লাখো মানুষের শ্রদ্ধায় বিশ্বের ‘সবচেয়ে দরিদ্র প্রেসিডেন্ট’ মুহিকার শেষবিদায়
Published: 16th, May 2025 GMT
উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসে মুহিকার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সাদামাটা জীবনযাপনের জন্য সারা বিশ্বে তিনি ‘সবচেয়ে দরিদ্র প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে খ্যাত ছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির হাজারো মানুষ তাঁদের প্রিয় ‘পেপে’কে শেষবিদায় জানাতে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন। হোসে মুহিকার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে উরুগুয়ে গিয়েছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা।
দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভোগার পর গত মঙ্গলবার মারা যান হোসে মুহিকা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। মৃত্যুর পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার জন্য জনপ্রিয় এই নেতার মরদেহ দুই দিন রাখা হয়েছিল। এই সময়ে প্রায় এক লাখ মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
‘তিনি (হোসে মুহিকা) আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছেন—অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতে, বাহ্যিক আড়ম্বরের জন্য না বাঁচতে।’...পাওলা মার্তিনেজ, শ্রদ্ধা জানাতে আসা এক ব্যক্তি
হোসে মুহিকার কফিনে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের দীর্ঘলাইন পড়ে গিয়েছিল। পার্লামেন্ট ভবনে সৃষ্টি হয়েছিল আবেগঘন পরিবেশের। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা ব্যক্তিদের কারও হাতে ছিল ফুল, কেউ কেউ কাঁধে তাঁর দলের পতাকা জড়িয়ে এসেছিলেন।
শ্রদ্ধা জানাতে আসা পাওলা মার্তিনেজ এএফপিকে বলেন, ‘তিনি (হোসে মুহিকা) আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছেন—অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতে, বাহ্যিক আড়ম্বরের জন্য না বাঁচতে।’
সাবেক এই গেরিলাযোদ্ধা ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত উরুগুয়ের শাসনক্ষমতায় ছিলেন। উরুগুয়েতে স্বৈরশাসনের সময় ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত কারাবন্দী ছিলেন হোসে মুহিকা। পরে নির্বাচনের মাধ্যমে বামপন্থীদের ক্ষমতায় আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।
এক বছর আগে হোসে মুহিকার খাদ্যনালিতে ক্যানসার ধরা পড়েছিল, পরে ক্যানসার তাঁর যকৃতে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রিয় নেতা ‘পেপে’র প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উরুগুয়েতে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে মানুষের দীর্ঘ সারিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চার কিশোরীর ধর্ষণ, হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়নি ৩৩ বছরেও
১৯৯১ সালের ৬ ডিসেম্বরের রাত। টেক্সাসের অস্টিন শহরের ব্যস্ত এক বাণিজ্যিক এলাকায় ছোট্ট এক দইয়ের দোকান। সেখানেই ঘটে গেল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। দোকান থেকে উদ্ধার হলো চার কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ। ১৩ বছরের অ্যামি এয়ারস, ১৫ বছরের সারা হারবিসন, ১৭ বছরের জেনিফার হারবিসন ও এলিজা থমাসকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল নির্মমভাবে। তাদের গলা টিপে ধরা হয়েছিল, শরীর বেঁধে রাখা হয়েছিল দড়ি দিয়ে, মাথায় গুলি করা হয়েছিল—এরপর প্রমাণ নষ্ট করতে দোকানেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
তিন দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এই হত্যাকাণ্ড আজও অস্টিনবাসীর মনে এক দুঃসহ স্মৃতি। এইচবিও তাই চার পর্বের তথ্যচিত্র ‘দ্য ইয়োগার্ট শপ মার্ডারস’ নির্মাণ করেছে, যেখানে আর্কাইভ ফুটেজ, তদন্তকারীদের বক্তব্য, আর নিহত ব্যক্তিদের পরিবার-বন্ধুদের সাক্ষাৎকারে ফুটে উঠেছে শোক, ক্ষোভ আর অসহায়তার চিত্র।প্রথম পর্বেই নিহত অ্যামি এয়ারসের বাবা বব এয়ারস বলেন, ‘৩০ বছর, ৭ মাস, ৫ দিন হয়ে গেল—তবু আজও বিশ্বাস করতে পারি না।’ প্রতি রবিবার রাত ১০টায় এইচবিওতে সম্প্রচারিত হচ্ছে এই তথ্যচিত্র সিরিজ। যারা ‘ট্রু ক্রাইম’ ধরনের তথ্যচিত্রে আগ্রহী, তাঁদের কাছে এটি দেখা, নিঃসন্দেহে এক ভয়ংকর আর হৃদয়স্পর্শী অভিজ্ঞতা।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর পর ভেতরে যা দেখেছিলেন, তা বর্ণনা করতে গিয়ে সেই সময়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন—‘চারদিকে ধোঁয়া, ভেজা সিলিং, গলে যাওয়া আসবাবের মধ্যেই দেখা যাচ্ছিল লাশগুলো। তিনটি একসঙ্গে, আরেকটি একটু আলাদা।’
এই হত্যাকাণ্ডে অস্টিন শহর শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। নিহত কিশোরীদের পরিবার ও স্থানীয় ব্যক্তিরা ন্যায়বিচারের দাবিতে মিছিল করেছিলেন, শহরের রাস্তায় টাঙানো হয়েছিল পোস্টার ও বিলবোর্ড, স্থানীয় সংগীতশিল্পীরা গান লিখেছিলেন তাঁদের স্মরণে। তবু ৩৩ বছর পরেও রহস্যের জট খোলেনি।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এইচবিওর নতুন তথ্যচিত্র ‘দ্য ইয়োগার্ট শপ মার্ডারস’। গত ৩ আগস্ট মুক্তি পেয়েছে চার পর্বের তথ্যচিত্রটি। মুক্তির পর থেকে সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে তথ্যচিত্রটি।
তদন্ত ও ভেঙে পড়া বিচারপ্রক্রিয়া
ঘটনার অল্প কিছুদিন পরই মেক্সিকোয় দুজনকে আটক করা হলেও তাঁরা জোর করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার অভিযোগ করলে মামলা এগোয়নি। ১৯৯৯ সালে অস্টিন পুলিশ আবারও চার তরুণকে গ্রেপ্তার করে—রবার্ট স্প্রিংস্টিন জুনিয়র, মাইকেল স্কট, মরিস পিয়ার্স ও ফরেস্ট ওয়েলবর্ন।