কক্সবাজার শহরের উত্তর ডিককুল এলাকায় বেসরকারি হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজের হোস্টেল ভবন থেকে এক ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত ছাত্রের নাম হারুনুর রশিদ ওরফে মনির চৌধুরী (১৮)। আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

তিনি উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ পাইন্যাশিয়া গ্রামের মুজিবুল হক চৌধুরীর ছেলে এবং ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

পরিবারের দাবি, মনির চৌধুরী পরিকল্পিত হত্যার শিকার। মনির যদি আত্মহত্যা করতেন, তাহলে তাঁর আশপাশে থাকা বেঞ্চ এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকত। আশপাশের বেঞ্চ তো দূরে, যে রডের সঙ্গে তিনি ঝুলে ছিলেন, সে রডে লেগে থাকা মাকড়সার জাল পর্যন্ত অক্ষত ছিল।

এ বিষয়ে জানতে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।

নিহত মনিরের চাচাতো ভাই ও উখিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব সুলতান আহমদ চৌধুরী বলেন, মনিরকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হতে পারে। মনিরের লাশ হোস্টেলে ঝুলে আছে, এমন খবরে ভিত্তিতে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এরপর তিনি পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে মরদেহটি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

ইলিয়াস খান বলেন, হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজের হোস্টেলের একটি পরিত্যক্ত ভবন থেকে মনিরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এলাকাবাসী ও পরিবারের দাবি, মনিরকে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে এলে বলা যাবে, এটি হত্যা না আত্মহত্যা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কল জ র মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

চার কিশোরীর ধর্ষণ, হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়নি ৩৩ বছরেও

১৯৯১ সালের ৬ ডিসেম্বরের রাত। টেক্সাসের অস্টিন শহরের ব্যস্ত এক বাণিজ্যিক এলাকায় ছোট্ট এক দইয়ের দোকান। সেখানেই ঘটে গেল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। দোকান থেকে উদ্ধার হলো চার কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ। ১৩ বছরের অ্যামি এয়ারস, ১৫ বছরের সারা হারবিসন, ১৭ বছরের জেনিফার হারবিসন ও এলিজা থমাসকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল নির্মমভাবে। তাদের গলা টিপে ধরা হয়েছিল, শরীর বেঁধে রাখা হয়েছিল দড়ি দিয়ে, মাথায় গুলি করা হয়েছিল—এরপর প্রমাণ নষ্ট করতে দোকানেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

তিন দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এই হত্যাকাণ্ড আজও অস্টিনবাসীর মনে এক দুঃসহ স্মৃতি। এইচবিও তাই চার পর্বের তথ্যচিত্র ‘দ্য ইয়োগার্ট শপ মার্ডারস’ নির্মাণ করেছে, যেখানে আর্কাইভ ফুটেজ, তদন্তকারীদের বক্তব্য, আর নিহত ব্যক্তিদের পরিবার-বন্ধুদের সাক্ষাৎকারে ফুটে উঠেছে শোক, ক্ষোভ আর অসহায়তার চিত্র।
প্রথম পর্বেই নিহত অ্যামি এয়ারসের বাবা বব এয়ারস বলেন, ‘৩০ বছর, ৭ মাস, ৫ দিন হয়ে গেল—তবু আজও বিশ্বাস করতে পারি না।’ প্রতি রবিবার রাত ১০টায় এইচবিওতে সম্প্রচারিত হচ্ছে এই তথ্যচিত্র সিরিজ। যারা ‘ট্রু ক্রাইম’ ধরনের তথ্যচিত্রে আগ্রহী, তাঁদের কাছে এটি দেখা, নিঃসন্দেহে এক ভয়ংকর আর হৃদয়স্পর্শী অভিজ্ঞতা।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর পর ভেতরে যা দেখেছিলেন, তা বর্ণনা করতে গিয়ে সেই সময়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন—‘চারদিকে ধোঁয়া, ভেজা সিলিং, গলে যাওয়া আসবাবের মধ্যেই দেখা যাচ্ছিল লাশগুলো। তিনটি একসঙ্গে, আরেকটি একটু আলাদা।’

এই হত্যাকাণ্ডে অস্টিন শহর শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। নিহত কিশোরীদের পরিবার ও স্থানীয় ব্যক্তিরা ন্যায়বিচারের দাবিতে মিছিল করেছিলেন, শহরের রাস্তায় টাঙানো হয়েছিল পোস্টার ও বিলবোর্ড, স্থানীয় সংগীতশিল্পীরা গান লিখেছিলেন তাঁদের স্মরণে। তবু ৩৩ বছর পরেও রহস্যের জট খোলেনি।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এইচবিওর নতুন তথ্যচিত্র ‘দ্য ইয়োগার্ট শপ মার্ডারস’। গত ৩ আগস্ট মুক্তি পেয়েছে চার পর্বের তথ্যচিত্রটি। মুক্তির পর থেকে সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে তথ্যচিত্রটি।

‘দ্য ইয়োগার্ট শপ মার্ডারস’ পরিচালনা করেছেন মার্গারেট ব্রাউন। তবে ব্রাউনের আগে আরও একজন নির্মাতা এই ঘটনাকে তথ্যচিত্রে রূপ দিতে চেয়েছিলেন। প্রায় এক দশক আগে চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্লেয়ার হুই ঘটনাটির ওপর কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু কিশোরীদের ওপর চালানো নির্যাতনের ভয়াবহতা ও তদন্তপ্রক্রিয়ার অন্ধকার তাঁকে এতটাই মানসিকভাবে আঘাত করেছিল যে তিনি পুরো প্রজেক্ট ছেড়ে দেন, এমনকি চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারও ত্যাগ করেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করা কয়েকজন ক্রু সদস্যকেও মানসিক আঘাত সামলাতে থেরাপির আশ্রয় নিতে হয়েছিল।

তদন্ত ও ভেঙে পড়া বিচারপ্রক্রিয়া
ঘটনার অল্প কিছুদিন পরই মেক্সিকোয় দুজনকে আটক করা হলেও তাঁরা জোর করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার অভিযোগ করলে মামলা এগোয়নি। ১৯৯৯ সালে অস্টিন পুলিশ আবারও চার তরুণকে গ্রেপ্তার করে—রবার্ট স্প্রিংস্টিন জুনিয়র, মাইকেল স্কট, মরিস পিয়ার্স ও ফরেস্ট ওয়েলবর্ন।

‘দ্য ইয়োগার্ট শপ মার্ডারস’ তথ্যচিত্রের দৃশ্য। আইএমডিবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ