অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বদলাতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরই একমাত্র ভরসা। চট্টগ্রাম বন্দরকে সত্যিকার বন্দরে পরিণত করার কাজ চলছে। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ইয়ার্ড-৫ পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার চিন্তার কারণ একটাই, বাংলাদেশের অর্থনীতি যদি পাল্টাতে হয়, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরই হলো ভরসা। এটাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি, নতুন কোনো পাতা, নতুন কোনো অধ্যায়ে প্রবেশ করার কোনো সুযোগ নেই। এই পথ খুলে দিলে বাংলাদেশের অর্থনীতির পথ খোলে। এই পথ না খুললে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য যতই লাফালাফি করো, ঝাঁপাঝাঁপি করো, কিছুই হবে না।’

চট্টগ্রাম বন্দরকে বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কেন আমি এটি নিয়ে ভাবি। একজনকে বলছিলাম, চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ড দুর্বল হলে ডাক্তার, বৈদ্য, সবকিছু আনো; মেরামত হবে, কিন্তু চলবে না। ছোট্ট একটি হৃৎপিণ্ড, তার মধ্যে হলো রোগাক্রান্ত, এই হৃৎপিণ্ডে যতই ঠেলাঠেলি করো, রক্ত সঞ্চালন হবে না। এটিই যদি একমত হই—বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড হলো চট্টগ্রাম বন্দর, তাহলে যে সাইজের হৃৎপিণ্ড আছে, ওই সাইজে চলে না। এই হৃৎপিণ্ড বিশ্ব সাইজের হৃৎপিণ্ড হতে হবে।’

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘কাজেই আমরা বললাম যে পৃথিবীর সেরা বন্দর ব্যবস্থাপক যারা আছে, তাদের ডাকো। দেখলাম যে আগেই ডাকা হয়েছে, কিন্তু কাজটা হচ্ছে না। বারবার সবার কাছে আবেদন করছি, এটা তাড়াতাড়ি করে দাও। যতই দিন যাবে, এই হৃৎপিণ্ডকে আর ওইভাবে স্থাপন করতে পারব না। এটা পরিবর্তন না করে বাংলাদেশে অর্থনীতি পরিবর্তন সম্ভব নয়।’

চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরদের দিয়ে পরিচালনার প্রক্রিয়া চলছে। আওয়ামী লীগ আমলে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর মধ্যে লালদিয়ার চর ও বে টার্মিনালে অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি খাতে পুরো বিনিয়োগ করতে হবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তবে নিউমুরিং টার্মিনালে পুরোদমে চালু থাকায় এই টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে স্থানীয় শ্রমিক ও অপারেটররা আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরুতে বিদেশি অপারেটরদের পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গটি টেনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি সাখাওয়াতকে (নৌপরিবহন উপদেষ্টা) বলেছি, আমি আর শুনতে চাই না, অমুক তারিখের মধ্যে সব দিয়ে দিতে হবে। যারা বন্দরের ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ, পৃথিবীর সেরা যারা, তাদের দিয়ে এই কাজ করাতে হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ যদি রাজি না হয়, জোরাজুরি নয়, রাজি করিয়েই করতে হবে। কারণ, এটা এমন এক বিষয়, পুরো জিনিস শুনলে রাজি না হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

এদিকে বেলা ১১টায় চট্টগ্রামের কালুরঘাটে বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী নদীর ওপর রেলসহ সড়কসেতু নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরের স্মারক ফলক উন্মোচন করেন তিনি। এ সময় রেলপথ–বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো.

জিয়াউদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।

বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে যোগদান করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পাশাপাশি তাঁর পৈতৃক বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামও পরিদর্শন করবেন তিনি।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কুলাউড়ায় চোর সন্দেহে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় চোর সন্দেহে আলমগীর মিয়া (২৫) নামের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক তরুণকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের ছকসালং গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আজ বুধবার ঘটনাটি জানাজানি হয়।

ভুক্তভোগী আলমগীর মিয়া কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের আলতা মিয়ার ছেলে। তাঁকে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা কনক কান্তি সিনহা বলেন, আলমগীরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন আছে। তাঁরা তাঁর চিকিৎসা দিচ্ছেন।

ভুক্তভোগী আলমগীরের চাচাতো ভাই আবু রায়হান বলেন, তাঁর চাচাতো ভাই আলমগীর মানসিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। তাঁর প্রতিবন্ধী কার্ডও আছে। তাঁকে চোর সন্দেহে মারধর করা হয়েছে। এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আবু রায়হান বলেন, ১২ মে আলমগীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে হারিয়ে যান। রাতে কুলাউড়ার টিলাগাঁও ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চোর সন্দেহে আটক করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য কয়ছর রশীদের উপস্থিতিতে কয়েকজন বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে তাঁকে মারধর করেন। পরে আহত অবস্থায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তাঁর বাড়ির পাশে রেখে যান। গতকাল ভোরে আহত অবস্থায় আলমগীর বাড়িতে আসেন। পরে তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, টিলাগাঁও ইউনিয়নে তাঁকে মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাঁরা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে টিলাগাঁও ইউপির সদস্য কয়ছর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় সম্প্রতি দুটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এলাকার লোকজন গ্রামে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। গতকাল একজন চোর ধরা পড়েছে শুনে তিনি ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু তিনি যাওয়ার আগে লোকজন চোর সন্দেহে ওই তরুণকে মারধর করেন। তিনি গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এখন তাঁকেই কেন দোষারোপ করা হচ্ছে, তিনি বুঝতে পারছেন না।

এ বিষয়ে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম আপছার প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। কেউ এ ধরনের অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ