শিল্পীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা বন্ধ হোক: অভিনয়শিল্পী সংঘ
Published: 19th, May 2025 GMT
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের আজ তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে আলোচনার মধ্যে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটকের অভিনয়শিল্পীদের পেশাদার সংগঠন ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ’।
আজ সোমবার বিকেলে এক বিবৃতিতে অভিনয়শিল্পী সংঘ লিখেছে, ‘সমাজ তথা রাষ্ট্রের সেবা ও স্বার্থ সংরক্ষণে অভিনয়শিল্পীরা সর্বদা সোচ্চার ও সচেতন। শুধু তা–ই নয়, যেকোনো মানবিক প্রয়োজনেও অভিনয়শিল্পীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সুতরাং, এই শিল্পীদের স্বার্থ ও সম্মান সংরক্ষণ করাও সমাজ তথা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার, মামলা ও হামলায় তৈরি হয় নানা উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা। যা শিল্পী ও তাঁর পরিবারের স্বাভাবিক জীবনাচারকে বিঘ্নিত ও অসহায় করে। পাশাপাশি সামাজিক জীবনেও তৈরি হয় নানা বিশৃঙ্খলা। তাই শিল্পীসমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার সংঘবদ্ধ চলমান অপচেষ্টা বন্ধ হোক। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের কাছে ন্যায়সংগত ও বৈষম্যহীন কর্মপন্থা প্রত্যাশা করি। আমরা সর্বদা ন্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
ফারিয়াকে গ্রেপ্তার নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন অভিনয়শিল্পীরাও। ফারিয়াকে আদালতে নেওয়ার একটি ছবি পোস্ট করেছেন নওশাবা। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘দমটা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার। কেনো? কেনো রাষ্ট্র? কি দোষে একজন শিল্পী আজ এইভাবে? জনগণ জানতে চায়। জানার অধিকার আমাদের আছে! আমরা বারবার কি উদাহরণ সৃষ্টি করছি?’
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন লিখেছেন, ‘কী এক লজ্জা। ফ্যাসিস্ট সরকার যা করেছে, সেখানে এই মেয়েটার কিছুই করার ছিল না। আমি এমন পরিস্থিতি এবং সিস্টেম সম্পর্কে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এমন একটি দেশে বাস করি, যেখানে ন্যায্য অধিকার শব্দটা সাধারণ নয়। কিন্তু সত্যিকারভাবেই এটা অগ্রহণযোগ্য।’
নির্মাতা আশফাক লিখেছেন, ‘এভাবেই দিনে দিনে প্রকৃত খুনী এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দুর্বল করতে অন্যদের সফট টার্গেট করা হয়ে আসছিল এবং করা হচ্ছে। এটাকে আর যাই হোক, সংস্কার বলে না সরকার। হত্যাচেষ্টার যে মামলা করা হলো এবং যে হত্যার সময় তিনি দেশেই ছিলেন না, সেই অভিনেতা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার এবং কারাগারে প্রেরণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ইঙ্গিতই দেয়। আমরা জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছিলাম। কোনোরকম প্রহসন চাইনি, এখনও চাই না। চিহ্নিত অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়া/পালাতে দেওয়া এবং ঢালাও গায়েবি মামলাবাজির নাটক বন্ধ করেন।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।