীয় ব্যবস্থার মধ্যেই কীভাবে এক ‘রাষ্ট্রপতি-ধাঁচের’ প্রধানমন্ত্রী তৈরি হয়েছে।
তবে বইটি সম্পূর্ণ নিখুঁত নয়। লেখকের বিশ্লেষণ যতই গভীর হোক, কিছু ক্ষেত্রে তা পূর্বনির্ধারিত বা ‘ডিটারমিনিস্টিক’ বলে মনে হতে পারে। অনেক জায়গায় প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সংসদীয় কাঠামোর অন্যান্য ভারসাম্য রক্ষাকারী ব্যবস্থাগুলোর বিশ্লেষণ কিছুটা উপেক্ষিত হয়েছে।
তবু বইটিকে সমসাময়িক সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ, চিন্তাশীল ও তথ্যসমৃদ্ধ পর্যালোচনা বলা যায়। এটি একদিকে যেমন একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতার প্রতি সতর্ক করে, তেমনি গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহির প্রতি নতুন করে প্রতিশ্রুতি তৈরির আহ্বান জানায়।
বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে, সেখানে এই বই গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হতে পারে। সংসদীয় কাঠামোর ভারসাম্য রক্ষায় বিভিন্ন পক্ষের পর্যালোচনা ও মতামতের আলোচনায় এই গ্রন্থ চিন্তার খোরাক জোগায়। তাই নীতিনির্ধারক, গবেষক, সচেতন নাগরিক এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রচর্চার শিক্ষার্থীদের জন্য বইটি অবশ্যপাঠ্য। লেখকের অন্তর্দৃষ্টি ও বিস্তারিত গবেষণা ভবিষ্যতের পথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ কিংবা প্রধানমন্ত্রীর সরকার: গণতন্ত্রের ভেতরেই একনায়কতন্ত্রের উত্থান
কে এম মহিউদ্দিন
প্রকাশক: কথাপ্রকাশ
প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা
মূল্য: ৭০০; পৃষ্ঠা: ৩২৮
প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৫