ভোরে বা সন্ধ্যায় প্রকৃতিতে কান পাতলেই নানা ধরনের শব্দ কানে ভেসে আসে। মহাকাশেও এমন শব্দ শোনা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সনিফিকেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাকহোল) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নতুন তিনটি শব্দ প্রকাশ করেছে। নাসার তথ্যমতে, চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ও ইমেজিং এক্স-রে পোলারিমেট্রি এক্সপ্লোরারের ধারণ করা তথ্যকে সনিফিকেশন পদ্ধতির মাধ্যমে শব্দে রূপান্তরিত করে অডিও ক্লিপগুলো তৈরি করা হয়েছে।
কৃষ্ণগহ্বর আসলে স্থির বা বৈচিত্র্যহীন নয়। কৃষ্ণগহ্বরের আকার ও পরিবেশ পরিবর্তিত হয়। নাসার তথ্যমতে, প্রকাশ করা প্রথম শব্দটি কৃষ্ণগহ্বরের সম্ভাব্য জন্মের সময়কার অবস্থা প্রকাশ করেছে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের ইনফ্রারেড ছবিতে পৃথিবী থেকে প্রায় ২৮ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ডাব্লিউআর১২৪ নামের একটি স্বল্পস্থায়ী দৈত্যাকার তারার দর্শনীয় কাঠামোগুলো ধারণ করা হয়েছে। সেখানে কিছুটা বাঁশির মতো শব্দ হয়ে থাকে। একটু মনোযোগ দিলে ঘণ্টার মতো শব্দ শোনা যায়।
ডাব্লিউআর১২৪ তারার একটি উত্তপ্ত কেন্দ্র রয়েছে, যা ভবিষ্যতে একটি সুপারনোভাতে বিস্ফোরিত হতে পারে। তরঙ্গ কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শব্দে রূপান্তরিত করে। নাসার ভাষ্যে, প্রাথমিকভাবে তারাটি থেকে চিৎকারের মতো শব্দ ধারণ করা গেছে।
নাসার বিজ্ঞানীরা এসএস ৪৩৩ নামক একটি বাইনারি তারকার একটি যুগলবন্দী তথ্যও ধারণ করেছে। প্রায় ১৮ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই বাইনারি তারকা। এখন থেকে যে রেডিও তরঙ্গ ধারণ করা হয়েছে, তা পানির ফোঁটা পড়ার মতো শব্দ। এ ছাড়া পৃথিবী থেকে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ আলোকবর্ষ দূরে সেন্টোরাস নামের একটি দূরবর্তী ছায়াপথ রয়েছে। এই ছায়াপথের কেন্দ্রে একটি বিশাল কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে। কৃষ্ণগহ্বরটি থেকে শক্তিশালী জেট বা তরঙ্গছটা দেখা যাওয়ার পাশাপাশি বারান্দায় ঝোলানো উইন্ড চাইমের মতো শব্দ শোনা গেছে।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র একট
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় পুরস্কার পাওয়া রাব্বীর তৎপরতায় উদ্ধার হয়েছিল ৪৯টি পদ্মগোখরা
২০২০ সালের ১২ আগস্ট নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার এক গ্রামে ঘটেছিল অদ্ভুত এক ঘটনা। ওই দিন শাহাদত হোসেন নামের এক ব্যক্তি অবৈধভাবে ৪৯টি বিষধর পদ্মগোখরা সাপ আটকে রেখেছিলেন। অপ্রশিক্ষিত কারও কাছে এতগুলো সাপ থাকায় গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে প্রচণ্ড আতঙ্ক। বিষয়টি জানতে পারেন স্থানীয় পরিবেশকর্মী ফজলে রাব্বী। তিনি দ্রুত যোগাযোগ করেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সঙ্গে। বিভাগের কর্মকর্তারা গিয়ে সাপগুলো উদ্ধার করে সংরক্ষিত স্থানে ছেড়ে দেন। এতে আতঙ্কমুক্ত হয় গ্রামবাসী।
এই একটি ঘটনা নয়, ফজলে রাব্বীর কর্মকাণ্ডে প্রাণ পেয়েছে বহু বন্য প্রাণী। শিকারিদের কবল থেকে তিনি উদ্ধার করেছেন ৯ হাজারের বেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, ৫টি হনুমান, ৮২টি সাপ, ১টি শকুন, ৫টি বেজি, ১টি মেছো বিড়াল, ১৮টি বনবিড়াল, ১টি নেপালি ইগল, ৫টি দেশি ইগল, ২৮টি কাছিম ও ২টি ময়ূর। এ ছাড়া উদ্ধার করেছেন বন্য প্রাণী শিকারির ৩৫০টি ফাঁদ ও জাল।
পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরিতে ফজলে রাব্বী রোপণ করেছেন ৩০ হাজার গাছ, বিতরণ করেছেন ১ লাখ ৩০ হাজার লিফলেট ও মাইকিং করেছেন ১৮০ বার।
নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর হাজীপাড়ার বাসিন্দা ফজলে রাব্বীর বয়স ৩২ বছর। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি পরিবেশ ও বন্য প্রাণী রক্ষায় কাজ করে আসছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের (বিবিসিএফ) প্রচার সম্পাদক। পরিবেশ ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে ২০২৫ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
২৫ জুন ঢাকায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
ফজলে রাব্বী বলেন, ‘নলডাঙ্গা পুরোপুরি বন্য প্রাণীর জন্য নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত আমার কাজ চলবে।’ তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিবেশ সচেতন করতে গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সবুজ বাংলা’।
গ্রামের শিশুসহ নানা বয়সের নারী-পুরুষ এই সংগঠনের সদস্য। হালতি বিলসহ আশপাশের যেকোনো জায়গায় বন্য প্রাণী বিপদে পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে খবর পান ফজলে রাব্বী। ছুটে যান ঘটনাস্থলে।
নেপালী একটি অসুস্থ ঈগলকে নলডাঙ্গার হালতি বিল থেকে উদ্ধার করে ফজলে রাব্বী ও তাঁর সহকর্মীরা