বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বর্তমান সরকারের হাতে নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। 

তিনি বলেন, ‘‘আগে ছিলাম কুকুরের মুখে, এখন পড়েছি বাঘের মুখে। সিন্দাবাদের বুড়োর মতো এই সরকার আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে, নেমে যেতে চায় না। তাই আমাদের ঘাড় থেকে তাদের ঝাকি দিয়ে নামাতে হবে।’’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বিএনপির সদস্য ফরম বিতরণ ও সদস্য নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

সরকারের বিরুদ্ধে লুটপাট ও ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগ তুলে মির্জা আব্বাস বলেন, “সরকারের সাঙ্গপাঙ্গরাই এসব অপকর্ম করছে। গত আট মাসে ৯০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এখন আমরা পাচারকারিদের পাল্লায় পড়ে গেছি।”

মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এই সরকারের বিরুদ্ধে কোনো মিডিয়ায় কোনো কথা নেই। মিডিয়ার কোনো স্বাধীনতা নেই। পত্রপত্রিকায় লিখতে দেওয়া হয় না। লজ্জায় আরও অনেক কিছু বলছি না।”

সম্প্রতি মিয়ানমার সীমান্তে ‘মানবিক করিডোর’ প্রসঙ্গে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, “এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। করিডোর দিলে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। নির্বাচিত সরকার ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।”

সরকারঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের পরিবারের দুর্নীতি নিয়েও অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, “উপদেষ্টাদের অনেকের বাবা-চাচারা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে, ঘুষ খাওয়ার অভিযোগও উঠেছে।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় নেতা জাকারিয়া তাহের সুমন, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো.

সেলিম ভূইঁয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ড. খন্দকার মারুফ হোসেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুজ্জামান আমির, সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াছিম, মহানগর বিএনপির সভাপতি উৎবাতুল বারি আবু, সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপুসহ দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

রুবেল//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র স সরক র র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

‘সাগরত ইলিশ ধরিত ন পারির, চোখেমুখে অন্ধহার দেহির’

বৈরী পরিবেশের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। ইলিশ ধরতে সাগরে নামতে পারছে না কক্সবাজার উপকূলের কয়েক হাজার ট্রলার। বেকার হয়ে পড়েছেন ১ লাখের বেশি জেলে। অধিকাংশ ট্রলার নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীতে।

আজ মঙ্গলবার সকালে নদী নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, জেলেরা অলস সমায় কাটাচ্ছেন। সেখানে দেখা হয় জেলে জুবাইদুল ইসলামের (২৫) সঙ্গে। সাগর উত্তাল থাকায় গত সাত দিন ইলিশ ধরতে যেতে পারেননি। সংসার কীভাবে চলবে, সে ভাবনায় দিন কাটছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘সাত দিন ধরি সাগরত ইলিশ ধরিত ন পারির। সাগর বেশি গরম। ট্রলারত বই বই টেনশন গরির (করছি)-সংসার কেনে (কীভাবে) চালাইয়ুম। ঘরত মা-বাপ, বউ আছে। তারা ঠিক মতন একবেলা খাইত ন পারের। চোখেমুখে অন্ধহার দেহির।’

জুবাইদুলের বাড়ি সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ার আলী আকবরডেইল গ্রামে। কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ায় থেকে সাত বছর ধরে তিনি ট্রলারে জেলে শ্রমিকের কাজ করছেন। ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে গিয়ে মাছ ধরছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হয়নি জানিয়ে জুবাইদুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ ১৭ জুন একটি ট্রলার নিয়ে তাঁরা ১৫ জন জেলে সাগরে ইলিশ ধরতে গিয়েছিলেন। ইলিশের সন্ধানে সাগরে তাঁরা সাত দিন অবস্থান করে গত ২২ জুন ঘাটে ফিরে আসেন। তত দিনে জালে ধরা পড়ে ১৪ মণ লইট্যা মাছ। বিক্রি করে পাওয়া গেছে ৫৬ হাজার টাকা। অথচ সমুদ্রযাত্রায় ট্রলারে খরচ হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। লোকসান হলে জেলেদের সংকট বাড়ে।

পাশের আরেক ট্রলারের জেলে কামরুল হাসান (৪৫) বলেন, গভীর সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছে ভরপুর, কিন্তু সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাভাবে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিন সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। ১৩ বছরের জেলে জীবনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি তাঁকে।

আজ সকাল থেকেই কক্সবাজারের আকাশ ছিল মেঘলা। থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। এমন আবহাওয়ায় বাঁকখালী নদীর পাঁচ-ছয় কিলোমিটার এলাকায় অবস্থান করছে তিন হাজারের বেশি ট্রলার। প্রতিটি ট্রলারে জেলে থাকেন ১৬-২২ জন। কয়েকজন জেলে ট্রলার পাহারা দিলেও বেশির ভাগ বাড়িতে চলে গেছেন।

কক্সবাজার ফিশিং বোটমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত ১২ জুন ৫৮ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার মুহূর্তে সাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। গত ১৮ দিনে সাগরে তিনটি লঘু ও নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এখনো সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। এমন পরিস্থিতিতে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া অনিরাপদ। ফলে কক্সবাজার সদরসহ মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার ছোট–বড় অন্তত ৬ হাজার ট্রলার ঘাটে পড়ে আছে। কিছু ট্রলার ঝুঁকি নিয়ে সাগরের কাছাকাছি এলাকায় গিয়ে জাল ফেলে ছোট আকৃতির লইট্যা, ফাইস্যা, পোঁপা, ছুরি ধরে আনলেও ইলিশের দেখা নেই। ইলিশ ধরতে গেলে ৭০-৮০ কিলোমিটার দূরে গভীর সাগরে যেতে হবে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার মতো ট্রলার নেই। ২০ জুলাই পর্যন্ত সাগরের উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।

সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার উপকূলে জেলেরা ইলিশ ধরতে যেতে পারছেন না। কাটাচ্ছেন অলস সময়। আজ সকালে নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে

সম্পর্কিত নিবন্ধ