জাতীয় চলচ্চিত্র সংসদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত
Published: 14th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো ‘জাতীয় চলচ্চিত্র সংসদ সম্মেলন-২০২৫’। গত শনিবার বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সেমিনারকক্ষে এ অনুষ্ঠান হয়। সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের (চলচ্চিত্র সংসদ বা ফিল্ম ক্লাব) সংগঠনগুলো এ সম্মেলনে অংশ নেয়।
সম্মেলনে সারা দেশের ৪০টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনলাইনে যুক্ত হয় আরও ৫টি সংগঠন। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের প্রেসিডেন্ট জন পাওলো অনলাইনে যুক্ত হন।
আলোচনায় ফেডারেশনের আহ্বায়ক ও প্রবীণ চলচ্চিত্র সংসদকর্মী অধ্যাপক আবদুস সেলিম বলেন, ‘চলচ্চিত্র সংসদগুলো দেশের চলচ্চিত্র রুচিকে উন্নত করতে এবং একটি সুস্থ চলচ্চিত্র সংস্কৃতি গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।’
ফেডারেশনের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল মারুফ ফেডারেশনকে গতিশীল ও চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন।
সম্মেলন থেকে সর্বসম্মতিক্রমে জহিরুল ইসলামকে সভাপতি, মোহাম্মদ নূরউল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের ১৫ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সভাপতির দায়িত্ব নেওয়া জহিরুল ইসলাম বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে প্রান্তিক কণ্ঠস্বর শোনা হয়েছে। শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে।
মোহাম্মদ নূরউল্লাহ বলেন, এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য দেশের চলচ্চিত্র সংসদগুলোকে একটি প্ল্যাটফর্মে একত্র করা এবং তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র স স
এছাড়াও পড়ুন:
বিনয়ী, প্রতিবাদী সাম্যের হত্যা মানতে পারছে না কেউ
দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) ছিলেন সদা বিনয়ী। সিরাজগঞ্জের বেলকুচির সড়াতৈল মধ্যপাড়া গ্রামের সন্তান সাম্যর পরিবারেরই এলাকায় ঝামেলায় জড়ানোর রেকর্ড নেই। এমন ভদ্র ছেলে হত্যার শিকার হতে পারেন– তা মানতেই পারছেন না গ্রামবাসী।
বন্ধু-পরিচিতজনের কথা– নম্র হলেও যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে সাম্য থাকতেন এগিয়ে। তাঁর এই গুণের কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও।
গতকাল বুধবার এক ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ লেখেন, ‘২০১৯ সালের দিকে ক্যাম্পাসে গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কিংবা শিক্ষার্থীদের যে কোনো যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে যেসব মুখ সবসময় দেখা যেত, সাম্য তাদের একজন। মশিউর আমিন শুভ আর Shahriar Alam Shämmo– এই দু’জন সবসময় একসাথে আসতো। প্রথম বর্ষ থেকেই সাম্য ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং অসম্ভব ভদ্র একজন ছেলে। সেই ছোট ভাই সাম্য আজ আর আমাদের মাঝে নেই– এটা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর।’
ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সাম্য ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক। গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেলে হলে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত হন সাম্য। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সাম্যের বড় ভাই শহিদুল আলম সৈকতের মামলায় গতকাল তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে গণমাধ্যমে সাম্যর মৃত্যুর খবর জেনে সকাল থেকেই তাঁর বেলকুচি উপজেলার সড়াতৈল গ্রামের বাড়িতে ভিড় করেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। বুধবার দুপুরে সরেজমিন সাম্যর গ্রামের বাড়িতে দেখা যায়, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর ভিড়। তাদের সবারই আফসোস– এমন একটি ছেলে অকালে ঝরে গেল!
সাম্যর ছোট চাচা কায়সারুল আলম কায়েস জানান, তাঁর বড় ভাই ফারহাদ হোসেনের চার ছেলের মধ্যে সবার ছোট ছিল সাম্য। ভাতিজারা গ্রামে বড় হলেও এখন সবাই থাকে ঢাকায়। ভাই ফরহাদ বিদেশ থেকে ফিরে ব্যবসা সূত্রে ঢাকায় থাকেন। ২০১৫ সালে সাম্যর মা মারা যান।
তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের প্রায় সবাই উচ্চশিক্ষিত। আমাদের বংশে উচ্ছৃঙ্খল কোনো সদস্য নেই। আমরা কখনও এলাকায় মারামারি দূরে থাক, কোনো ঝামেলাতেই জড়াইনি। তার পরও সাম্যর মতো নম্র-ভদ্র একটা ছেলে যে হত্যার শিকার হতে পারে, তা মানাই যায় না। আমরা এ হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই।
ওই গ্রামের মামুন বিশ্বাস বলেন, সাম্যদের পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত, ঢাকায় থাকেন। ঈদ ও বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে তারা গ্রামে আসেন। সাম্যকে মেধাবী হিসেবে দেখেছি। এলাকার কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলার খবর কখনও শুনিনি। এমন মেধাবী একটা ছেলে এভাবে ঝরে যাবে, আমরা কখনও ভাবিনি।
সাম্য হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল বুধবার সিরাজগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা ছাত্রদল সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েস প্রমুখ।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রথম জানাজা শেষে সন্ধ্যায় সাম্যর মরদেহ সড়াতৈল গ্রামে নেওয়া হয়। এ সময় স্বজনের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সাম্যর বড় ভাই আমিনুল ইসলাম সাগর এ সময় বলেন, আমরা তো কারও কখনও ক্ষতি করিনি। এমনকি আমার ভাই তো কারও সঙ্গে কখনও ঝামেলায় জড়ায়নি। তাহলে কেন এভাবে তাকে অকালে প্রাণ হারাতে হলো।