দেয়ালে গাঢ় হলুদ রঙের আভা। তার ওপর ছড়ানো লাল ও আকাশি রং। এর মধ্যে তিনটি মুখাবয়ব। মাঝখানে বুকের ওপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন হৃদয় চন্দ্র তরুয়া। তাঁর পরনে সমাবর্তনের গাউন। হৃদয়ের বাঁ পাশে ফরহাদ হোসেন। ডান পাশে ফাহিম আহমেদ। তাঁদের পরনেও গাউন। হাতে সনদ। মাথায় টুপি।

এই তিনজন ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী। গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় শহীদ হন হৃদয় ও ফরহাদ। আর ফেনীতে ভয়াবহ বন্যার সময় ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিলেন ফাহিম আহমেদ। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি। এ তিন শিক্ষার্থীকে নিয়ে গ্রাফিতি তৈরি হয়েছে ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় গুদামঘরের দেয়ালে।

মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন উপলক্ষে এটি আঁকা হয়। সমাবর্তন উপলক্ষে আসা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই দেয়ালের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। ছবি তুলেছেন। শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছেন তিন শিক্ষার্থীকে। শুধু এই দেয়াল নয়, সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসের দেয়ালে দেয়ালে রংতুলির আঁচড় পড়েছে। চিত্রিত হয়েছে জুলাইয়ে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের সেই কথা—‘পানি লাগবে, পানি?’। আবার কোথাও আঁকা হয়েছে শহীদ আবু সাঈদের সেই ছবি, বুক টানটান করে প্রসারিত দুই হাত। গ্রাফিতির বাইরে ব্যানার-ফেস্টুনেও জায়গা পেয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নানা স্মৃতি।

প্রায় এক দশক পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরে ১৯৭৫ সালে তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদেই কর্মরত ছিলেন। আজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে সম্মানসূচক ডি লিট উপাধি প্রদান করবে।

২২ হাজার গ্র্যাজুয়েট ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর মাত্র চারটি বিভাগে ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। শুরুতে শিক্ষক ছিলেন মাত্র সাতজন।

প্রতিষ্ঠার প্রায় ছয় দশকে ক্যাম্পাস কলেবরে বেড়েছে। প্রায় দুই হাজার একরের এই ক্যাম্পাসে বর্তমানে ১০টি অনুষদ, ৪৮ বিভাগ, ৬ ইনস্টিটিউট ও ৫টি গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে। এসবে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৫১৫। বিপরীতে শিক্ষক ৯৯৬ জন। এবারের সমাবর্তনে অংশ নিতে ২২ হাজার ৫৮৬ জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন।

পুরো ক্যাম্পাসেই জুলাই অভ্যুত্থানকে চিত্রিত করা হয়েছে। শহীদদের বাবা-মায়েরাও থাকবেন ক্যাম্পাসে। অধ্যাপক মো.

কামাল উদ্দিন, সহ-উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান হবে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। এখানে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। সমাবর্তন উপলক্ষে সব প্রস্তুতি শেষ বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের কারণে এত গ্র্যাজুয়েটের হাতে সনদ তুলে দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। পুরো ক্যাম্পাসেই জুলাই অভ্যুত্থানকে চিত্রিত করা হয়েছে। শহীদদের বাবা-মায়েরাও থাকবেন ক্যাম্পাসে।’

বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পর মাত্র চারবার সমাবর্তনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পেরেছে কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ সমাবর্তন হয়েছিল ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি। এতে অংশ নিয়েছিলেন ৭ হাজার ১৯৪ জন শিক্ষার্থী। ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পাস করা শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তৃতীয় সমাবর্তন হয় ২০০৮ সালে। দ্বিতীয় সমাবর্তন হয় ১৯৯৯ সালে। আর প্রথম সমাবর্তন হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পর ১৯৯৪ সালে।

আগেই উৎসব শুরু সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাস এখন উৎসবমুখর। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তিন দিন ধরেই ক্যাম্পাসে ছুটছেন। শাটলের সেই চিরচেনা দৃশ্য আবার ফুটিয়ে তুলছেন তাঁরা। ঝুপড়িগুলো জমিয়ে তুলছেন আড্ডা-গানে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা গাউন পরে ছবি তুলছিলেন। কেউ শূন্যে ছুড়ছিলেন টুপি।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে সাত বছর আগে পাস করে বের হয়েছেন সুপর্ণা তাসলিম। এখন সরকারি একটি সংস্থায় চাকরি করছেন। দীর্ঘ সময় পর তিনি গতকাল একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। সুপর্ণা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে এসে সেই পুরোনো দিনেই যেন ফিরে গেলাম।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৬ সালে ব্যাংক বন্ধের তালিকা প্রকাশ

২০২৬ সালে ছুটির তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  আগামী বছর ব্যাংকগুলোর জন্য ২৮ দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। 

রবিবার (১৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। 

নতুন তালিকা অনুযায়ী, আগামী বছর প্রথম সরকারি ছুটির দিন হবে শবে-বরাত উপলক্ষ্যে। ৪ ফেব্রুয়ারি একদিন ব্যাংক বন্ধ থাকবে। ওই মাসে ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক বন্ধ থাকবে। এরপর শবে কদর উপলক্ষে ১৭ মার্চ ব্যাংক বন্ধ থাকবে। জুমাতুল বিদা ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১৯ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত পাঁচদিন ব্যাংক বন্ধ থাকবে। এরপর স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে ২৬ মার্চ ব্যাংক বন্ধ থাকবে।

চৈত্র সংক্রান্তি (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দারবান পার্বত্য জেলার জন্য প্রযোজ্য) ১৩ এপ্রিল ব্যাংক বন্ধ থাকবে। এরপর বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে ১৪ এপ্রিল, মে দিবস ও বৌদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষ্যে ১ মে, ২৬ থেকে ৩১ মে পাঁচদিন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ব্যাংক বন্ধ থাকবে। 

এদিকে, আশুরা উপলক্ষ্যে ২৬ জুন, ১ জুলাই ব্যাংক হলিডে উপলক্ষ্যে একদিন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ৫ আগস্ট, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে ২৬ আগস্ট, জন্মাষ্টমী ৪ সেপ্টেম্বর, দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ২০ ও ২১ অক্টোবর, বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ১৬ ডিসেম্বর, বড়দিন উপলক্ষ্যে ২৫ ডিসেম্বর ও ব্যাংক হলিডে উপলক্ষ্যে ৩১ ডিসেম্বর ব্যাংক বন্ধ থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চলতি বছরের ৯ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সব তফসিলি ব্যাংকের জন্য এ ছুটি কার্যকর হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকায় দেখা গেছে, চলতি বছর দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোর জন্য ছুটি ছিল ২৭ দিন, আগের বছর ব্যাংকগুলোর জন্য ছুটি ছিল ২৪ দিন।

ঢাকা/নাজমুল// 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ মাওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী
  • ২০২৬ সালে ব্যাংকের ছুটির তালিকা প্রকাশ, চাকরিজীবীরা ছুটি পাবেন ২৮ দিন
  • ২০২৬ সালে ব্যাংক বন্ধের তালিকা প্রকাশ
  • বগুড়া লেখক চক্রের কবি সম্মেলন ও পুরস্কার ঘোষণা
  • ৮৩ ইনিংস পর বাবরের সেঞ্চুরি, জয়ে সিরিজ নিশ্চিত পাকিস্তানের
  • ডায়াবেটিস দিবসে ধানমন্ডি সোসাইটির আয়োজনে আলোচনা সভা ও মেডিকেল ক্যাম্প
  • ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে বিনা মূল্যে সেবা মিলবে বারডেমসহ ৩ কেন্দ্রে
  • আমরা একটা ভীষণ জাতীয় সংকটের মধ্যে আছি: জোনায়েদ সাকি