নায়ক ফারুকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ
Published: 15th, May 2025 GMT
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৫ মে)। ২০২৩ সালের এই দিনে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বাংলা সিনেমার এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের অন্তর্ধান ঘটেছিল সেই দিনে।
চলচ্চিত্রের পর্দায় তিনি ছিলেন এক নিখুঁত অভিনয়শিল্পী—গ্রামীণ, সামাজিক কিংবা রোমান্টিক গল্প—সব ধরনের চরিত্রে তার সাবলীল উপস্থিতি দর্শকমনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছে। তার অভাব চলচ্চিত্রাঙ্গনে এখনো গভীরভাবে অনুভূত হয়।
১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকার পুরান শহরে জন্ম ফারুকের। পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান। বাবা আজগার হোসেন পাঠানের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ফারুক বেড়ে ওঠেন পুরান ঢাকার আবহে। তার অভিনয়ে আগ্রহ তৈরি হয় কাছের মানুষদের উৎসাহে। অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান, পরিচালক এইচ আকবর ও এক বন্ধুর সহযোগিতায় ‘ফারুক’ নামে তিনি চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন।
আরো পড়ুন:
যোদ্ধা বাবার কন্যা হিসেবে গর্বিত আনুশকা
দেশ ভালো নেই, কনসার্ট বাতিল করলেন শ্রেয়া
১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ ছবির মাধ্যমে রুপালি পর্দায় তার অভিষেক। এরপর ‘আবার তোরা মানুষ হ’ (১৯৭৩) এবং ‘আলোর মিছিল’ (১৯৭৪) চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান। কিন্তু দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নেন ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ সিনেমার মাধ্যমে। ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সে বছর তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন।
এরপর একে একে মুক্তি পায় ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘মাটির মায়া’, ‘নয়নমণি’সহ বহু ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। ‘মিয়া ভাই’ (১৯৮৭) সিনেমার পর এই নামে তিনি হয়ে ওঠেন চলচ্চিত্র জগতের সবার প্রিয় মানুষ।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার তালিকায় রয়েছে ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমণি’, ‘সারেং বৌ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘দিন যায় কথা থাকে’ প্রভৃতি। তার ক্যারিয়ারে শতাধিক সিনেমা ব্যবসাসফল হয়েছে, যা প্রমাণ করে তিনি ছিলেন দর্শকনন্দিত এক প্রজন্মের প্রতীক।
শুধু অভিনয়েই নয়, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী হিসেবেও তার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। ২০১৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন এই মহান শিল্পী।
নায়ক ফারুকের স্মৃতি আজও গেঁথে আছে কোটি দর্শকের হৃদয়ে। তার কর্ম, দেশপ্রেম ও শিল্পভিত্তিক সংগ্রাম নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবে বহুদিন।
ঢাকা/রাহাত/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
৬ দফার প্রথম ও চতুর্থ দাবি না মানায় বাকৃবিতে রেললাইন অবরোধ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির দুটি দফা না মানায় রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে। ‘কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড়সংলগ্ন রেললাইন অবরোধ করেন। প্রায় ২ ঘণ্টা পর রাত ৯টার দিকে আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘কৃষিবিদদের অধিকার রক্ষায়’ ছয় দফা দাবি নিয়ে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। সেই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় ঢাকায় কৃষিসচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ‘কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদে’র বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন প্রতিনিধি। এ সময় ছয় দফার প্রথম ও চতুর্থ দফা দাবি না মানার খবরে তাৎক্ষণিক মিছিল শুরু করেন বাকৃবির শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে প্রতিবাদ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন, ছাত্রীহল সংলগ্ন সড়ক, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার হয়ে আবার প্রশাসন ভবনের সামনে ফিরে আসে। এরপর মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা সন্ধ্যা সাতটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড়সংলগ্ন রেললাইন অবরোধ করে অবস্থান নেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, কৃষিবিদদের অধিকার রক্ষা ও পেশাগত বৈষম্য নিরসনে ৬ দফা দাবির যৌক্তিকতা কৃষিসচিবের কাছে তুলে ধরা হয়। আলোচনা চলাকালীন কৃষিসচিব কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদের প্রথম ও চতুর্থ দাবি নিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা বলতে থাকেন। দাবি নিয়ে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত না দিয়ে তিনি আন্দোলনকারীদের ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছেন। বাকি চারটি দাবির সঙ্গে সচিব একমত পোষণ করলেও প্রথম ও চতুর্থ দাবি মানতে তিনি রাজি হননি। এ অবস্থায় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সানাউল্লাহ বলেন, তাঁদের ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথম দফা হচ্ছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) এবং অন্যান্য গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে ১০ম গ্রেড (উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা/উপসহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা/সমমান) কৃষিবিদদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। চতুর্থ দফায় রয়েছে—কৃষিবিষয়ক ডিপ্লোমাধারীদের জন্য কোনো নতুন বিশেষায়িত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যাবে না। সব কটি দাবিই যৌক্তিক। দাবি না মানা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফার অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিএই ও অন্যান্য কৃষিসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নবম গ্রেডসহ অন্যান্য গ্রেডে নিয়মিত পদোন্নতি ও পদবৃদ্ধি করতে হবে; নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়া ৯ম গ্রেডে (বিএডিসির কোটা বাতিল) পদোন্নতির কোনো সুযোগ রাখা যাবে না; কৃষিসংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের ছাড়া অন্য কেউ নামের আগে ‘কৃষিবিদ’ উপাধি ব্যবহার করতে পারবে না এবং এ বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে; কৃষিবিষয়ক ডিপ্লোমা বা কারিগরি শিক্ষাকে কৃষিবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের (ডিএই) অধীনেই রাখতে হবে।
আন্দোলনকারী কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী ফাহাদ হাসান বলেন, আজকের এই কর্মসূচি পূর্বঘোষিত নয়, বরং সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দাবির অগ্রগতি না থাকায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তাঁরা রাজপথে নামেন। দাবি পূরণে গড়িমসি চলতে থাকলে সারা দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একত্রিত করে বৃহত্তর ‘কৃষিবিদ ব্লকেড’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে।
পরে রাত ৯টার দিকে আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। এরপর রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবেন।