সাম্য হত্যাকাণ্ড: রাজনীতি নয়, বিচার চাই
Published: 19th, May 2025 GMT
আবারও ঝরেছে প্রাণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাস-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় খুন হলেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। শুধু সাম্য নন; নথিপত্র বলছে, এর আগে আরও পৌনে একশ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। সেগুলোর বিচার শেষ হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে চিহ্নিত আসামিদের বেকসুর খালাস দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যে বিচারহীনতার শৃঙ্খলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ছে, এ থেকে কি মুক্তি মিলবে?
২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের কর্মীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকর। তাঁর হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্রলীগের ১০ কর্মীকে বহিষ্কারও করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু রাজনৈতিক শক্তি খাটিয়ে, আদালতকে ব্যবহার করে সেই বহিষ্কারাদেশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। সাত বছর পর সেই আসামিরা বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। আসামিরা প্রমাণ করতে সমর্থ হয়– আবু বকরকে কেউ খুন করেনি!
১৯৭৪ সালে কুখ্যাত ৭ খুনের ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত কালো ইতিহাস। মুহসীন হলের সেই ৭ খুন হত্যায় প্রমাণিত– মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি। জিয়াউর রহমান এসে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে তাঁকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এভাবে সে ঘটনাও চাপা পড়ে যায়।
একে একে ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সংশ্লিষ্টতায় বারবার রক্তাক্ত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে একটিরও বিচার হয়নি। এ যেন দুর্বৃত্তের জন্য নিরাপদ আখড়া। বরং শিক্ষার্থীদের জন্যই অনিরাপদ এই শিক্ষায়তন।
এবার তার ব্যতিক্রম হবে কি? শাহরিয়ার সাম্যের হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে আন্দোলন হওয়ার কথা ছিল, তা এখন গড়িয়েছে উপাচার্যের পদত্যাগ বনাম উপাচার্য বহালের আন্দোলনে। সাম্যের হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে, টকশো হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে। হচ্ছে না কেবল বিচার।
আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গর্ব করে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলতে যাই, তখন কোথাও একটু থামতে হয়। প্রাচ্য বা প্রতীচ্য– পৃথিবীর কোথাও কি এত ঐতিহ্যময় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা এত অনিরাপদ? যেখানে ন্যূনতম আবাসন সুবিধা নেই; খাবারের করুণ অবস্থা; পড়াশোনা-গবেষণা তো বাদই দিলাম।
রাজনৈতিক দলগুলোর কোন্দলে পড়ে যত অপরাধ-সন্ত্রাস এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলেছে, তার কোনোটিই বিচারের মুখ দেখেনি। এই দায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নিতে হবে। তাদের অপরাজনীতি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কোন পর্যায়ে এসে দাঁড় করিয়েছে, তা তাদের বোঝা দরকার। একই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের যারপরনাই অবজ্ঞা ও অবহেলার বিরুদ্ধে সরব হওয়া উচিত। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর পদলেহন ও অপরাধীদের বাঁচাতে গিয়ে পুলিশ যেভাবে একেকটি হত্যাকাণ্ডের ক্লু অনুসন্ধানে ক্রমাগত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, তা ন্যক্কারজনক। এসব হত্যাকাণ্ডে পুলিশের শৈথিল্য এবং অনেকাংশে পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকার গুরুতর অভিযোগের তদন্ত করা উচিত।
আপাতত সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচারের দিকে মুখিয়ে আছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে বেশ কিছু তৎপরতা দেখিয়েছে। সম্প্রতি সাম্য হত্যার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার। তিনি বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন ও জড়িতদের হত্যাকাণ্ডে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা বিচারে আর সময়ক্ষেপণ চাই না। একই সঙ্গে এটিও মনে করি, বিগত দিনের মতো যারা লাশের রাজনীতি করতে চান, তাদের জন্য এটি সুসময় নয়। কারণ সাধারণ শিক্ষার্থীরা একতাবদ্ধ। সঠিক এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়ার মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হবে দেশের প্রাচীনতম এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর মধ্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধকর্মের ইতি টানা হবে– এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
শাফায়াত স্বচ্ছ: শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হত য ক ণ ড র র হত য ক ণ ড র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
ধ্বংসস্তূপে সেঞ্চুরির ফুল ফোটালেন ব্রুক-স্মিথ
দিনের দ্বিতীয় ওভারে পরপর ২ বলে ২ উইকেট। আগের দিন ইংল্যান্ডের ৩ উইকেট নিয়ে এগিয়ে ছিল ভারত। শুক্রবার তৃতীয় দিনে সাত সকালে আরো ২ উইকেটে স্বাগতিকদের প্রবল চাপে ফেলে দেয় ভারত। তাদের করা ৫৮৭ রানের জবাবে ইংল্যান্ডের রান ৫ উইকেটে ৮৪।
এরপরই শুরু হয় ইংলিশদের কড়া শাসন। শুরু হয় হ্যারি ব্রুক ও জেমি স্মিথের অভিযান। ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রথমে দলকে টেনে তোলেন। এরপর ভারতের বোলারদের নাস্তানাবুদ করে এলোমেলো করে দেন। জুটি গড়েন ৩০৩ রানের। সেঞ্চুরির ফুল ফুটিয়েছেন দুজনই। দেড়শও পেরিয়ে যান তারা।
ব্রুক আটকে যান ১৫৮ রানে। স্মিথকে থামাতে পারেন না কেউ। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবলের পথে অনায়েসেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান। কিন্তু সতীর্থরা কেউ সঙ্গ না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ১৮৪ রানে নটআউট ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
ইংল্যান্ড করতে পারে ৪০৭ রান। ১৮০ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা ভারত দিন শেষ করেছে ১ উইকেটে ৬৪ রান নিয়ে। তাদের লিড ২৪৪ রানের।
তৃতীয় দিনের খেলার শুরুতে পরপর ২ উইকেট এনে দেন মোহাম্মদ সিরাজ। প্রথমে জো রুটকে ২২ রানে পান্তের তালুবন্দি করেন। পরের বলেই ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস পান্তকে ক্যাচ দেন। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই ধাক্কা হজম করে ইংল্যান্ড।
সেখান থেকে ষষ্ঠ উইকেটে ব্রুক ও স্মিথ ৩০৩ রান যোগ করেন। যা ইংল্যান্ডের ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসের ষষ্ঠ উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৬ সালে কেপটাউনে জনি বেয়ারস্টো ও বেন স্টোকস ৩৯৯ রান করেছিলেন। জুটি গড়ার সময় স্মিথ ছিলেন মারমুখী। ৮০ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। ব্রুক ধীরেই এগিয়েছেন। তবে সেঞ্চুরি পেতে সমস্যা হয়নি।
দিনের শেষ সেশনে এই জুটি ভাঙেন আকাশ দ্বীপ। ডানহাতি পেসারের স্লোয়ার বলে বিভ্রান্ত হয়ে আউট হন ব্রুক, ১৫৮ রানে। ২৩৪ বলে ১৭ চার ও ১ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি। তার ফেরার পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডার। পরের চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে তিনজনই রানের খাতা খুলতে পারেননি।
তাতে ডাবল সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েও পাওয়া হয়নি স্মিথের। ২০৭ বলে ২১ চার ও ৪ ছক্কায় ১৮৪ রানে অপরাজিত থাকেন এই ব্যাটসম্যান।
ভারতের হয়ে সিরাজ ৬টি ও আকাশ ৪টি উইকেট নেন।
বিশাল লিড নিয়ে ব্যাটিং করতে নেমে ভারত উদ্বোধনী জুটিতে ৫১ রান পায়। এরপর পেসার টংয়ের বলে এলবিডব্লিউ হন ইয়াসভি জয়সওয়াল। দিনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দেন রাহুল (২৮) ও করুণ নায়ার (৭) ।
আগামীকাল ম্যাচের চতুর্থ দিনের উপর নির্ভর করবে টেস্টের গতিপথ। প্রথম টেস্ট হারায় ভারত পিছিয়ে আছে। এজবাস্টনে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা সেটাই দেখার।
ঢাকা/ইয়াসিন