যারা সংস্কারের তালিম দিচ্ছে, ১৭ বছর তাদের রাস্তায় দেখা যায়নি: আমীর খসরু
Published: 13th, May 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এখন যারা সংস্কারের তালিম দিচ্ছে, গত ১৭ বছর তাদের কাউকে রাস্তায় দেখা যায়নি। শেখ হাসিনা পালানোর পরবর্তী বাংলাদেশ কেমন হবে, সেই সংস্কারের কথা মাথায় রেখেই বিএনপি ৩১ দফা দাবি দিয়েছিল।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় এ কথাগুলো বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদ এ সভার আয়োজন করে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে গেলে যে কাজগুলো শুরু হওয়া প্রয়োজন, সেগুলোর কিছুই হচ্ছে না। তিনি মনে করেন, ভিন্নরূপে নানা ভঙ্গিতে পুরোনো কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে মানুষের কাছে এর আগে কেউ যায়নি। বিএনপি সেটা করছে। কারণ, যেকোনো সংস্কারের জন্য মানুষের সমর্থন দরকার। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো সংস্কার সম্ভব নয়।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে মৌলিক কাজগুলো করে গেছেন উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তিনি কোনো প্রচার–প্রচারণায় ছিলেন না। প্রচারণা থাকলে তিনি বিশ্বব্যাপী একজন ভালো মানুষ হতে পারতেন।
শেখ হাসিনার পতনের পেছনে অনেকে কৃতিত্ব নিচ্ছে উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পেছনে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ৪২ দলকে ঐক্যবদ্ধ করে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এটাই হাসিনার পতনের মূল কারণ ছিল। অথচ তাঁকে কেউ স্মরণ করছে না।
শেখ হাসিনা মানুষের মাঝে কিছু স্বৈরাচারী মনোভাব রেখে গেছেন উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সবাই সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু কোথায় ঐকমত্য হয়েছে, সরকার সেটা জানাচ্ছে না। তারা কেন জানাচ্ছে না? কেউ যদি মনে করে হাসিনার মালিকানা অন্য কারও হাতে গেছে, দেশে কী হবে, সেটার বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবে—এই দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র মালিক দেশের জনগণ।
দেশকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, একটি অনির্বাচিত সরকার মানবিক করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে কোনো রাজনৈতিক দলের মতামত নেই, মানুষের মতামত নেই। এর পেছনে কারা জড়িত, সেটা তাঁরা জানতে চান।
স্থিতিশীলতা ছাড়া বিনিয়োগ সম্ভব নয় উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, যত দিন নির্বাচিত সরকার না আসবে তত দিনে বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ আসবে না। বিনিয়োগ সম্মেলনে বিনিয়োগকারীদের শেষ প্রশ্ন ছিল, দেশের নির্বাচন কবে হবে? কারও চেহারা দেখে দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগকারী দেশে বিনিয়োগ করবেন না।
বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ আছে উল্লেখ করে আমীর খসরু আরও বলেন, একটি ছোট গোষ্ঠী তাদের স্বার্থে প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে, এটাই শেষ কথা।
এখন পর্যন্ত কী সংস্কার হয়েছে প্রশ্ন তুলে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পুলিশ এখনো আগের মতো ধান্দাবাজ রয়ে গেছে। সিভিল সার্ভিস এবং পুলিশে আগের লোক রয়ে গেছে। কাউকে বদলানো যায়নি। তিনি বলেন, সরকারের অবস্থা হলো, তাদের চাপ দিলেই দাবি মেনে নেয়। জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেওয়া হয়েছে; কিন্তু সরকার কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে? মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমেছে; কিন্তু এখন আবার সেটা বাড়ছে।
সরকারপ্রধানকে সবাই ভালো মানুষ বলছে উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রশ্ন হলো, সরকার কি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা করছে? দলগুলোর মধ্যে বিভাজন বেড়েছে। নতুন একটি দল হয়েছে এনসিপি, তারাও অন্যদের সমালোচনায় মুখর। তারা কি সরকারি নাকি আধা সরকারি নাকি অন্য কিছু, সেটা বোঝা যায় না।
পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এগুলো ঠিক হলেই প্রকৃত সংস্কার অর্জিত হবে। দক্ষ প্রশাসক হলে তিন মাসের মধ্যেই এই সংস্কার সম্ভব।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের কথা এই সরকার জানত না, এটা বিশ্বাস করা যায় না। জুলাই–আগস্টের আন্দোলনের শরিকেরা এখন প্রায় বিভক্ত। এখন সবাইকে আরেকবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যেতে হবে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমৃত্যু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংগ্রাম করে গেছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে দেখা গেছে, অনেকের মাঝে প্রতীকী জাফরুল্লাহ চৌধুরী লুক্কায়িত ছিলেন। তাঁদের সবার আকাঙ্ক্ষা ছিল, বাংলাদেশের প্রকৃত মালিকানা তার সাধারণ নাগরিকদের হবে। হাসিনারা প্রতিষ্ঠা পায় দেশের কাঠামো এবং দুর্বল ভিত্তির কারণে। সেই কাঠামো মেরামতকে সংস্কার বলা হচ্ছে। কিন্তু অনেকের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, যারা নির্বাচন চায়, তারা সংস্কার চায় না। আবার যারা সংস্কার চায়, অন্যরা মনে করে, তারা সম্ভবত নির্বাচন চায় না। এই মুহূর্তে একক কোনো ব্যক্তি নেই, যিনি সব সমস্যার সমাধানের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন।
দেশপ্রেমের পরীক্ষায় শতভাগ নম্বর পেতে হয় উল্লেখ করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী সেই শতভাগ নম্বর প্রাপ্ত নায়ক। প্রতিটি জনপদে যাঁদের জন্ম বিরল। দেশের শিক্ষা কারিকুলামে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জীবনী সংযুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সাইফুল হক আরও বলেন, সরকার গঠনের নয় মাস পরও তারা কোন পথে হাঁটছে, সেটা কেউ বলতে পারছে না। পুরোনো ফ্যাসিবাদী পথে কেউ হাঁটতে চায় না। সবাই পরিবর্তন চেয়েছে। তিনি মনে করেন, সরকার দ্রুত সময়ে সবার সম্মতিক্রমে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করতে পারে। যেটা দেশের ‘ম্যাগনাকার্টা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
সরকার প্রতিদিন নতুন নতুন প্রসঙ্গ উত্থাপন করছে উল্লেখ করে সাইফুল হক বলেন, এখনো কেন নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে মানুষের মনে সংশয় কাজ করছে? এর কারণ, সরকারের নীতিনির্ধারণী স্তরের ব্যক্তিদের অতিকথন। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাঁরা এখন বিরোধী শিবিরে পরিণত করেছে।
যাঁরা জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করতে চান তাঁদের হুঁশিয়ার করে ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, দেশকে নিয়ে যাঁরা ছিনিমিনি খেলতে চান, তাঁদের সাবধান হতে হবে। জামায়াতে ইসলামী চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের অংশ ছিল, তাই তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু একাত্তরের ইস্যুতে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, তাঁরা নতুন বন্দোবস্ত ও সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু বিভাজনের রাজনীতি দিয়ে সেই আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে যাচ্ছে। সংস্কার ও নির্বাচনের একটি নিবিড় পথনকশা খুঁজে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত বলেন, আজকের বাংলাদেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল। তাঁকে কোথাও পরিচিত করাতে হতো না। তিনি সবার বন্ধু ছিলেন। তবে কেউ কেউ তাঁকে সম্মান ও মর্যাদা দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে অনেক নির্যাতন ও কষ্ট দিয়েছিলেন। অথচ তাঁর পরিবারের সঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তিনি এই দেশের ‘চে গুয়েভারা’ ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী ও নারী নেত্রী শিরীন হক। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষে বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যানসার হাসপাতালের প্রকল্প সমন্বয়কারী ও ক্যানসার প্রতিরোধ বিভাগের প্রধান মো.
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। স্মরণসভার সভাপতিত্ব করেন ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ফর ল ল হ চ ধ র র জনশক ত র জন ত র র জন সরক র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
সৌদি বিশ্বকাপ ২০৩৪ : বাংলাদেশি জনশক্তির বড় সুযোগ
ফিফার প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন– ২০৩৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপ হবে সৌদি আরবে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে লাখো সৌদি নাগরিকের উল্লাস শুধু ফুটবলপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ নয়; বরং দেশটির অর্থনৈতিক রূপান্তরের সম্ভাবনার উদযাপন। কয়েক বছর ধরেই সৌদি আরব অর্থনীতিকে তেলনির্ভরতা থেকে বহুমুখী করার চেষ্টা চালাচ্ছে। পর্যটন ও ক্রীড়া খাতের বিকাশে বিপুল বিনিয়োগ করছে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে সৌদিতে নিয়ে আসা, এমনকি লিওনেল মেসিকে নেওয়ার প্রচেষ্টা– এ সবই তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। হজ ব্যবস্থাপনার মতো জটিল বিষয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার প্রমাণ করে– সৌদি আরব আধুনিক রাষ্ট্র গড়ার পথে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’ সৌদির অর্থনৈতিক রূপান্তরের মূল চালিকাশক্তি। এই মহাপরিকল্পনার অধীনে নিওম, কায়েদিয়া, দিরিয়াহ, রোশন, কিং সালমান পার্কের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের লক্ষ্য অত্যাধুনিক শহর, বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র, বিনোদন হাব এবং পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ, যা সৌদি অর্থনীতিকে নতুন খাতে প্রসারিত করবে। একসময় তেলের ওপর ভিত্তি করে অর্থনীতির চাকা ঘুরলেও এখন তারা অন্যান্য প্রকল্পের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন সৌদি আরবে বিপুল দক্ষ জনবলের চাহিদা তৈরি করবে। বর্তমানে ৩০ লক্ষাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদিতে কর্মরত। কিন্তু দেশটির কঠোর শ্রমনীতি ও প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে তাদের আয়ের সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। আগে নির্মাণ খাতে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন থাকলেও প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেই সুযোগ কমে আসছে। কাতার বিশ্বকাপে স্টেডিয়াম নির্মাণে বাংলাদেশের কর্মীদের বড় অংশগ্রহণ থাকলেও দক্ষতার অভাবে তারা উচ্চ পর্যায়ের পদে কাজ করার সুযোগ পাননি।
দুঃখজনক, বাংলাদেশি জনশক্তির বেশির ভাগই অদক্ষ হওয়ায় তারা প্রবাসে ভালো বেতনে কাজ করতে পারেন না। বিশেষত ইংরেজি ও আরবিতে দক্ষতার অভাবে কাজে দক্ষ হয়েও ভালো পদে যেতে পারেন না। অনেক সময় দালালদের মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে কম বেতনের বা অস্তিত্বহীন চাকরির ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসার ঘটনাও ঘটে। শ্রম আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং ভাষাবিষয়ক বাধা তাদের সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে।
২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন সামনে রেখে বৈশ্বিক বড় বড় ব্র্যান্ড সৌদিতে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত করবে। ফলে ব্যবস্থাপনা, হিসাবরক্ষণ, আইটি, স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘হোয়াইট কলার’ বা উচ্চমানের চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। পর্যটন খাতে ট্যুর গাইড, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, রিসেপশনিস্টসহ বিভিন্ন পদে বিপুসংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হবে। পরিবহন খাতেও দক্ষ ড্রাইভারের চাহিদা বাড়বে। এখানেই বাংলাদেশের জন্য লুকিয়ে আছে বিশাল সম্ভাবনা। আমাদের বিপুলসংখ্যক মাদ্রাসা-শিক্ষিত তরুণ আরবি ভাষায় পারদর্শী। তাদের যদি সঠিক ইংরেজি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ট্যুর গাইড, অনুবাদক বা রিসেপশনিস্ট হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তা হবে অভাবনীয় পরিবর্তন। একইভাবে ইলেকট্রিক্যাল, প্লাম্বিং, এইচভিএসি টেকনিশিয়ান, ওয়েল্ডার, ফ্যাব্রিকেটর, মেশিন অপারেটর, ফুড সাপ্লাই বা নিরাপত্তা কর্মী– এসব খাতে লাখো তরুণকে আধুনিক কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা সম্ভব। এমনকি বুয়েটসহ দেশের নামকরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্র্যাজুয়েটদের জন্য সৌদির নির্মাণ খাত হতে পারে ইউরোপ বা আমেরিকার বিকল্প কর্মক্ষেত্র। এই মেগা প্রকল্পগুলোতে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, প্রজেক্ট ম্যানেজার, কারিগরি বিশেষজ্ঞের চাহিদা থাকবে।
আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ তরুণ শিক্ষাজীবন শেষ করেন। অথচ তাদের মধ্যে প্রায় ৯ লাখই চাকরির বাইরে থেকে যান। দেশের এই বিশাল বেকারত্বের সমাধান হতে পারে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশি তরুণদের যুক্ত করা। কিন্তু দুঃখজনক, দক্ষ জনবল রপ্তানির জন্য সরকারের এখনও সুসংগঠিত জাতীয় কৌশল নেই। ভারত, পাকিস্তান, এমনকি নেপালের মতো দেশও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ‘হোয়াইট কলার’ বা উচ্চমানের চাকরিতে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ফিফা বিশ্বকাপ ২০৩৪ সামনে রেখে দেশব্যাপী সমন্বিত ও কার্যকর দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা জরুরি। এ পরিকল্পনায় সৌদি আরবের বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
আরবি জানা তরুণদের ইংরেজিতে দক্ষ করে তোলার ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে, যাতে তারা আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে পারে এবং উচ্চ পদে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন করে।
ড্রাইভিং (ভারী ও হালকা উভয়), ইলেকট্রিক্যাল, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, পর্যটন, নির্মাণ নকশা, আইটি সাপোর্ট, স্বাস্থ্যসেবা সহকারী– এসব খাতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এসব প্রশিক্ষণ হাতে-কলমে এবং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে।
বুয়েটসহ আমাদের প্রকৌশল ও ব্যবস্থাপনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সৌদি আরবের বড় বড় প্রকল্পের সংযোগ স্থাপন করতে হবে। সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া বা ইন্টার্নশিপের সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে। সৌদি আরবে একটি স্থায়ী বাংলাদেশি কনসালট্যান্সি সেবা চালু করা যেতে পারে, যা দক্ষ ও শিক্ষিত তরুণদের সঠিক কর্মসংস্থানে সহায়তা করবে। এ ছাড়া বিদেশে যাওয়ার আগে শ্রমিকদের জন্য সৌদি আরবের শ্রম আইন, সংস্কৃতি ও কর্মপরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত কর্মসূচির আয়োজন করা উচিত।
২০৩৪ সালের বিশ্বকাপের মতো একটি আন্তর্জাতিক আয়োজন সামনে রেখে আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা: হয় আমরা এই বিশাল সুযোগ হাতছাড়া করব, নয়তো দূরদর্শী পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের তরুণদের জন্য সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করব।
সময় এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার। সময় এখন কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোর। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপই পারে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে নতুন মাত্রা যোগ করতে।
আকরাম হুসাইন: সাবেক ডাকসু নেতা
hossaincf@gmail.com