নীল জলরাশির কান সাগর। তীরে দাড়ালে মুহুর্তেই মন হারিয়ে যায়। অদ্ভূত এক ভালোলাগার আবেশে সতেজ হয়ে উঠে শরীর। এই নদীর জল এতোটাই নীল মনে হবে সদ্য পানির সঙ্গে নীল রঙ্গের মিশন ঘটিয়ে গেল কেউ। তার পাশেই কান চলচ্চিত্র উৎসবের মার্সে দু ফিল্ম ভবন। বিশ্ব চলচ্চিত্রের মর্যাদাপূর্ণ আসর কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মধ্যমণি এই ভবনই। যে ভবন থেকেই আগামী এক বছর কোন চলচ্চিত্রটি সবার হয়ে উঠবে তার হিসেব নিকেশ হয় যেনো। ফিল্মের এই যজ্ঞে পৃথিবীর বড় বড় তারকারা ছুটে আসেন। শুধুই কি আসা! সিনেমা তো বটেই সঙ্গে নিজের রূপ ও সৌন্দর্যকে তুলে ধরে রেড কার্পেট এলাকায়। ক্যামেরার ঝলকানির সঙ্গে তাদের মিষ্টি হাসি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় যেনো। সে হাসিতে হেসে উঠে কানের নীল আকাশ। হিসেবে উঠে পৃথিবীও।
মার্সে দু ফিল্ম ভবনের দুই তলায় প্রেসবক্স। জায়গাটিতে বিশ্বের তাবৎ বড় বড় সব গণমাধ্যমরে সাংবাদিকদের আনাগুনায় মুখর। সবাই ব্যস্ত উৎসবে আসা তারকাদের খবর ছড়িয়ে দিতে বিশ্বব্যাপী। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯ পর্যন্ত সরব থাকে এই প্রেসবক্স।
তারিখ ১৭ মে। এ দিন পরিচালক ডমিনিক মলের চলচ্চিত্র ‘Dossier 137’-এর সংবাদ সম্মেলন। প্রেস বক্স থেকে সেই সংবাদ সম্মেলন যোগদানের উদ্দেশ্যে বের হয়ে একতলা উপরে যেতেই ছোট জটলা। কালো পোশাকে দাড়িয়ে আছেন কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী আর জনা কয়েক সেচ্ছাবেক। কৌতুহলী হয়ে কাছে ছুটতেই দেখা হয় বাংলাদেশ থেকে আসা ফটো সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে। বললেন, এখানে দাঁড়ান, একটু পরই এখান দিয়ে আসবেন স্ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ড। কি বলে! এখান দিয়ে স্ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ড আসবে? টোয়াইলাইট নায়িকা ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট। নিশ্চিত হতেই প্রশ্ন করা। পাশে থাকা নিরাপত্তাকর্মী জানালেন হ্যাঁ আসবে। অদ্ভুত এক ঘোর লেগে গেল। শত শহস্র মাইল দূরত্বে থেকে যে তারুণরা স্টুয়ার্ডদের স্বপ্ন দেখে, সিনেমা হলে দেখে দেখে একটা জীবন কাটিয়ে দেয় সেই ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ডকে এভাবে সামনে পাবো। দেখতে পাবো। তার শরীরের ব্যবহৃত সুগন্ধী নাকে লাগবে? খানিক সময়ের জন্য অদ্ভুত এক ভাবনায় ডুবে যাচ্ছিল হৃদয়। এসময় হুরমুর করে ছুটতে লাগলেন নিরাপত্তাকর্মীরা। তাদের ছুটাছুটির মধ্যই দ্রুতপায়ে ছুটে আসছিলেন ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট। চোখে চশমা। ক্রিমরঙ্গা পোসাকে দেখতে বেশ অচেনা লাগছিল।
দ্রুত পায়ে হেটে আসা ক্রিস্টেনকে হ্যালো বলতেই আটকে গেলেন। এক পলক তাকালেনও। পাশে থাকা সবাই তখন ব্যস্ত হয়ে উঠলেন অটোগ্রাফ নিতে। বিশ্বের বড় এই উৎসবে এভাবে অটোগ্রাম নেওয়ার দৃশ্য দেখে বেশ অবাকই হলাম। অথচ বাংলাদেশে এই অটোগ্রাম নেওয়ার সংস্কৃতি এখন বিলোপ্তির পথে। অথচ এটা ফরাসীরা কি দারুণভাবে লালন করছেন।
মার্সে দ্যু ফিল্ম ভবনের তৃতীয় তলায় একজন সাধারণ মানুষদের মতই হেটে যাচ্ছিলেন বিশ্বের অন্যতম পরিচিত এই তারকা। দুই হাত দূর থেকে তাকে এভাবে দেখা যাবে তা যেনো কল্পনারও বাইরে ছিল। দোহারা শরীর। চোখে দারুণ মাদকতা। চাহনীতে যে কোনো তরুণপ্রাণেই রোমান্টিক ঢেউ খেলে যাবে। তবে সিনেমায় যেমন দেখা যায় সরাসরি ক্রিস্টেনকে তেমন না পাওয়ায় কিছুটা হতাশও লাগলো। যেনো সাদামাটা একজন তরুণীকেই দেখলাম। অহমিকা নেই, সঙ্গে নেই বডিগার্ডের বিশাল বহর, যে চাইছেন তার সঙ্গেই সেলফি তোলার সুযোগ দিচ্ছেন।
৭৮ তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে এবার টুয়াইলাইট নায়িকা অভিনেত্রী হিসেবে আসেননি। এসেছেন ভিন্ন পরিচয়ে—নির্মাতা হিসেবে। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র The Chronology of Water প্রদর্শিত হয়েছে মর্যাদাপূর্ণ এই উৎসবে। লিডিয়া ইউকনাভিচ-এর আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস La Mécanique des Fluides (২০১১) অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে এক তরুণ সাঁতারুর জীবনকাহিনি তুলে ধরা হয়েছে।
এদিন রেড কার্পেটেও হেটেছেন তিনি। যেখানে তার সাজ ছির হালকা গোলাপি, স্বচ্ছ ম্যাক্সি স্কার্ট, যার নিচে ছিল একটি টুইড শর্ট স্যুট। মাথায় এলোমেলোভাবে বাঁধা খোলা চুল, যেন হাওয়ায় খেলা করছি তা। আর সেই চুলের ডগায় হট পিংক ডিপ-ডাই— রঙের সাবলিল এক প্রতিবাদের ইঙ্গিত। উপরে পরেছিলেন ম্যাচিং টুইড ব্লেজার, যার বাটনে ছিল কালো-রুপালি "CC" চিহ্ন। গলায় হীরের চকচকে চোকার, পায়ে হালকা গোলাপি পাম্প হিল— একদিকে পরিমার্জিত।
এবারের কান উৎসবের নতুন ড্রেস কোড অনুযায়ী, "লাল গালিচায় এবং উৎসবের যেকোনো অংশে নগ্নতা নিষিদ্ধ। বিষয়টি বিবেচনা করেই নতুন স্টাইল বেছে নিয়েছিলেন এই তারকা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
এবার কাজান, এরপর স্পেনে ‘মাস্তুল’
রাশিয়ার কাজান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ পেয়েছে মোহাম্মদ নূরুজ্জামানের সিনেমা ‘মাস্তুল’। উৎসবের ২১তম আসরে প্রদর্শিত হবে ছবিটি।
উৎসবটি শুরু হবে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর, শেষ হবে ৯ সেপ্টেম্বর।
নির্মাতা জানান, রাশিয়ার মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘মাস্তুল’ প্রদর্শিত হওয়ার পর বিভিন্ন উৎসব থেকেই সিনেমাটি দেখানোর আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। গেল মাসেই রাশিয়ার চেবক্সারি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত ও প্রশংসিত হয় এই সিনেমা।
তবে কাজানের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নয়, বিশেষ বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে ‘মাস্তুল’।
কাজান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ২১তম উৎসবে ‘রাশিয়া-ইসলামিক ওয়ার্ল্ড’ বিশেষ প্রোগ্রামে প্রতিযোগিতার বাইরে থেকে ১০টি চলচ্চিত্র নির্বাচন করেছে। যেখানে মানবতাবাদ ও সহমর্মিতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি এবারের নির্বাচিত দেশগুলোর মধ্যে আছে রাশিয়া, কাজাখস্তান, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, সৌদি আরব, কিরগিজস্তান এবং উজবেকিস্তান-তুর্কমেনিস্তানের যৌথ প্রযোজনার ছবি।
উৎসব কর্তৃপক্ষ জানায়, এবারের আসন্ন কাজান চলচ্চিত্র উৎসবে ৬৭টি দেশ থেকে জমা পড়েছে ৮৪৫টি চলচ্চিত্র। রাশিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় আয়োজিত এই উৎসব তাতারস্তান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট রুস্তাম মিনিখানভের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং রাশিয়া-ইসলামিক ওয়ার্ল্ড স্ট্র্যাটেজিক ভিশন গ্রুপের অংশীদারত্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
স্ট্র্যাটেজিক ভিশন গ্রুপের ডেপুটি কো–অর্ডিনেটর এলমিরা সাদিকোভা জানান, এবারের ‘রাশিয়া-ইসলামিক বিশ্ব’ বিভাগটি শুধু বিস্তৃত ভৌগোলিক অংশগ্রহণেই নয়, বরং ইসলামি বিশ্বের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও রীতিনীতির সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি দুর্লভ সুযোগ হবে।
জলে ভাসমান জাহাজিদের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘মাস্তুল’। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, দীপক সুমন, আমিনুর রহমান, আরিফ হাসান, সিকদার মুকিত, সিফাত বন্যা প্রমুখ। ছবিটির ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন ও প্রমোশনে আছে টঙঘর টকিজ।
শুধু কাজান নয়, আসছে সেপ্টেম্বরে স্পেনে অনুষ্ঠিতব্য ইমাজিনইন্ডিয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২৪তম আসর ‘সেরা মানবিক ছবি’র জন্যও মনোনয়ন পেয়েছে ‘মাস্তুল’। এই উৎসবে যোগ দিতে আমন্ত্রণও পেয়েছেন নির্মাতা। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরে স্পেনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন বলে জানান তিনি।
দেশে মুক্তির বিষয়ে নির্মাতা জানান, স্পেনের ইমাজিনইন্ডিয়া উৎসবে যোগ দেওয়ার আগেই দেশের দর্শকদের ‘মাস্তুল’দেখাতে চাই। সেভাবেই পরিকল্পনা চলছে। বাকিটা দেখা যাক।