বালু নদীর কোলঘেঁষা সবুজে মোড়ানো এক শান্ত গ্রাম, নাম তার বিরতুল। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের এই নিভৃত গ্রামে ঢুকলেই কানে আসে কাঠ, রড আর রঙিন সুতা ছুঁয়ে চলা নারীদের হাতের শব্দ। শব্দটা যেন শুধু দোলনা তৈরির না, বরং স্বপ্ন বুননের। স্বাধীনতার এবং নিজেদের ভাগ্য বদলের শব্দ।

এখানে নারী মানেই শুধু গৃহিণী নয়। তারা শিল্পী, তারা কারিগর, তারা উদ্যোক্তা। আর তাদের হাত ধরেই বিরতুল পরিচিতি পেয়েছে ‘দোলনার গ্রাম’ নামে। বিরতুল আজ আর শুধুই এক নিঃশব্দ গ্রামের নাম নয়। এটি এক জেগে ওঠা নারীর নাম। যেখানে প্রতিটি দোলনার দোলায় বুনে যায় স্বপ্ন, আত্মমর্যাদা, স্বাধীনতা আর সম্ভাবনার গল্প। দরকার শুধু একটু দৃষ্টি, সামান্য সহায়তা, তাহলেই এই শিল্প হতে পারে জাতীয় অর্থনীতির এক শক্ত ভিত।

এক সময় এই গ্রামের নারীরা ভোর থেকে রাত শুধু সংসারের কাজে ডুবে থাকতেন। পরিবার চালানোর সব দায়ভার ছিল স্বামীর কাঁধে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলেছে দৃশ্যপট। এখন এই নারীরাই সংসারের চালিকাশক্তি।

ধনুন গ্রামের মিনারা বেগম নামের পঞ্চাশোর্ধ এক নারী কারিগর বলেন, “আমি আগে কিছুই করতাম না। এখন মাসে ৮ থেকে ১০টি দোলনা বানাই। প্রতি দোলনায় ৩০০-৪০০ টাকা লাভ থাকে। আমার ছেলে স্কুলে পড়ে, তার খরচ আমি চালাই। এটা ভাবতেই একসময় সাহস হতো না।”

একই গ্রামের রেখা দেবনাথ, মতিজা বেগম, বাগদী গ্রামের রাহিমা বেগম, বিরতুল গ্রামের লিমা রাণী দাস, রেহেনা বেগম ও মনি আক্তার একই সুরে সুর মেলালেন।

দোলনা তৈরির কাজ এই গ্রামে নতুন কিছু নয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এই শিল্প। আগে পুরুষরাই করতেন। এখন নারীরাই এগিয়ে। বর্তমানে বিরতুল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ধনুন, বাগদী, বিন্দান ও সেনপাড়া গ্রামের নারীরাও এ শিল্পে যুক্ত হয়েছেন। প্রায় ৩০০ পরিবার ও সহস্রাধিক নারী এই পেশার মাধ্যমে নিজেদের জীবনের গতি বদলেছেন।

বিরতুল গ্রামের নারীদের তৈরি দোলনা শুধু গাজীপুর বা ঢাকায় নয়- চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী হয়ে বিদেশ পর্যন্তও এর চাহিদা। কেউ কেউ বিদেশে প্রবাসী আত্মীয়ের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন এসব দোলনা। যা প্রবাসী বাঙালিদের ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।

উদ্যোক্তা স্বপ্না বেগম বলেন, “আমরা এখন রঙ আর ডিজাইনে বৈচিত্র্য এনেছি। অনেকে অনলাইনে অর্ডার দেন। চাইলে বিদেশেও পাঠাতে পারি।”

উদ্যোক্তা শেখ ফরিদ বলেন, “সব কিছুতেই যেমন আলো থাকে, তেমনি থাকে কিছু অন্ধকার। দোলনার দাম কমেছে, কাঁচামালের দাম বেড়েছে। লোহার রড, চেইন, সুতা, সবকিছুর খরচ বেড়েছে। তবু লাভের হিসেব মিলাতে হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা, নেই সরকারি প্রশিক্ষণ বা সহজ শর্তে ঋণ।”

সাথী বেগম নামের বিরতুল গ্রামের অপর এক নারী উদ্যোক্তা বলেন, “আমরা নিজেরা শিখে নিয়েছি, কেউ শেখায়নি। যদি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি একটু আর্থিক সহায়তা পেতাম, তাহলে আরও বড় করে কাজটা করতে পারতাম।”

নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ফারজানা তাসলিম জানান, অনেক নারী উদ্যোক্তা ইউনিয়ন থেকে বিভিন্ন নান্দনিক নামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন। এখন তারা যদি এই দোলনার বাজার তৈরি করতে চান, তাহলে উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে সে ব্যবস্থা করা সম্ভব।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, “বিরতুলের নারীরা এক অনন্য দৃষ্টান্ত। উপজেলা প্রশাসন সবসময় তাদের পাশে আছে এবং থাকবে। এছাড়া তারা যদি ছোট ছোট ঋণ চান, তাহলে তারা সকলে একত্রিশ হয়ে এলে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর থেকে তাদের জন্য ব্যবস্থা করা যাবে। এর বাইরে যদি বড় ধরনের কোন ঋণ পেতে আগ্রহী হন, তাহলে স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সাথে কথা বলে সেটার ব্যবস্থা করা হবে। তারা যেন কোন ঝামেলা ছাড়াই এই ঋণ পান সেই চেষ্টা করা হবে।”

ঢাকা/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গাইবান্ধায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একই পরিবারের ৩ জন নিহত

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে উপজেলার কামালের পাড়া ইউনিয়নের কামালের পাড়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহতরা হলেন—ওই গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে আফজাল হোসেন (৫৫), তার চাচাতো ভাই একরাম আলীর ছেলে মোশারফ হোসেন (২৭) এবং মকবুল হোসেনের ছেলে মিলন মিয়া (২৫)। মিলন মিয়া আফজাল হোসেনের নাতি।

কামালের পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম সাজু জানিয়েছেন, মিলনের বাবার ঘরে মোশারফের বিদ্যুতের মিটার ছিল। মিটার পুড়ে যাওয়ায় এর ছিঁড়ে যাওয়া তার টিনের বেড়ার সঙ্গে লেগে গোটা ঘর বিদ্যুতায়িত হয়। সেটা বুঝতে না পেরে মোশাররফ সেই ঘরের টিনের চালে উঠতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হন। তাকে বাঁচাতে গিয়ে মিলন বিদ্যুতায়িত হন। এ দুজনকে রক্ষা করতে গিয়ে আফজাল হোসেনও বিদ্যুতায়িত হন। স্থানীয়রা তাদেরকে দ্রুত উদ্ধার করে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তিন জনকেই মৃত ঘোষণা করেন। 

সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলম জানিয়েছেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। 

ঢাকা/মাসুম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ