লামিন ইয়ামালের বাবা মৌনির নাসরাউইর করুণ দিন কেটেছে। হাত বাড়িয়ে নেওয়া সাহায্যের প্রতিদানে ‘আল্লাহ আপনার ভালো করুন’ বলা ভিন্ন উপায় ছিল না। ১৫ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন। সংসারে অভাব। শোধ করতে পারেন না দায়, দেনা। স্ত্রীও সন্তানসম্ভবা। দুই ব্যক্তি সেই দুর্দিনে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। বিনিময়ে সুন্দর এক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মৌনির, ‘আল্লাহ আমার সন্তান দিলে আপনাদের নামে নাম রাখব।’ সেই লামিন আর ইয়ামালের নাম মিলিয়ে ফুটবল বিশ্বের আজকের বিস্ময় লামিন ইয়ামালের জন্ম। আরবিতে লামিনের অর্থ সৎ আর ইয়ামাল মানে সুন্দর।

নাম কিংবা নামের অর্থের মতো ফুটবল পায়ে ১৭ বছরেই শোভা ছড়াতে শুরু করেছেন ইয়ামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এস্পানিওয়েলের বিপক্ষে বার্সার ২-০ গোলের জয়ে চোখধাঁধানো এক গোল করেছেন তিনি। যোগ করা সময়ে গোলে সহায়তা দিয়েছেন। দুই ম্যাচ হাতে থাকতে বার্সাকে জিতিয়েছেন লা লিগা। চলতি মৌসুমে জিতেছেন তিনটি শিরোপা। ভক্তদের দিয়েছেন আরও কত শত আশা, ‘প্রিয় ভক্তরা, আমি আপনাদের একটা কথাই বলতে চাই, এটা সবে আমাদের শুরু। জিততে জিততে ক্লান্ত হয়ে পড়া অসম্ভব। এই বার্তা নিজের মধ্যে গেঁথে নিয়েছি।’

তরুণ এই ইয়ামালে এরই মধ্যে বেশ কিছু বার্সা কিংবদন্তির ছাপ মিলেছে। তাঁর পায়ে নাকি রোনালদিনহোর মতো বল নাচে। তিনি ড্রিবলিং আর টেকনিকে নাকি নেইমার জুনিয়রের ছাঁচে গড়া। বাঁ-পায়ের ছন্দে এক নতুন মেসি। তবে ১৮ বছরে পা রাখতে চলা ইয়ামাল এবার ছায়া ছেড়ে বৃক্ষ হতে চান। ১৭-এর গণ্ডিতেই জাতীয় দলের হয়ে ইউরো জিতেছেন তিনি। ক্লাবের হয়ে দুটি লা লিগা শিরোপার মালিক, সঙ্গে আছে সুপার কাপ ও কোপা দেল রে’র শিরোপা। ম্যাচ ও গোল সংখ্যায়, শিরোপার তালিকায় বয়সের হিসাবে মেসি ও রোনালদোর রেকর্ড ভেঙেছেন ইয়ামাল। নিজ নামেই যে তাঁর কলম ধরার সময়, ‘রোনালদিনহো, নেইমার, লিও মেসি… ! উদ্দেশ্য নিজের লক্ষ্য অর্জন করা। আমি আমার মতো হতে চাই। আমি আমার ইতিহাস লিখতে চাই।’

নামের মতো সৎ থেকে ইতিহাস লিখতে চান ইয়ামাল। হানসি ফ্লিকের অধীনে ১৭ বছরে এক মৌসুমে ১৭ গোলের সঙ্গে ১৬ গোল করিয়ে ব্যালন ডি’অরের অন্যতম দাবিদার বনে গেছেন তিনি। ১৫ বছর বয়সে জাভি হার্নান্দেজের অধীনে অভিষেক তাঁর। ২০২২-২৩ মৌসুমের লা লিগা চ্যাম্পিয়ন তিনি। জাভির অধীনে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ব্যালন ডি’অরের তালিকায় নাম ওঠার কথাও ভুলতে চান না ইয়ামাল, ‘আমি জাভির কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁর সুনজর ছাড়া এসবের কিছুই ঘটত না।’

আগামী মৌসুমে ইয়ামালের ‘পুরুষ’ হওয়ার চ্যালেঞ্জ। পাঁচ শিরোপা জিতলেও বয়সের বেড়িতে সতীর্থদের সঙ্গে শ্যাম্পেইন হাতে উদযাপনের অনুমতি মেলেনি তাঁর। ঘরের বাইরে রাতভর উদযাপনের লাইসেন্স পাননি এখনও। বন্ধুর আবদারে নাইট ক্লাবে ঢুকতেও মানা। এমনকি সতীর্থ লেভানডভস্কি পর্যন্ত মাঠে গোল উদযাপনে দিয়েছেন শর্ত, ‘বয়স ১৮ বছর হতে হবে।’ ১৮ হলে অনেক কিছুর লাইসেন্স মিলবে ইয়ামালের। প্রতিপক্ষও পাবে নির্মম ট্যাকল, রুক্ষ দৃষ্টি আর কর্কশ ভাষা ব্যবহারের সুযোগ।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়

ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।

পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।

ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব  প্রায় ১০০ কিলোমিটার।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি  এখন সারানো  হয়েছে।

ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।  

ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।

ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে।  পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’

ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’

ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।

আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ