Samakal:
2025-05-16@12:32:58 GMT

রাজধানীর পথে পথে দুর্ভোগ

Published: 16th, May 2025 GMT

রাজধানীর পথে পথে দুর্ভোগ

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা। মাহদি রহমান নামে এক যুবক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কাকরাইল সড়ক এড়িয়ে চলুন।’ এর আগে দুপুর ১২টায় নাহিদুল ইসলাম নামে একজন ঢাকার রাস্তার গুগল ম্যাপ শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ঢাকাকে এড়িয়ে চলুন।’ 

ট্রাফিক অ্যালার্ট নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে এমন অনেক পোস্ট ছিল গত দু’দিন। ব্যবহারকারীরা এ গ্রুপটিতে মূলত সচেতনতামূলক পোস্ট দিয়ে থাকেন। রাস্তার অবস্থা, যানজট, দুর্ভোগ, দুর্ঘটনা ইত্যাদির ছবি, ভিডিওসহ তাৎক্ষণিক তথ্য শেয়ার করা হয় এই গ্রুপে। 

রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে গত দু’দিন টানা অবস্থান করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আবাসন সুবিধাসহ তিন দফা দাবিতে তারা রাস্তায় নেমেছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতেও গত দুই দিন পরপর নগর ভবন এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়েছেন তাঁর সমর্থকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠন। তাও চলছে পরপর দু’দিন। 

এর সঙ্গে গত বুধবার দীর্ঘ সময় শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছিলেন ডিপ্লোমাপড়ুয়া নার্সরা। ফলে এই দু’দিন কেবল ট্রাফিকের রমনা বিভাগ এলাকাই নয়; কার্যত রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ১০ মিনিটের পথ যেতে ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। অনেককে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। দু’দিনই এর সঙ্গে বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো যুক্ত হয়েছে বৃষ্টি। 

গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদিন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে সমকালের। নগরবাসী বলছেন, এই শহরে যানজটের নিত্যভোগান্তি তো আছেই। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারে এই মাত্রা আরও বাড়ে। তার ওপর নগরজুড়ে রাস্তা-ফুটপাত কাটাকাটি, খানাখন্দ, ভাঙা রাস্তাঘাট, ধুলাবালি নগরজীবনকে অসহনীয় করে তুলছে। বৃষ্টি হলে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় রাজপথ। গরম বাড়লে হাঁসফাঁস করতে হয় বাসে; অটোরিকশায় চলাচলকারী যাত্রীদের। এত বিড়ম্বনার মধ্যে বাড়তি হিসেবে যখন তখন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছেন ছাত্র, পেশাজীবী নির্বিশেষে। যত্রতত্র সড়ক অবরোধ এক ধরনের অসুখে পরিণত হয়েছে। 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিনটি আন্দোলন কর্মসূচি থাকছে রাজধানীতে। গড়ে দুটি করে হলেও গত ৯ মাস ৬ দিনে ৫৫২টি আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে এই শহরে। ৫ আগস্টের পর অধিকাংশ কর্মসূচি পালিত হয়েছে সড়ক অবরোধ করে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.

মনিরুল ইসলাম খান সমকালকে বলেন, জাতীয় সংসদ থাকলে সেখানে মানুষের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা এমপিরা তুলে ধরতে পারেন। এখন একটা অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায়। কিছু মানুষ এখন সরকারকে চাপে ফেলে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে। যেহেতু এটি রাজনৈতিক সরকার নয়, তাই তাদের আইনগত চরিত্র কিছুটা হলেও দুর্বল। অনেকে এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছেন বা নিতে চাচ্ছেন। এ জন্য প্রতিদিন অবরোধ-আন্দোলন হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে এটি হয়তো কমে আসবে।

বুধবার সকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকা থেকে ‘লংমার্চ’ করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার উদ্দেশে রওনা দেন। শত শত শিক্ষার্থীর এই মিছিলে তখনই সড়কে অচলাবস্থা শুরু হয়। এর পরপরই পুরান ঢাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে এক দল মানুষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সামনে অবরোধের উদ্দেশ্যে রওনা হন। দিনভর আন্দোলন শেষে তারা ফিরে গেলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাতেও কাকরাইলে থেকে যান। সেই থেকে শাহবাগের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে, মৎস্য ভবন, কাকরাইল মোড় ও মিন্টো রোড এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাফিক পুলিশ। 

গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকা বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়ে রাজধানীজুড়ে। গতকাল আবারও পুরান ঢাকা থেকে কয়েকশ মানুষ নগর ভবনের সামনে জড়ো হয়ে সেখানকার সড়কটি বন্ধ করে দেন। ছাত্রদল নেতা হত্যার প্রতিবাদে এবং উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকালও ছিল বিক্ষোভ-সমাবেশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হয়। 

এই এলাকার যাত্রীর বাড়তি চাপ গিয়ে পড়েছে মেট্রোরেলে। যাত্রীর চাপ এতই বেশি ছিল যে, অফ-পিক আওয়ারেও ট্রেনে ওঠার সুযোগ পাননি অনেকে। তার ওপর ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। অফিস শেষে ঘরে ফিরতেও নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে সীমাহীন যন্ত্রণায়। নারী ও শিশুর ভোগান্তি ছিল অবর্ণনীয়।

ট্রাফিক অ্যালার্টে পাওয়া পোস্টের সূত্র ধরে যোগাযোগ করা হলে মাহদি রহমান গতরাতে সমকালকে জানান, তিনি সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। গতকাল যানজটের কারণে তাঁকে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়তে হয়। যে পথে তাঁর সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা লাগত অন্য সময়, সেই পথে তাঁর দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে।

মাহদি বলেন, যারা নিজের গাড়ি ব্যবহার করেন তারা তো আমার মতো বাস বা রিকশা থেকে নেমে হেঁটে যেতে পারেন না। তাদের ভোগান্তি বেশি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সড়ক আন্দোলন আমরাও করেছি। কিন্তু ইমারজেন্সি তো বুঝতে হবে। 

মাগুরা সদর উপজেলার কাটাখাল এলাকার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার চালান। তিনি সমকালকে বলেন, ‘গত কয় মাসে আন্দোলন-সংগ্রাম লেগেই আছে। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্য পৌঁছানো যায় না। আয়ও কমে গেছে। বুধবার এক হাজার টাকাও ঘরে নিয়ে যেতে পারিনি। আজকে (বৃহস্পতিবার) আয় আরও কম।’ 
শ্যামপুরের বাসিন্দা আরিফ হোসেন বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকা দিয়ে হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠার পরই গাড়ির চাকা বন্ধ হয়ে যায়। আরেকটু পর জট ছাড়বে– এমন আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে ছিলাম। মগবাজার পৌঁছতে সময় লেগেছে তিন ঘণ্টা।’ 

নয়াটোলা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসে মহাখালীর উদ্দেশে রওনা দেওয়া আজহার আলী জানান, ‘একটা জরুরি কাজে বেরিয়েছি। বাসে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। এক পর্যায়ে গুলিস্তানে নেমে হেঁটে তেজগাঁও সাতরাস্তায় পৌঁছেছি।’

মালিবাগের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি রাস্তায় ভয়াবহ যানজট। পরে হেঁটে হেঁটে শাহবাগে যাই। এর মধ্যে একবার বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। ফুটপাত দিয়ে হাঁটার জো নেই। প্রতিদিন এসব আর ভালো লাগে না।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপকমিশনার শফিকুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘প্রতিদিন চার-পাঁচ ঘণ্টা প্রধান সড়কে ডাইভারশন দিতে হচ্ছে। এরই মধ্যে ভিআইপি ও ভিভিআইপি চলাচল থাকে। যানজটের কারণে মানুষ কোনো দিকেই ঠিকমতো চলাচল করতে পারছে না। সকাল থেকে শুধু মানুষের গালি খাচ্ছি।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক এল ক য় ত হয় ছ অবর ধ সরক র গতক ল সমক ল য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে পুতিন ও আনোয়ার ইব্রাহিমের রসিকতা

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যকার রসিকতার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর রসিক মন্তব্যে শুধু পুতিনই নন, দুই দেশের প্রতিনিধি দলও অট্টহাসিতে ফেটে পড়তে বাধ্য হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সরকারি সফরে রাশিয়ায় পৌঁছেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। প্রায় ২০ বছরের মধ্যে মালয়েশিয়ার কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সরকারি সফর এটি। আনোয়ার ক্রেমলিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে দেখা করেন। পরে দুই প্রেসিডেন্ট সেন্ট অ্যান্ড্রু'স হল পরিদর্শন করেন।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, জ্বালানি সহযোগিতা এবং এমইচ১৭ বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নেওয়ার আগে বিশাল হল রুমের মধ্য দিয়ে হেঁটে যান। সেখানে পুতিন তিনটি অলঙ্কৃত সিংহাসনের দিকে ইঙ্গিত করে আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে জানতে চান, “এখানে তিনটি সিংহাসন রয়েছে, একটি জারের জন্য, দ্বিতীয়টি তার স্ত্রীর জন্য। তৃতীয়টি কার জন্য বলে আপনি মনে করেন?”

আনোয়ার ইব্রাহিম চট করে উত্তর দেন, “দ্বিতীয় স্ত্রীর জন্য।”

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর এই উত্তরে উভয় দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে হাসির আওয়াজ ওঠে।

পুতিনও হাসিমুখে উত্তর দেন, “এটি একজন প্রকৃত মুসলিমের উত্তর, ইসলামী সংস্কৃতির একজন প্রকৃত প্রতিনিধি। আমাদের ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ সবসময় একই রকম নাও হতে পারে, তবে তথ্যের আদান-প্রদান সবসময় উভয় পক্ষের জন্য কার্যকর।”

আনোয়ার ইব্রাহিম হেসে স্পষ্ট করে বলেন, “আমার কেবল একজন স্ত্রী আছে, মি. প্রেসিডেন্ট।”

পরে সাংবাদিকদের আনোয়ার ইব্রাহিম ব্যাখ্যা করে বলেন, “পুতিন তাকে পরীক্ষা করেছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সিংহাসনের ঘরে তিনটি চেয়ার আছে। ডানদিকে কোনটি?  আমি বললাম: অবশ্যই, বাম দিকে স্ত্রী এবং দ্বিতীয় স্ত্রী...তারপর আমি... আমার মনে হয় বাম দিকের দ্বিতীয়টি মায়ের জন্য।”

জবাবে পুতিন বলেছেন, “হ্যাঁ, দ্বিতীয় সিংহাসনটি মায়ের জন্য।”

ঐতিহাসিকভাবে সেন্ট অ্যান্ড্রু'স হলের তিনটি সিংহাসন রয়েছে। এর একটি জারের জন্য, দ্বিতীয়টি তার স্ত্রীর জন্য এবং তৃতীয়টি জারের মা ডাউগার সম্রাজ্ঞীর প্রতিনিধিত্ব করে। হলটি ক্রেমলিনের প্রধান আনুষ্ঠানিক কক্ষগুলোর মধ্যে একটি, যা নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ এবং রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনার জন্য ব্যবহৃত হয়।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ