অবেদনবিদ নেই, ৪১ বছর ধরে প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার বন্ধ
Published: 17th, May 2025 GMT
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি-বিশেষজ্ঞ ও অবেদনবিদ না থাকায় ৪১ বছর ধরে প্রসূতিদের অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। এ ছাড়া অন্য চিকিৎসকের সংকট তো আছেই। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা-সেবা।
এ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে আড়াই লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এর মধ্যে ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। চিকিৎসক ও অবেদনবিদসংকটে এই উপজেলার বাইরে গিয়ে দরিদ্র ওই জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
৭ মে সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, দুজন চিকিৎসক চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা হলেন চিকিৎসা কর্মকর্তা শওকত ওসমান ও চিকিৎসা কর্মকর্তা এইচ এম আলভি আহম্মেদ। বহির্বিভাগে তাঁরা দুজন বেলা দেড়টা পর্যন্ত ২২৬ জন রোগীকে চিকিৎসা–সেবা দিয়েছেন। তখনো তাঁদের সামনে অন্তত ২০ জন রোগী অপেক্ষমাণ ছিলেন। এ ছাড়া জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ২২ জন।
কথা হয় মিলন সিকদার, শিরিন বেগম, আকলিমা বেগম, রীনা বেগমসহ আরও কয়েকজন রোগীর সঙ্গে। তাঁদের সবার ভাষ্য, তাঁরা খুবই গরিব। জেলা ও বিভাগীয় শহরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই।
আইরিন বেগম সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তিনি এসেছেন চিকিৎসা নিতে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক জানিয়েছেন অস্ত্রোপচার লাগবে। আইরিন বেগম বলেন, ‘এইহানে অপারেশন অইলে বোলে কোনো টাহা লাগত না। স্বামী শ্রমিকের কাজ করেন। কোনো রহমে সংসার চলে। ক্লিনিকে অপারেশন করতে বোলে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাহা লাগে। হেই টাহা এহন কোমনে পামু?’
বহির্বিভাগের ফার্মাসিস্ট নিখিল কুমার বলেন, প্রতিদিন দুই শ থেকে তিন শ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কোনো দিন তিন শর বেশি রোগী আসেন।
জ্যেষ্ঠ নার্স বিবি আয়েশা বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী ভর্তি থাকেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রসূতিদের জন্য আধুনিক অস্ত্রোপচার কক্ষ রয়েছে, যা কোনো দিন চালুই হয়নি। সরঞ্জামও রয়েছে ৫০ লক্ষাধিক টাকার। ব্যবহার না হওয়ায় ওটি লাইট, টেবিল, ডায়াথারমি যন্ত্র, সাকার যন্ত্রসহ ৫০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের অস্ত্রোপচারের নানা সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
লেবার ওয়ার্ডের মিডওয়াইফ হাফসা আক্তার বলেন, প্রতি মাসে ১৫০ থেকে ২০০ প্রসূতির নরমাল প্রসব করানো হয়। মাসে অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন প্রসূতি আসেন, যাঁদের অস্ত্রোপচার করাতে হয়। এখানে অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকায় তাঁদের বাইরে যেতে হয়।
দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। শুরুতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যার ছিল। ২০১৪ সালে এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ওই সময় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পুরোনো ভবন লাগোয়া আরেকটি তিনতলা ভবন নির্মাণ করে।
৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ চিকিৎসকের ২১টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ আটজন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন। চিকিৎসকের বাকি ১৩টি পদ শূন্য।
দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স প রস ত দ র চ ক ৎসক র কর মকর ত সরঞ জ ম জন র গ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত শিক্ষার্থীর মৃত্যু
রাজধানীর চকবাজারে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম মোর্শেদ আলম তানিম (১৮)। আজ বুধবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি আরমানিটোলার আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল খায়ের প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার রাতে চকবাজারের মাক্কু শাহ মাজার এলাকায় মোর্শেদ আলম মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। এ সময় ছিনতাইকারীরা তাঁর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তাঁকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। তবে মুঠোফোনটি নিতে পারেনি। তবে তারা পালিয়ে যায়।
মোর্শেদ আলমের বাবা ফিরোজ আলম বলেন, তাঁরা থাকেন আরমানিটোলা এলাকায়। ঘটনার দিন রাতে মোর্শেদ আলম বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে মাক্কু শাহ মাজার এলাকায় যান। বাসায় ফেরার পথে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন মোর্শেদ আলম। এ সময় ছিনতাইকারীরা তাঁকে ছুরিকাঘাতের পর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে বন্ধুরা তাঁকে উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ওই দিন রাতেই তাঁকে বাসায় নেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর অবস্থার অবনতি হলে আবারও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।