ইতালিয়ান ক্লাব এএস রোমার নতুন কোচ হিসেবে শোনা যাচ্ছে লিভারপুলের সাবেক কিংবদন্তি কোচ জার্গেন ক্লপের নাম। ইতালির শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম লা স্তাম্পার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ক্লদিও রানিয়েরির বিদায়ের পর রোমার ডাগআউটের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন এই জার্মান কোচ।
যদিও এখন পর্যন্ত ক্লাবটির পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে ইতালির বিভিন্ন সূত্র বলছে, আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এমনকি ক্লপ নাকি ইতোমধ্যেই সবুজ সংকেতও দিয়ে দিয়েছেন রোমার দায়িত্ব নিতে।
মাত্র কয়েক মাস আগেই লিভারপুলকে আবেগঘন বিদায় জানিয়ে ক্লপ বলেছিলেন, তিনি দীর্ঘ সময় কোচিং থেকে বিরতিতে থাকতে চান। বিদায়ের সময় লিভারপুল সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, 'আমি ক্লান্ত, এবার আমি নিজেকে সময় দিতে চাই।'
কিন্তু সেই ক্লপই এবার হয়তো দ্রুতই আবার কোচিংয়ে ফিরছেন। বিদায়ের ছয় মাস না যেতেই তিনি চুক্তি করেছিলেন রেড বুল ফুটবল গ্রুপের সঙ্গে, যেখানে তার দায়িত্ব ছিল সংস্থাটির বিভিন্ন ক্লাব প্রজেক্ট তদারকি করা। সেই দায়িত্বে বেশিদিন থাকা হয়নি। নতুন গুঞ্জন বলছে, এবার সিরি আ’র ক্লাব রোমার হাল ধরছেন তিনি।
এর আগে ক্লপ জার্মান ক্লাব মেইনজ ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে সাফল্যের সাথে কাজ করেছেন। পরে লিভারপুলে এসে ইতিহাস তৈরি করেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপসহ জিতেছেন একের পর এক ট্রফি।
তবে এখনো ক্লাব কিংবা কোচের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, সবকিছু ঠিক থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই ঘোষণা দিতে পারে রোমা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সৌদি আরবে এক দশকে মাদক পাচারের অপরাধে ৬০০ জনের মৃত্যুদণ্ড, অধিকাংশই বিদেশি
সৌদি আরব গত এক দশকে মাদকসংক্রান্ত অপরাধে যে পরিমাণ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে, তা রীতিমতো ‘আতঙ্কজনক’। এসব মানুষের অধিকাংশই বিদেশি নাগরিক। এমনটাই জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
অ্যামনেস্টির তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে মাদকসংশ্লিষ্ট অপরাধে প্রায় ৬০০ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশই ছিলেন পাকিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, নাইজেরিয়া ও মিসরের মতো দেশ থেকে আসা বিদেশি নাগরিক।
২০২১ ও ২০২২ সালে অস্থায়ীভাবে মাদকসংশ্লিষ্ট মৃত্যুদণ্ড বন্ধ রাখার পর ২০২৪ সালে এই সংখ্যা আবার রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে যায়। শুধু ২০২৪ সালেই ১২২ এবং চলতি বছর (জুন পর্যন্ত) আরও ১১৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি বলছে, এসব মৃত্যুদণ্ড ‘অন্যায্য বিচার’ এবং ‘মানবজীবনের প্রতি নিদারুণ অবহেলার’ মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। এসব মৃত্যুদণ্ডের ঘটনায় খুব কমই আন্তর্জাতিক নজরদারি রয়েছে। সংগঠনটি সতর্ক করে বলেছে, এভাবে চলতে থাকলে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা আরও বাড়বে।
অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষক ডানা আহমেদ বলেন, ‘আমরা এক ভয়ংকর প্রবণতা দেখছি। বিদেশিদের এমন অপরাধে অপ্রত্যাশিত হারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, যেসব অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধানই থাকা উচিত নয়।’
ডানা আরও বলেন, সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা করানো এমনিতেই কঠিন। কারণ, দেশটির অর্থ ও রাজনৈতিক প্রভাব অনেক বেশি। এখন মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে এই নজরদারিও আরও কমে গেছে।
অ্যামনেস্টি বলেছে, অনেক বিদেশি কাজের খোঁজে সৌদি আরবে গিয়ে মাদক পাচারের ফাঁদে পড়েন। তাদের ঠকানো হয় এবং অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়। তাদের যেটুকু আর্থিক লাভ দেওয়া হয়, সেটি মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকির তুলনায় একেবারেই নগণ্য।
একটি ঘটনায় দেখা গেছে, সাতজন ইথিওপীয় এবং একজন সোমালি নাগরিককে ১৫৩ কেজি গাঁজা পাচারের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই মাদকের বাজারমূল্য প্রায় ৩৮ লাখ ডলার হলেও আদালতে তারা বলেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে মাত্র ২৬৭ মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
অ্যামনেস্টি আরও বলেছে, যেসব বিদেশি দরিদ্র, কম শিক্ষিত এবং সামাজিকভাবে পিছিয়ে, তাঁরা সহজেই প্রতারণার শিকার হন এবং সৌদি আরবে আইনগত সহায়তা পাওয়াও তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অনেকেই আইনজীবী পাননি। নিজ দেশের কূটনৈতিক সহায়তা খুবই কম ছিল এবং প্রয়োজনীয় দোভাষী সুবিধাও পাননি।
অন্তত চারটি ঘটনার নথিতে দেখা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বলেছেন, তাঁদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়।
আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো অনেক বন্দী জানতেনই না, তাঁদের আপিলের কী অবস্থা বা কবে তাদের ফাঁসি হবে। কিছু ব্যক্তিকে তো মৃত্যুর এক দিন আগে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, পরদিন তাঁদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
অ্যামনেস্টির আঞ্চলিক উপপরিচালক ক্রিস্টিন বেকারলে বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড হলো সবচেয়ে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অবমাননাকর শাস্তি।’
মৃত্যুদণ্ড কার্যক্রম বন্ধ করতে এবং মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলতে সৌদি আরবের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।