চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ভাইয়ারদিঘি-খরনা সড়কের লালারখীল এলাকা। পিচঢালা সড়কের পাশেই আগে সুবিশাল সবুজ পাহাড় ছিল। এখন গোটা এলাকার চিত্র যেন ভিন্ন। সবুজ তো নেই-ই; উল্টা দেদার সেখানে পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে 
যাচ্ছে একটি চক্র। পাহাড় কাটা মাটি পরিবহনের কারণে পুরো এলাকা ধুলায় ধূসরিত। স্থানীয়রা বলছেন, গত এক মাস ধরে নিয়মিত এ এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি পরিবেশ অধিদপ্তর বা স্থানীয় প্রশাসনকে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন উপজেলার খরনা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের লালারখীলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশের একটি পাহাড় খাড়াভাবে অর্ধেকের বেশি কাটা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ের গায়ে এস্কক্যাভেটর দিয়ে মাটি খুবলে নেওয়ার চিহ্ন। জানা গেল, রাস্তার পাশের পাহাড়টির পেছনের দিকে আরও কয়েকটি পাহাড়ও কাটা চলছে। পাহাড় কেটে খুবলে নেওয়া লাল মাটি বিক্রির জন্য হরদম আসছে ভারী ট্রাক। এসব ভারী ট্রাক চলাচলের কারণে ভাইয়ারদিঘি-লালারখীল সড়কটি এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কারণ সড়কের পাশেই ৩০ ফুট গভীর খাল। যানবাহনের চাপে সড়কের পাশ ভেঙে পড়ে যাচ্ছে খালে। এ ছাড়াও সরু সড়কে সৃষ্টি হয়েছে উঁচু-নিচু খানাখন্দ। সড়কের পাশে কাটা পাহাড়ে একটি এস্কক্যাভেটর দেখা গেলেও কথা বলার মতো কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ একর জায়গাজুড়ে এ ধ্বংসযজ্ঞ চলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় একজন জানান, এক মাস ধরে পাহাড়টি এস্কক্যাভেটর দিয়ে খাড়াভাবে কাটা হচ্ছে। এর আগে পাশে আরও কয়েকটি পাহাড় কেটে সমান করা হয়েছে। রাত ৮টা থেকে পাহাড় কাটার কার্যক্রম শুরু হয়। সারারাত কাটার কাজ চলে। এখানের লাল মাটি আশপাশের এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি পাহাড় কাটায় জড়িত। নিরাপত্তার জন্য তিনি সেই প্রভাবশালীদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। একই মনোভাব দেখিয়েছেন আরও কয়েকজন স্থানীয়। তবে এর সঙ্গে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য এবং মাটি ব্যবসায়ী জড়িত বলে জানা গেছে।
পটিয়া পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক ও জেলা বাসদের সদস্য স ম ইউনুছ বলেন, ‘পটিয়ার হাঈদগাঁও, কেলিশহর ও খরনা এলাকায় পাহাড়, টিলা কেটে পরিবেশবিধ্বংসী কার্যক্রম চলছে বহু বছর ধরে। এতে প্রতিবেশ ও প্রকৃতির অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত পাহাড় ও টপসয়েল কাটা হলেও স্থানীয় প্রশাসনের কার্যত কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। দ্রুত দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থাসহ পাহাড়-টিলা সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’
পাহাড় কাটা প্রসঙ্গে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান বলেন, পাহাড় কাটার কোনো অনুমতি নেই। লালারখীলে পাহাড় কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক র প শ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সাজেকে নিহত খুবি শিক্ষার্থী রিংকীর মরদেহ নেওয়া হবে গাইবান্ধা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সেশনাল ট্যুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকীর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তার বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে।

এছাড়া শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে এদিন সকল ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সেশনাল ট্যুরের সময় রাঙামাটির সাজেক যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকী নিহত হন। দুর্ঘটনায় নিহত রুবিনা আফসানা রিংকির মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাদের বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে। এই দুর্ঘটনায় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদেরকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনজনকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হচ্ছে ।”

তিনি বলেন, “এই শোকাবহ ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে, সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত আছেন। তিনি নিজে এবং সহকারী পরিচালকসহ কর্মকর্তারা খাগড়াছড়ি রওনা হয়েছেন।”

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে নিহত শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। 

এদিকে, সাজেকে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সেশনাল ট্যুর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার কাকলি রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ ৪র্থ বর্ষ টার্ম-২ এর সেশনাল ট্যুরে অংশগ্রহণরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। শিক্ষার্থীর এই অকাল মৃত্যুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে শোকাহত এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল দূরপাল্লার সেশনাল ট্যুর স্থগিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে চান্দের গাড়ি পাহাড়ের খাদে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এসময় আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সাজেকের হাউসপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহত রুবিনা আফসানা রিংকী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। আহতরা সবাই একই বিভাগের শিক্ষার্থী।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ