পবিত্র কাবাঘরের দরজার চাবি ইসলামপূর্ব যুগ থেকে বংশানুক্রমিকভাবে আল-শাইবা পরিবারের হাতে রক্ষিত আছে। প্রায় ১৬০০ বছর ধরে এই পরিবার কাবাঘরের চাবির রক্ষণাবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে।

চাবির ইতিহাস ও রক্ষক

ইতিহাস অনুযায়ী, কুসাই বিন কিলাবের সময় থেকে আল-শাইবা পরিবার কাবাঘরের চাবির দায়িত্বে রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.

)-এর সময় শাইবা বিন ওসমান আবি তালহা চাবির রক্ষক ছিলেন। মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) উসমান ইবনে তালহা (রা.)-এর কাছে চাবি হস্তান্তর করে বলেন, ‘এখন থেকে এ চাবি তোমার বংশধরের হাতেই থাকবে, কেয়ামত পর্যন্ত। যে এটি তোমাদের থেকে নিতে চাইবে, সে হবে জালিম।’ এই ঘোষণার পর থেকে আল-শাইবা পরিবারের হাতে চাবির দায়িত্ব অব্যাহত আছে।

চাবি সব সময় পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের কাছে থাকে, পিতা থেকে পুত্রের কাছে নয়, বরং বয়সের ভিত্তিতে উত্তরাধিকার নির্ধারিত হয়। একজন রক্ষকের মৃত্যুর পর সৌদি বাদশাহর তত্ত্বাবধানে পরিবারের পরবর্তী বয়স্ক সদস্যকে চাবি হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে চাবির দায়িত্বে রয়েছেন শায়েখ আবদুল ওয়াহাব বিন জাইন আল-আবিদিন আল-শাইবি, যিনি হজরত উসমান (রা.)-এর ১১০তম উত্তরসূরি। এর আগে এই দায়িত্বে ছিলেন ড. শায়েখ সালেহ বিন জয়নুল আবেদিন আল-শাইবি, যিনি ২১ জুন ২০০৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

আরও পড়ুনমক্কা থেকে মদিনার পথে পথে দেখা মেলে বাংলাদেশিদের০৬ নভেম্বর ২০০৯

চাবির উপাদান

কাবাঘরের বর্তমান তালা ও চাবি ১৮ ক্যারেট সোনার নিকেল দিয়ে তৈরি। তালা ও চাবিতে কোরআনের আয়াত খোদিত রয়েছে। চাবি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ব্যাগেও কোরআনের আয়াতের নকশা করা থাকে। তুরস্কের জাদুঘরে অটোমান আমলের ৪৮টি চাবি সংরক্ষিত আছে, যা কাবার দরজা খোলার জন্য ব্যবহৃত হতো। সৌদি আরবে এই চাবির যে অনুলিপি আছে, তা খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি।

কাবার দরজা

কাবাঘরে একটি দরজা রয়েছে, যাকে বাবে কাবা বলা হয়। এটি কাবার উত্তর-পূর্ব দেয়ালে মেঝে থেকে ২.১৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।

১. ১৯৪২ সালে: ইব্রাহিম বদর রুপার দরজা তৈরি করেন।

২. ১৯৭৯ সালে: ইব্রাহিম বদরের ছেলে আহমেদ বিন ইব্রাহিম বদর ৩০০ কেজি সোনা দিয়ে তৈরি বর্তমান দরজা নির্মাণ করেন।

আরও পড়ুনকাবা শরিফের মাতাফে মার্বেল পাথরের অপূর্ব কাহিনি১৮ জুন ২০২৪

চাবি ও তালার ব্যবহার

আল-শাইবা পরিবারের প্রধান দায়িত্ব হলো কাবার দরজা খোলা ও বন্ধ করা। বর্তমানে তাঁদের দায়িত্ব এই কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অতীতে তাঁরা কাবার পরিচ্ছন্নতা, মাকামে ইব্রাহিম, কিসওয়ার মেরামত এবং দেয়ালে সুগন্ধি প্রয়োগের দায়িত্বও পালন করতেন।

কাবাঘর প্রতিবছর দুবার পরিষ্কার করা হয়, শাবান মাসের মাঝামাঝি ও জিলকদ মাসের মাঝামাঝি সময়ে। এ সময় গোলাপজল, জমজমের পানি ও সুগন্ধি দিয়ে কাবা পরিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া মহররম মাসের ১৫ তারিখে সৌদি বাদশাহর নির্দেশে কাবার অভ্যন্তর পানি দিয়ে ধোয়া হয়। সৌদি বাদশাহ, রাজ অতিথি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা জরুরি বাহিনী নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে চাবি ব্যবহার করে দরজা খুলতে পারে।

তালা পরিবর্তন

শেখ আবদুল কাদিরের শাসনকালে শাহ আবদুল্লাহর নির্দেশে কাবার তালা পরিবর্তন করা হয়। প্রিন্স খালিদ আল-ফয়সাল নতুন তালা ও চাবি শেখ আবদুল কাদিরের হাতে তুলে দেন। শেখ আবদুল কাদিরের মৃত্যুর পর ড. সালেহ বিন জয়নুল আবেদিন আল-শাইবি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

আরও পড়ুনহাজেরা (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর ত্যাগে মক্কার জমজম কূপ১৭ জুন ২০২৪

চাবির নিলাম

২০০৮ সালে দ্বাদশ শতাব্দীর একটি কাবার চাবি লন্ডনে নিলামে ১ কোটি ৮১ লাখ ডলারে বিক্রি হয়। এই লোহার চাবি ১৫ ইঞ্চি লম্বা এবং এতে লেখা ছিল, ‘এটি আল্লাহর ঘরের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত।’ এটি একমাত্র চাবি, যা ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে কেনা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন জাদুঘরে কাবার ৫৮টি চাবি সংরক্ষিত আছে।

কাবাঘরের চাবি শুধু একটি বস্তু নয়, বরং ইসলামি ঐতিহ্য ও পবিত্রতার প্রতীক। আল-শাইবা পরিবারের হাতে এই চাবির দায়িত্ব রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময় থেকে অব্যাহত আছে, যা মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও ধারাবাহিকতার প্রতিনিধিত্ব করে।

আরও পড়ুনমাকামে ইব্রাহিম: হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর দাঁড়ানোর স্থান১৩ জুন ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ব ঘর র চ ব পর ব র র খ আবদ ল ব যবহ র দরজ

এছাড়াও পড়ুন:

কারখানা সম্প্রসারণে ২১ কোটি টাকার জমি কিনছে অলিম্পিক

ভবিষ্যতে কারখানা সম্প্রসারণে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে ৭০২ ডেসিমেলের বেশি জমি কিনছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমি কেনা হচ্ছে গাজীপুরের কালীগঞ্জে। গতকাল রোববার জমিতে বিনিয়োগের এ তথ্য শেয়ারধারীদের জানানো হয়েছে।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে, তারা গাজীপুরের কালীগঞ্জে ৬৬৮ ডেসিমেল জমি কিনবে। তাতে খরচ হবে ২০ কোটি টাকা। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে সাড়ে ৩৩ ডেসিমেল জমি কিনবে। কাঁচপুরে এ জমি কিনতে কোম্পানিটি বিনিয়োগ করবে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকার বেশি। আলাদাভাবে চার ভাগে এসব জমি কেনা হবে। অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের নামেই এসব জমি কেনার কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি। ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এসব জমি কেনা হবে।

অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ দেশের বিস্কুট ও কনফেকশনারি খাতের শীর্ষস্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান। এনার্জি, এনার্জি প্লাস, নাটি, টিপসহ বাজারে প্রতিষ্ঠানটির নানা ব্র্যান্ডের বিস্কুট রয়েছে। এ ছাড়া বাজারে বহুল প্রচলিত পালস ব্র্যান্ডের ক্যান্ডিসহ নানা কনফেকশনারি পণ্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ১৯৮৯ সালে এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২০০ কোটি টাকার মূলধনি এ কোম্পানির শেয়ারের সংখ্যা ১৯ কোটি ৯৯ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮৬। গত মে মাস শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের ৩২ শতাংশ উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে, ৩৪ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারীর হাতে, ২১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক ও ১৩ শতাংশ ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। সব ধরনের খরচ ও কর বাদ দেওয়ার পর কোম্পানিটি এ সময়ে মুনাফা করেছে ১৮৩ কোটি টাকা। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) কোম্পানিটি ব্যবসা করেছে ২ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার। তার বিপরীতে এ সময়ে সব ধরনের খরচ ও কর বাদ দেওয়ার পর কোম্পানিটি মুনাফা করেছে প্রায় ১৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি–মার্চ) কোম্পানিটি ব্যবসা করেছে প্রায় ৬৫৩ কোটি টাকার। এর বিপরীতে নিট মুনাফা করে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা।

এদিকে কারখানা সম্প্রসারণে জমিতে বিনিয়োগের ঘোষণার দিনে ঢাকার বাজারে গতকাল রোববার কোম্পানিটির শেয়ারের দাম আড়াই টাকা বা প্রায় ২ শতাংশ বেড়েছে। দিন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৫২ টাকায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ