জাপান যেভাবে আগ্রাসী দেশ থেকে বিনয়ী দেশে পরিণত হলো
Published: 16th, May 2025 GMT
বিশ্বের সভ্য ও উন্নত দেশগুলোর একটি জাপান। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বাযুদ্ধে পরাজয় বরণের আগ পর্যন্ত জাপান ছিল আগ্রাসী এক দেশ। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বচলাকালে দেশের মানুষের ওপর যে ভয়বহতা নেমে আসে তা থেকে জাপান যুদ্ধনীতি থেকে সরে আসে। দেশের অভ্যন্তরে ঐক্য ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী হয়। জাপানের এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে আমেরিকার হিরোশিমা ও নাগাসাকি হামলার প্রভাব।
অনেক দিন ধরে চলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে জাপানের অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। দেশটির দোকানগুলো খাবার বা পানীয় জল কিছুই পাওয়া যাচ্ছিলো না। উৎপাদন বাড়াতে খেলার মাঠ ও উঠানেও সবজি চাষ শুরু করেছিল তারা। পেট্রোলের নাম এতোটাই বেড়ে গিযেছিল যে সাধারণ মানুষের তা কেনার সামর্থ্য ছিল না। জাপানের রাস্তাঘাটে কোনো পার্সোনাল গাড়ি ছিল না। রাস্তায় শুধু পায়ে হাঁটা মানুষ আর মিলিটারি চলাফেরা করতো। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকাল ৭ টায় জাপানি রাডারে দক্ষিণ দিক থেকে আসা একটা আমেরিকান বিমান দেখা যায়। সে সময় জাপানে সতর্কতা জারি করা হয়। এবং সমস্ত রেডিও কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সকাল ৮ টা নাগাদ বিমানটি জাপান থেকে চলে যায়। আসলে এই বিমানটি এসেছিল জাপানের পরিস্থিতি দেখতে। যে স্থানে পারমানবিক বোমাটি ফেলার কথা ছিল সেখানের আবহাওয়া কেমন, সেখানে অন্য কোনো যুদ্ধ বিমান আছে কিনা, এসব পরিস্থিতি দেখে বিমানটি ফিরে যায়। তবে জাপানি এয়ারফোর্স বা সৈনিকরা আমেরিকানদের এই অভিসন্ধি সম্পর্কে কিছুই বুঝতে পারেননি। কারণ সেই সময় এমন বহু শত্রু পক্ষের এমন যুদ্ধ বিমান টহল দিতে আসতো। তাই আক্রমণের কোনো আভাস না পেলে তাদের ওপর আগে থেকে অ্যাটাক করা হতো না। বিমানটি ফিরে যাবার পর সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়। রেডিও কার্যক্রম আবার শুরু হয়।
কিছুক্ষণ পর জাপানের আকাশে আরও একটা যুদ্ধ বিমান আসার সিগন্যাল পাওয়া যায়। জাপানের সামরিক সদস্যরা ভাবতে থাকেন এবারও হয়তো এই বিমান জাপানের অবস্থা দেখতেই এসেছে। জাপানি এয়ারফোর্স চাইলেই এই বিমানটি আটকাতে পারতো। এই প্লেনটির মধ্যেই রাখা ছিল ১০ ফুট ২৮ ইঞ্চি লম্বা চার টন ওজনের নীল ও সাদা রঙের পারমাণবিক বোমা। যার নাম ছিল Little Boy.
সকাল ৮টা বেজে ১৫ মিনিটে জাপানের হিরোসিমার চেহারা পুরোপুর বদলে যায়। যখন আমেরিকান প্লেন থেকে বোমা ফেলা হয় হিরোশিমা শহরে ওপর। বোমাটি পড়তে প্রায় ৪৩ সেকেন্ড সময় নেয়। এই সময় হাওয়ার গতি এতোই বেশি ছিল যে, বোমার গতি বদলে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ২৫০ মিটার দূরে একটি সার্জিক্যাল ক্লিনিকের ওপর বিষ্ফোরিত হয়। বোমা ফাটার সঙ্গে সঙ্গে সেই স্থানের তাপমাত্রা ১০ লক্ষ সেন্টিগ্রেটে পৌঁছে যায়। হিরোশিমা শহরের প্রায় ৮০ হাজার লোক সাথে সাথে মারা যায়।
হিরোশিমা আক্রমণের মাত্র তিন দিন পর ৯ আগস্ট জাপানের আরও একটি শহর নাগাসাকিতে আমেরিকা একটি বোমা ফেলে। যেটা নিচে পড়তে মাত্র ৫২ সেকেন্ড সময় নেয়। যে জায়গায় বোমা পড়েছিল তার আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিনত হয়। নাগাসাকি শহরের ক্যাথলিক গির্জার ঠিক ওপরে ফেলা আণবিক বোমা সেদিনই ৭০ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিকের প্রাণ হরণ করেছিল এবং দীর্ঘমেয়াদি সময়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল আরও অনেক বেশি।
জাপানের প্রতিশোধের পথে হাঁটেনি। তারা যুদ্ধবিরোধি এক শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে বিশ্বে ফের মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। সম্রাজ্য হারালেও জাপান হয়ে উঠেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে শান্তির প্রতীক।
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র ক ব ম নট
এছাড়াও পড়ুন:
আমরা ফিলিস্তিন টাইম জোনে ঢুকেছি: শেষ জাহাজ আটকের আগে ভিডিও বার্তায় শহিদুল
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র কাছ থেকে আলাদা অবস্থানে আছেন বলে জানিয়েছেন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। আজ শুক্রবার দুপুরে ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেছেন।
তবে শহিদুল আলমের এই ভিডিওবার্তা ফেসবুকে দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আজ সুমুদ ফ্লোটিলা’র সর্বশেষ জাহাজও আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
জাহাজ আটক হওয়ার আগে গাজামুখী নৌযান থেকে দেওয়া ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম বলেন, ‘আজ ৩ অক্টোবর ২০২৫। দেখতেই পাচ্ছেন, ঝকঝকা রোদ। আজ আমরা ফিলিস্তিন টাইম জোনে এসেছি। সুমুদ ফ্লোটিলায় যারা গিয়েছিলেন, তাঁরা ভিন্নভাবে গিয়েছিলেন। আমরা আলাদাভাবে যাচ্ছি। এভাবেই আমাদের পরিকল্পনা ছিল যে, ওদের ওপর কিছু হলেও আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি। জানতে পেরেছি, ইসরায়েল তাদের (সুমুদ ফ্লোটিলা) সব জাহাজ আটক করেছে।’
অনেক বড় জাহাজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে শহিদুল আলম বলেন, ‘আমাদেরটা সবচেয়ে বড় জাহাজ। আমাদের সঙ্গে আরও আটটি ছোট নৌকা পাড়ি দিয়েছিল। তারা আমাদের একটু আগে পাড়ি দিয়েছিল। আমরাসহ এই মুহুর্তে এই নয়টি যানবাহন মুক্ত আছে। আমরা আজকে ফিলিস্তিনি টাইম জোনে এসেছি। এখনো দূরত্ব আছে। তবে আজ আমরা এই আটটি ছোট নৌকাকে পার হয়ে যাব। এরপর থেকে আমাদের এই জাহাজটিই সবচেয়ে আগে থাকবে। এতে বোঝাই যাচ্ছে, আক্রোশটা আমাদের ওপরই পড়বে। কিন্তু আমরা একেবারেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আমরা একেবারেই গাজা পর্যন্ত যাব এবং কোনো বাধাই গ্রহণ করব না।’
ত্রাণ নয়, অবরোধ ভাঙার উদ্দেশ্য নিয়ে গাজার দিকে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছেন শহিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘এটা বলা প্রয়োজন, সুমুদ ফ্লোটিলায় যে নৌকাগুলো ছিল, তাদের কিন্তু দায়িত্ব ছিল ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার। আমরা কিন্তু ত্রাণের জন্য যাচ্ছি না। আমরা একটা অবৈধ অবরোধকে ভাঙব, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে যাচ্ছি।’
শহিদুল আলম বলেন, ‘এই নৌকাতে অনেক সাংবাদিক আছেন, চিকিৎসক আছেন। সঙ্গে অন্য কর্মীরাও আছেন। কিন্তু আমরা ত্রাণ দেওয়ার অজুহাতে যাচ্ছি তা না। আমরা লড়াই করতে যাচ্ছি, ফিলিস্তিনে আমাদের থাকার–যাওয়ার অধিকার আছে। ইসরায়েল যত মানুষ খুন করেছে এবং যত সাংবাদিক ও যত চিকিৎসক খুন করেছে, সেটার প্রতিবাদ আমরা জানাব।’
শহিদুল আলম আরও বলেন, ‘গত রাতেই মেডিসিন সান ফ্রন্টিয়ার্সের (এমএএফ) ১৪ জন চিকিৎসককে খুন করা হয়েছে। আমরা দেখব, ফ্রান্স সেটার ক্ষেত্রে কী করে। এ পর্যন্ত তারা তেমন কিছুই করেনি, মিষ্টি কথা বলা ছাড়া। এখন কথার সময় পেরিয়ে গেছে। এখন লড়াইয়ের সময়, এখন কাজ করার সময়। আমরা সেটাই করছি নাগরিক হিসেবে।’
বাংলাদেশি এই আলোকচিত্রী বলেন, ‘আমরা যেটা করতে পারি, যেহেতু এই দেশগুলোর নেতা–নেত্রীরা অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সে ক্ষেত্রে নাগরিক হিসেবে আমরা যেটা করতে পারি, সেটাই আমরা করতে চাইব। আপনাদের ভালোবাসাই আমাদের অনুপ্রেরণা।’
শহিদুল আলম বলেন, ‘যেমনটা দেখা যাচ্ছে, আজ সকালে সমুদ্র বেশ শান্ত। এটা অপ্রত্যাশিত, কারণ মুহূর্তের মধ্যেই এটা বদলে যেতে পারে। গতকাল খুব খারাপ অবস্থা ছিল। আমি একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তবে এখন পুরো চাঙা, লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।’
‘আমরা জয়ী হব, ফিলিস্তিন মুক্ত হবে’ জানিয়ে ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, তাঁদের জাহাজে ৯৬ জন মানুষ আছেন। এরঁ মধ্যে ৮২ জন গণমাধ্যম ও চিকিৎসা পেশাজীবী। এ ছাড়া আয়োজক, ফ্লোটিলা কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য ও জাহাজের ক্রুরা আছেন।
আরও পড়ুনফ্লোটিলা আটক আন্তর্জাতিক ‘জলদস্যুতা’, বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ: দেখুন ছবিতে২ ঘণ্টা আগে