উপসাগরীয় দেশগুলো ইসরায়েলকে থামাতে পারবে?
Published: 19th, May 2025 GMT
গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর ছিল বিভ্রান্তির এক মহড়া। যুক্তরাষ্ট্র এবং এই অঞ্চলের মধ্যকার সম্পর্কে পুনরায় ভারসাম্য নিয়ে আসা ও দ্বিধাগ্রস্ত ধারণা; উভয় ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য। রিয়াদে তিনি সৌদি রাজপরিবারকে বলেছিলেন, ‘কীভাবে জীবন যাপন করতে হয়, সে ব্যাপারে আর কোনো বক্তৃতা’ দেওয়া হবে না। তিনি সিরিয়া থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন, যাতে দেশটি ‘নতুনভাবে শুরু’ করতে পারে এবং তিনি উট ও বিলাসবহুল স্থাপত্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। ‘একজন নির্মাণকারী হিসেবে ‘তিনি কাতারি প্রাসাদের ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘এটি নিখুঁত মার্বেল’।
জো বাইডেন জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড এবং ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি সরকারের ভূমিকার জন্য কঠোর অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর মনে হয়েছিল, তিনি তা ভুলে গেছেন অথবা বুঝতে পেরেছেন– তিনি কথা রাখতে পারবেন না। ট্রাম্পের কাছ থেকে এমন কোনো মিশ্র ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। যেমন: আপনি ধনী, আমাদের আপনাকে প্রয়োজন। আপনি আপনার মতোই থাকতে পারবেন।
ফলাফল হলো সমান লেনদেন নিয়ে আসা; বিলিয়ন ডলারের চুক্তি এবং লাভের বিনিময়ে দু’পক্ষের সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী লেনদেন বিন্যাস করা। ট্রাম্প তিনটি উপসাগরীয় দেশ সফর করেছিলেন। এগুলো হলো কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব। দেশ তিনটির অর্থনৈতিক রূপান্তরে বিশাল জাতীয় প্রকল্প এবং বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতি ট্রাম্পের স্বীকৃতি দেওয়ায় তাদের সেটি দেখার আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছিল। এই বাসনা কেবল ধনী অজ্ঞ হিসেবেই নয়, বরং নিজেদের প্রচেষ্টায় ক্ষমতার অত্যাধুনিক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য।
কিন্তু ট্রাম্পের সফরে একটি মৌলিক ফাঁক রয়েছে, যা গত সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক ঘোষণার কিছু অংশে ধরা পড়েছে। ইসরায়েল যখন গাজায় তার হামলা তীব্র করে তুলেছে, যার মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনায় তাদের আগ্রহের অভাব নির্দেশ করে। এ সময় চারদিকে জোরালোভাবে হামলার নিন্দা জানানো হয়। যখন ট্রাম্পকে মার্কিন পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়েছিল, তখন একটি স্পষ্ট বিষয় তুলে ধরা হয়নি। আর তিনি এমন একটি দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যারা এই অঞ্চলে সামরিক অভিযানে অস্ত্র সরবরাহ ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
পুরো ভ্রমণের বৈশিষ্ট্য ছিল এক বিচ্ছিন্নতা। উদীয়মান শক্তিগুলোর একটি ব্লকের সব জোরালো ভাষা ও চিত্রকল্পের মধ্যে যে প্রশ্নটি রয়ে গেল সেটি হলো, এই উঠতি শক্তি ঠিক কী কারণে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি কি কেবল সেই ক্ষমতা, যা এই রাষ্ট্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও অনুকূল বাণিজ্যিক সম্পর্কের মাধ্যমে তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী করার অধিকার দেয়? আর তাদের নিন্দা বা ‘বক্তৃতা’ দেওয়ার ভয় ব্যতিরেকে তাদের নিজস্ব জমিতে বৈদেশিক নীতির সুবিধামতো ব্যবহার এবং প্রকল্পগুলো অনুসরণ করার অনুমতি দেয়? নাকি এমন ক্ষমতা যা রাজনৈতিক ফলাফলকে অর্থপূর্ণভাবে প্রভাবিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের পথ পরিবর্তন করতে রাজি করাতে পারে। এটি এমন এক বিষয় যা এখন কেবল মধ্যপ্রাচ্যের নয়, বরং আরব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
যুদ্ধ এখন লেবানন ও সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে; জর্ডান ও মিসর চরম চাপের মধ্যে। ট্রাম্প এখনও গাজা থেকে মানুষকে ‘পুনর্বাসন’ করার লক্ষ্যে তাঁর জাতিগত নির্মূল পরিকল্পনাটি ক্রয় করেই চলেছেন। এখন লিবিয়ার পালা। আর যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে তাঁর প্রশাসনের প্রাথমিক দিনগুলোতে যে গতি দেখা গিয়েছিল, তার এখন অস্তিত্ব নেই। কারণ ইসরায়েল গাজার অন্যান্য অঞ্চল দখল করার জন্য অভিযান তীব্র করছে। একদিকে উপসাগরজুড়ে বিলাসবহুল দৃশ্যের উন্মোচন এবং মার্বেলের গুণমান নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য, অন্যদিকে কয়েক মাস ধরে গাজায় কোনো খাবার, পানি বা ওষুধ প্রবেশ করতে না দেওয়ার ঘটনা।
যদি এই শক্তিগুলোর এখনও তাদের নিজেদের আঙিনায় কী ঘটছে তা নিয়ন্ত্রণ করা এবং এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ স্থিতিশীল ও নির্ধারণের ক্ষমতা না থাকে; অথবা যেখানে তাদের অন্য আরবদের ক্ষুধা, বাস্তুচ্যুতি ও নির্যাতন থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা এবং দায়িত্ব রয়েছে, সেখানে যদি প্রকৃতপক্ষে তারা নেতৃত্ব গ্রহণ না করে, তাহলে এটি অর্থনৈতিক সাফল্যের একটি বিস্তৃত নাটক। কথার চেয়ে কাজ বড়। প্রকৃতপক্ষে বক্তৃতা দেওয়ার চেয়ে নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ।
নাসরিন মালিক: গার্ডিয়ানের কলাম লেখক;
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর
ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
একঝলক (৩ নভেম্বর ২০২৫)
ছবি: আবদুর রহমান