দোলনার দোলে যে গ্রামের নারীদের রঙিন স্বপ্ন
Published: 15th, May 2025 GMT
বালু নদীর কোলঘেঁষা সবুজে মোড়ানো এক শান্ত গ্রাম, নাম তার বিরতুল। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের এই নিভৃত গ্রামে ঢুকলেই কানে আসে কাঠ, রড আর রঙিন সুতা ছুঁয়ে চলা নারীদের হাতের শব্দ। শব্দটা যেন শুধু দোলনা তৈরির না, বরং স্বপ্ন বুননের। স্বাধীনতার এবং নিজেদের ভাগ্য বদলের শব্দ।
এখানে নারী মানেই শুধু গৃহিণী নয়। তারা শিল্পী, তারা কারিগর, তারা উদ্যোক্তা। আর তাদের হাত ধরেই বিরতুল পরিচিতি পেয়েছে ‘দোলনার গ্রাম’ নামে। বিরতুল আজ আর শুধুই এক নিঃশব্দ গ্রামের নাম নয়। এটি এক জেগে ওঠা নারীর নাম। যেখানে প্রতিটি দোলনার দোলায় বুনে যায় স্বপ্ন, আত্মমর্যাদা, স্বাধীনতা আর সম্ভাবনার গল্প। দরকার শুধু একটু দৃষ্টি, সামান্য সহায়তা, তাহলেই এই শিল্প হতে পারে জাতীয় অর্থনীতির এক শক্ত ভিত।
এক সময় এই গ্রামের নারীরা ভোর থেকে রাত শুধু সংসারের কাজে ডুবে থাকতেন। পরিবার চালানোর সব দায়ভার ছিল স্বামীর কাঁধে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলেছে দৃশ্যপট। এখন এই নারীরাই সংসারের চালিকাশক্তি।
ধনুন গ্রামের মিনারা বেগম নামের পঞ্চাশোর্ধ এক নারী কারিগর বলেন, “আমি আগে কিছুই করতাম না। এখন মাসে ৮ থেকে ১০টি দোলনা বানাই। প্রতি দোলনায় ৩০০-৪০০ টাকা লাভ থাকে। আমার ছেলে স্কুলে পড়ে, তার খরচ আমি চালাই। এটা ভাবতেই একসময় সাহস হতো না।”
একই গ্রামের রেখা দেবনাথ, মতিজা বেগম, বাগদী গ্রামের রাহিমা বেগম, বিরতুল গ্রামের লিমা রাণী দাস, রেহেনা বেগম ও মনি আক্তার একই সুরে সুর মেলালেন।
দোলনা তৈরির কাজ এই গ্রামে নতুন কিছু নয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এই শিল্প। আগে পুরুষরাই করতেন। এখন নারীরাই এগিয়ে। বর্তমানে বিরতুল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ধনুন, বাগদী, বিন্দান ও সেনপাড়া গ্রামের নারীরাও এ শিল্পে যুক্ত হয়েছেন। প্রায় ৩০০ পরিবার ও সহস্রাধিক নারী এই পেশার মাধ্যমে নিজেদের জীবনের গতি বদলেছেন।
বিরতুল গ্রামের নারীদের তৈরি দোলনা শুধু গাজীপুর বা ঢাকায় নয়- চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী হয়ে বিদেশ পর্যন্তও এর চাহিদা। কেউ কেউ বিদেশে প্রবাসী আত্মীয়ের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন এসব দোলনা। যা প্রবাসী বাঙালিদের ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।
উদ্যোক্তা স্বপ্না বেগম বলেন, “আমরা এখন রঙ আর ডিজাইনে বৈচিত্র্য এনেছি। অনেকে অনলাইনে অর্ডার দেন। চাইলে বিদেশেও পাঠাতে পারি।”
উদ্যোক্তা শেখ ফরিদ বলেন, “সব কিছুতেই যেমন আলো থাকে, তেমনি থাকে কিছু অন্ধকার। দোলনার দাম কমেছে, কাঁচামালের দাম বেড়েছে। লোহার রড, চেইন, সুতা, সবকিছুর খরচ বেড়েছে। তবু লাভের হিসেব মিলাতে হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা, নেই সরকারি প্রশিক্ষণ বা সহজ শর্তে ঋণ।”
সাথী বেগম নামের বিরতুল গ্রামের অপর এক নারী উদ্যোক্তা বলেন, “আমরা নিজেরা শিখে নিয়েছি, কেউ শেখায়নি। যদি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি একটু আর্থিক সহায়তা পেতাম, তাহলে আরও বড় করে কাজটা করতে পারতাম।”
নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ফারজানা তাসলিম জানান, অনেক নারী উদ্যোক্তা ইউনিয়ন থেকে বিভিন্ন নান্দনিক নামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন। এখন তারা যদি এই দোলনার বাজার তৈরি করতে চান, তাহলে উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে সে ব্যবস্থা করা সম্ভব।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, “বিরতুলের নারীরা এক অনন্য দৃষ্টান্ত। উপজেলা প্রশাসন সবসময় তাদের পাশে আছে এবং থাকবে। এছাড়া তারা যদি ছোট ছোট ঋণ চান, তাহলে তারা সকলে একত্রিশ হয়ে এলে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর থেকে তাদের জন্য ব্যবস্থা করা যাবে। এর বাইরে যদি বড় ধরনের কোন ঋণ পেতে আগ্রহী হন, তাহলে স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সাথে কথা বলে সেটার ব্যবস্থা করা হবে। তারা যেন কোন ঝামেলা ছাড়াই এই ঋণ পান সেই চেষ্টা করা হবে।”
ঢাকা/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ক্ষমতাকেন্দ্রিক নয়, সংস্কারের পক্ষে জোট চায় এবি পার্টি
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, তাঁর দল মতাদর্শ কিংবা ক্ষমতাকেন্দ্রিক কোনো জোটের পক্ষে নয়, বরং বৈষম্যবিরোধী ও সংস্কারের পক্ষের সব গণতান্ত্রিক শক্তির জোট গঠনে আগ্রহী।
গত জুলাইয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রশ্নে সবাই এক হয়েছিল। তাহলে আজ সংস্কার নিয়ে এত দ্বিধা কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন মজিবুর রহমান মঞ্জু।
আজ মঙ্গলবার ৩৬ দিনব্যাপী এবি পার্টির জুলাই উদ্যাপন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান ছিল।
এবি পার্টির ৩৬ দিনব্যাপী জুলাই উদ্যাপন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জুলাই শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানা ও সন্তান আরিয়ানা কাজী নুজাইরাহ।
অনুষ্ঠানে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে না পারা অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের মনে রাখতে হবে, রাজনীতিতে দিল্লির মতো কোনো বিদেশি শক্তি যেন আর বাংলাদেশের মাথায় ছড়ি ঘোরাতে না পারে। জুলাই শহীদদের ভুলে গেলে আমাদের অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়বে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘আবারও বিভেদ–বিভাজনের রাজনীতি আমরা চাই না। কিন্তু কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে আবারও আমরা সে লক্ষণ দেখছি।’
শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানা রাখি বলেন, ‘হাজারো মানুষ তাদের স্বজন হারিয়েছে। এত মানুষ জীবন দিল, তার বিনিময়ে আমরা আর নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ এই বাংলায় দেখতে চাই না।’
চব্বিশের জুলাইয়ের কথা স্মরণ করে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘গত জুলাইয়ে একটি রাজনৈতিক দল বলেছিল, আমরা এই ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে নেই। সেই দলগুলোই এখন সংস্কারের বিষয়ে বলছে, তাদের বাদ দিয়ে কোনো সংস্কার হবে না। আমরা কিন্তু সেই দিনগুলোর কথা ভুলিনি।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল ওহাব মিনার, ভাইস চেয়ারম্যান দিদারুল আলম, বি এম নাজমুল হক, হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত প্রমুখ।