রাশিয়ায় জন্ম নেওয়া হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী কসেনিয়া পেত্রোভা’র বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে জীবজ সামগ্রী চোরাচালানের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা এই মামলায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তার আটকাদেশ ঘিরে আইনি ও নাগরিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কৌঁসুলিরা অভিযোগ করেছেন, ৩০ বছর বয়সী পেত্রোভা ১৬ ফেব্রুয়ারি প্যারিস থেকে বোস্টনের লোগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় লাগেজে সংরক্ষিত ব্যাঙের ভ্রূণ ঘোষণা না দিয়ে শুল্ক আইন লঙ্ঘন করেছেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে পণ্য চোরাচালানের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই সপ্তাহে সিলমোহরযুক্তভাবে দাখিল এবং বুধবার প্রকাশিত একটি অপরাধমূলক অভিযোগপত্র অনুযায়ী, কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের (সিবিপি) একটি কুকুর পেত্রোভার ডাফেল ব্যাগে তল্লাশির জন্য সংকেত দেয়। পরে ব্যাগে ব্যাঙের ভ্রূণ, প্যারাফিন স্লাইড ও অন্যান্য নমুনা পাওয়া যায়।

প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদে পেত্রোভা ‘কোনো জীবজ সামগ্রী বহনের কথা অস্বীকার করেন’ বলে হলফনামায় উল্লেখ আছে। তবে তার ফোনে থাকা একটি বার্তা দেখানো হলে, যেখানে লেখা ছিল ‘বোস্টনের কাস্টমসে টিএসএ আমার ব্যাগ ঘাঁটাঘাঁটি করেছে, তাই নিশ্চিত হও যে অনুমতিপত্রটা নিও, আমি লিওনের গ্রুপ চ্যাটে ব্যাঙের ভ্রূণ নিয়ে একটা লিংক পাঠিয়েছিলাম’। তখন নমুনাগুলো থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি। জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, ‘নিশ্চিত ছিলেন না’ যে এসব ঘোষণা করা প্রয়োজন। 

তবে পেত্রোভা ঘটনাটি ভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি লুইজিয়ানার ডিটেনশন সেন্টার থেকে এনবিসি নিউজকে বলেন, তারা জিজ্ঞেস করেছিল আমার লাগেজে কোনো জীবজ নমুনা আছে কিনা। আমি বলেছিলাম, হ্যাঁ আছে। শুল্ক প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি এবং কাস্টমস কর্মকর্তাদের দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে পড়ার কথা জানান তিনি। ‘কেউ জানত না আমার সঙ্গে কী হচ্ছে। আমি কোনোভাবেই কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি, না আমার আইনজীবীর সঙ্গে, না লিওনের সঙ্গে, না কারও সঙ্গে।’ বলেন তিনি। লিওন পেশকিন হচ্ছেন হার্ভার্ডের সিস্টেমস বায়োলজি বিভাগের প্রধান গবেষণা বিজ্ঞানী এবং পেত্রোভার গবেষণা পরিচালক। তিনি বলেন, ‘পরের দিন তারা কিছুই বলেনি আমার কী হবে। আমি শুধু সেলে বসে অপেক্ষা করছিলাম।’

আদালত দলিলে বলা হয়েছে, পেত্রোভা কাস্টমস কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন, তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন এবং সেখানে ফেরার ব্যাপারে ভীত। তিনি ফ্রান্সে যেতে চেয়েছিলেন, যেখানে তার বৈধ শেঞ্জেন ভিসা ছিল। কিন্তু তাকে সেখান না পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট হেফাজতে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি লুইজিয়ানার মনরোর রিচউড সংশোধনাগারে আটক রয়েছেন।

মঙ্গলবার ভারমন্টের ফেডারেল আদালতে একটি হ্যাবিয়াস শুনানিতে মার্কিন জেলা জজ ক্রিস্টিনা রেইস সরকারের পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘একজন কাস্টমস কর্মকর্তা কীভাবে নিজ সিদ্ধান্তে ভিসা বাতিল করতে পারেন? এখানে তো কোনো কাস্টমস লঙ্ঘনের বিষয় দেখছি না।’

পেত্রোভার আইনজীবী গ্রেগরি রোমানোভস্কি যুক্তি দেন, সরকার তার ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কাজ করেছে। ‘এখানে কোনো অনুপ্রবেশ অযোগ্যতার ভিত্তি নেই। শুধু কাস্টমস লঙ্ঘনের কারণে কাউকে অনুপ্রবেশ অযোগ্য ঘোষণা করা যায় না’ তিনি বলেন। রোমানোভস্কি আরও বলেন, তিনি প্যারিস যেতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু সরকার তাকে যেতে দেয়নি। জজ রেইস ২৮ মে প্রাথমিক জামিন শুনানির সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছেন। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ক স টমস কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

টিউলিপের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব আছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছেন। যদিও টিউলিপ বলে আসছেন, তাঁর বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই। যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ এখন বাংলাদেশে বিচারের মুখোমুখি।

বিধিবহির্ভূতভাবে সরকারি প্লট নেওয়ার অভিযোগে চলতি সপ্তাহে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে করা মামলার শুনানির ফাঁকে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এই এমপি একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছেন এবং ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন।

সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘তাঁর (টিউলিপ সিদ্দিকের) ঠিকানা, একাধিক পাসপোর্ট এবং ভোটার তালিকায় তাঁর নাম—সব পাওয়া গেছে। আমরা যথাসময়ে এগুলো দাখিল করব।’

এ ধরনের নথিপত্র থাকে বাংলাদেশের এমন কয়েকটি দপ্তর বা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। তাদের কাছে এসব কাগজপত্রের অনুলিপি আছে বলে তারা নিশ্চিত করেছে।

টিউলিপ এই বিচারকে ‘হয়রানি ও প্রহসন’ আখ্যায়িত করছেন। টিউলিপ অনেক আগে থেকে দাবি করে আসছেন, তিনি বাংলাদেশি নাগরিক নন। ২০১৭ সালে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আপনি কি আমাকে বাংলাদেশি বলছেন? আমি ব্রিটিশ...আমি বাংলাদেশি নই।’

টিউলিপ সিদ্দিকের আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্টিফেনসন হারউডের একজন মুখপাত্র এসব নথির অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন এবং সেগুলোকে জাল বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘টিউলিপের কখনো বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি ছিল না এবং তিনি শিশু বয়স থেকে কোনো পাসপোর্ট নেননি।’

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, টিউলিপের নাগরিকত্বের প্রশ্নটি বাংলাদেশের আইনে তাঁর বিচার হতে পারে কি না, সেটাকে প্রভাবিত করে না। তবে আদালতে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর কয়েক দিন আগে তাঁর সততা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়াটা অস্বস্তিকর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

টিউলিপ সিদ্দিকের খালা শেখ হাসিনা গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন।

খালা, মা ও দুই ভাই-বোনসহ টিউলিপের বিরুদ্ধে ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বেআইনিভাবে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ আনে দুর্নীতি দমন কমিশন। সংস্থাটির আইনজীবীরা দাবি করেন, প্লট পাওয়ার যোগ্যতার নিয়ম এড়াতে রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক।

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে কর্তৃত্ববাদ, নির্বাচনে কারসাজি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী বিক্ষোভের মুখে আকস্মিক তাঁর সরকারের পতন হয়। তিনি ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। শেখ হাসিনার বিদায়ের ফলে তাঁর সরকার ও পরিবারের দুর্নীতির ব্যাপকতর তদন্তের সুযোগ আসে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে।

ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের অনুপস্থিতিতে তাঁর বিচারকাজ চলছে। টিউলিপ বলেছেন, মামলার বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে গত সোমবার তিনি লিখেন, ‘কোনো যোগাযোগ নেই। কোনো প্রমাণও দেওয়া হয়নি। এমনকি আমার আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আইনসিদ্ধভাবে এ বিষয়ে জানতে চাইলেও কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি। এটি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নয়। এটা হয়রানি ও প্রহসন।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের কৌঁসুলি সুলতান মাহমুদ বলেন, টিউলিপের পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকায় থাকা ঠিকানায় একটি সমন পাঠানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘ভোটার আইডি কার্ডে থাকা ঠিকানাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছিল। তাঁর একটি জাতীয় পরিচয়পত্র ও একটি পাসপোর্ট আছে। আমাদের দুদক টিমগুলো, একাধিক টিম তদন্তের জন্য সেসব ঠিকানায় গিয়েছিল এবং যথাসময়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’

দুদকের ঠিকানায় গত জুনে টিউলিপের আইনজীবীদের পাঠানো একটি চিঠি ফিন্যান্সিয়াল টাইমস দেখতে পেয়েছে। এতে দুদককে তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা চালানোর এবং তাঁর আইনি পরামর্শক দলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে অস্বীকৃতি জানানোর অভিযোগ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করেছে, টিউলিপ সিদ্দিকের একটি জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে, যদিও এটি সরাসরি নাগরিকত্ব নির্দেশ করে না।

টিউলিপ সিদ্দিক গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন সিটি মিনিস্টারের (ইকোনমিক সেক্রেটারি) পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এ পদে দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি রোধের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

খালা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পদ থেকে তিনি সুবিধা নিয়েছেন, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এ প্রথমবারের মতো এমন প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাজনৈতিক চাপের মুখে টিউলিপ পদত্যাগ করেন।

টিউলিপ কোনো ধরনের অনিয়ম করার কথা অস্বীকার করে আসছেন। শেখ হাসিনার ভাগনি বলছেন, অধ্যাপক ইউনূস সরকার ‘বিরোধীদের দমন’ করছে, তার শিকার তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আদালত প্রাঙ্গণে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদক বহনে নিষেধাজ্ঞা
  • দুদকের নতুন আইনজীবী শাহদীন মালিক
  • সাদাপাথর লুটে জড়িতদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ হাইকোর্টের
  • রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানোর বিধান প্রশ্নে রুল শুনানিতে ৭ অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ
  • খুলনা আইনজীবী সমিতির ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে: অডিট
  • প্রাণনাশের আশঙ্কায় রাহুল গান্ধী, আদালতে অভিযোগ
  • বিচার কার্যক্রম বিলম্ব করতে চাইলে ‘টুঁটি চেপে’ ধরবেন ট্রাইব্যুনাল
  • সাবেক ফার্স্টলেডি এখন মেঝেতে ঘুমান
  • টিউলিপের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে
  • কাঠগড়ায় কাঁদলেন এনবিআরের সেই মতিউর, আদালত বললেন, ‘দুদকের জালে এখন হাজার মতিউর’