এরদোয়ানের গদি বাঁচাতেই কি পিকেকে ভাঙছে
Published: 20th, May 2025 GMT
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সশস্ত্র বিদ্রোহী আন্দোলন হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেছে। তুরস্ক সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম হামলার প্রায় চার দশক পর কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) তাদের সংগঠন ভেঙে দেওয়ার এবং অস্ত্র পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে শুধু তুরস্ক নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোচড় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে আবদুল্লাহ ওজালানের নেতৃত্বে পিকেকে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন। সংগঠনটি শুরু থেকেই একটি স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছিল। পাশাপাশি তুরস্কে বসবাসকারী কুর্দিদের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করাও তাদের উদ্দেশ্যের অংশ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের কিছু অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পিকেকের নেতাদের সহিংসতা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।
প্রথমে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকানো যাক। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইতিমধ্যেই দুটি মেয়াদ শেষ করেছেন এবং তিনি তৃতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে চান। এ জন্য তাঁকে তুরস্কের সংবিধান সংশোধন করতে হবে অথবা পার্লামেন্টকে আগাম নির্বাচনের জন্য রাজি করাতে হবে। এই দুটি পথেই তাঁর সরকারের অতিরিক্ত রাজনৈতিক সমর্থন দরকার। এই সমর্থন বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট—জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) এবং কট্টর জাতীয়তাবাদী দল ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি (এমএইচপি) দিতে পারছে না।
সমর্থনের এই ঘাটতি পূরণ করতে পারে তুরস্কের তৃতীয় বৃহত্তম দল পিপলস ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ডেমোক্রেসি পার্টি (ডিইএম)। দলটি কুর্দিপন্থী।
আন্তর্জাতিক পটভূমিও পিকেকের এই আত্মবিলুপ্তির সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রেখেছে। গত ডিসেম্বর মাসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হন। আসাদ তুরস্ককে দুর্বল করতে পিকেকে যোদ্ধাদের ব্যবহার করতেন। কিন্তু আসাদ সরকারকে উৎখাত করে সিরিয়ায় এখন যে নতুন সরকার এসেছে, তারা পিকেকের প্রতি আসাদের মতো সহানুভূতিশীল নয়। পিকেকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী যে সংগঠনগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র এত দিন মদদ দিয়ে এসেছে, তাদের কাছ থেকেও যুক্তরাষ্ট্র এখন ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। পিকেকের সহযোগী সংগঠনগুলো একসময় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল।
পিকেকে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত তুরস্কের জন্য একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে। পিকেকের সন্ত্রাসবাদ থেকে সদ্য পাওয়া মুক্তিকে ধরে রাখতে হলে, তুরস্কের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এই প্রচেষ্টা শুধু তুরস্কের জন্য নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে পারে। এটি দেখাতে পারে যে রাজনৈতিক বিদ্রোহ বা সহিংসতা বন্ধ হলে তা দীর্ঘস্থায়ী ও অংশগ্রহণমূলক শান্তির পথ তৈরি করতে পারে।সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কুর্দি গোষ্ঠীগুলোকে, বিশেষ করে সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসকে (এসডিএফ) প্রায় নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করলেই ভালোভাবে রক্ষা করা সম্ভব। আরেকটি বিষয়, যেটি খুব একটা আলোচিত হয় না; কিন্তু পিকেকের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে, সেটি হলো তুরস্কের সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়ানোর লক্ষ্যে ড্রোনপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার। বিশেষ করে, এই ড্রোন দিয়ে তুরস্ক পিকেকের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, এমনকি ইরাকের গভীর অঞ্চলেও।
এর ফলে পিকেকের সামরিক ও কৌশলগত কার্যক্ষমতা অনেকটাই দুর্বল হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি হয়তো তাদের বাধ্য করেছে পুরো বিদ্রোহী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে। এসব কারণ মিলিয়ে তুরস্কের জন্য একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে, যার মাধ্যমে সহিংসতার পথ ছাড়াই কুর্দি সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করা যেতে পারে। তবে অস্ত্রের যুগ থেকে শান্তি ও সংহতির যুগে সফলভাবে প্রবেশ করতে হলে এরদোয়ানের সরকারকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দায়িত্ব নিতে হবে।
প্রথমত দরকার স্বচ্ছতা। পিকেকে বহু বছর ধরে সহিংসতা চালিয়ে এসেছে, ফলে তুরস্কের সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের প্রতি ক্ষোভ স্বাভাবিক। তাই তুরস্ক সরকার ও পিকেকের মধ্যে যে আলোচনা হবে, তা স্পষ্টভাবে ও খোলাখুলি প্রকাশ করা খুব জরুরি। বিশেষ করে পিকেকেকে কোন বিষয়ে ছাড় দেওয়া হবে, সেটা মানুষকে জানানো দরকার। যেমন সিরিয়ার সশস্ত্র সংগঠন ওয়াইপিজি যেটি পিকেকের সঙ্গে সম্পর্কিত—তারা অস্ত্র ছাড়বে কি না, সেটাও বড় প্রশ্ন। এই প্রক্রিয়া খুব সংবেদনশীল, তাই এতে তুর্কি পার্লামেন্ট, বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিত।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো গণতন্ত্র। এই ঐতিহাসিক শান্তির সুযোগ তখনই সফল হবে, যদি তা প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে হয়—যার মধ্যে থাকবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা এবং মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা আরও জোরদার করার মতো কার্যকর পদক্ষেপ।
এরদোয়ানের সরকার চাইলে এ বিষয়ে দ্রুত কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারে। যেমন ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের সাম্প্রতিক আদেশ মেনে কুর্দি রাজনৈতিক নেতা সেলাহাত্তিন দেমিরতাশকে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে একটি বড় বার্তা দেওয়া সম্ভব। যখন ওজালানকে মুক্তির চিন্তা হচ্ছে, তখন সরকারের উচিত অন্য রাজনৈতিক বন্দীদের বিষয়েও খেয়াল রাখা। যেমন ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলু ও ভিক্টোরি পার্টির নেতা উমিত ওজদাগের অবস্থার দিকেও নজর দেওয়া দরকার।
পিকেকে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত তুরস্কের জন্য একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে। পিকেকের সন্ত্রাসবাদ থেকে সদ্য পাওয়া মুক্তিকে ধরে রাখতে হলে, তুরস্কের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এই প্রচেষ্টা শুধু তুরস্কের জন্য নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে পারে। এটি দেখাতে পারে যে রাজনৈতিক বিদ্রোহ বা সহিংসতা বন্ধ হলে তা দীর্ঘস্থায়ী ও অংশগ্রহণমূলক শান্তির পথ তৈরি করতে পারে।
● সিনান উলগেন ইস্তাম্বুলভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইডামের পরিচালক
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য একট ত রস ক র স র জন ত ক ব শ ষ কর এরদ য় ন য র জন দরক র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারকে জনমতের তোয়াক্কা করতেই হবে
গত বছর একটি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশের মানুষ এখনও অনেকটা গোলকধাঁধায়। কী হচ্ছে দেশে? কেন হচ্ছে? কার সিদ্ধান্তে হচ্ছে– সব কিছু এখনও যেন কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। প্রতি মাসেই কমবেশি মামলা হচ্ছে; শত শত বিবাদী; বেশির ভাগ মামলার বিষয় হত্যা বা হত্যাচেষ্টা। আসামি প্রধানত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। তাদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে সাংবাদিক ও সংস্কৃতি অঙ্গনের লোকজনকে।
তেমনই এক মামলার ২০৭ নম্বর আসামি অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া, যদিও ওই হত্যাচেষ্টার বহু আগেই তিনি অনুষ্ঠানের জন্য কানাডায় চলে যান; ফিরে আসেন আন্দোলন শেষ হওয়ার বহু দিন পর। রোববার থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, যদিও মঙ্গলবার সম্ভবত জনমতের চাপে তিনি জামিন পেয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হলো আমাদের ছাত্র সাম্য। আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। সেসবে আগ্রহ কম সরকারের। তিন ভবঘুরেকে গ্রেপ্তারের পর যাদের বিরুদ্ধে আসল সন্দেহের তীর, তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সম্ভবত সেখানে ‘কাছে টানা-দূরে ঠেলা’র রাজনীতি আছে।
আন্দোলন করতে গিয়ে কেউ খাচ্ছে কাঁদানে গ্যাস, পুলিশের লাঠিপেটা, কেউ পাচ্ছে গ্রীষ্মের তাপদাহ থেকে বাঁচতে শীতল পানিছিটা, সঙ্গে তেষ্টা মেটাতে বিশুদ্ধ খাবার পানি। কী একটা অবস্থা! কোনো কিছু দিয়েই এসবের ব্যাখ্যা মিলছে না। কে কখন কার শত্রু বা বন্ধু হয়ে যাচ্ছে, সেটিও বোঝা যাচ্ছে না।
গত আগস্টে শোনা গিয়েছিল, এই গণঅভ্যুত্থান ছাত্র-জনতা, শ্রমিক, কৃষক সবার। দু-এক মাস পরই শুরু হলো আন্দোলনের মালিকানা নিয়ে টানাটানি। বিশেষ করে গত সেপ্টেম্বরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে এক অনুষ্ঠানে যখন মাহফুজ আলমকে (তখন তিনি ছিলেন উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী) আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন, তখন থেকেই অনেক বিষয় যেন খোলাসা হতে শুরু করে। বিএনপি দাবি করল– আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তারেক রহমান। জামায়াত ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির দাবি করল– কর্মসূচি প্রণয়ন, ছাত্রনেতাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, এমনকি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি লেখা ও পাঠানো পর্যন্ত সব কাজ তারাই করেছে। রাজনৈতিক মঞ্চে এখন অনেক কুশীলব। যে ছাত্ররা আন্দোলনের সময় সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিল, তারা ম্লান হতে শুরু করল।
শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছিল। ডান-বাম সবাই। অনেক আওয়ামী সমর্থকও একে সমর্থন করেছেন। কর্তৃত্ববাদী শাসন, একের পর এক নিজেদের মতো নির্বাচন, বাকস্বাধীনতা হরণসহ আওয়ামী স্বেচ্ছাচারিতায় সবাই হাঁসফাঁস করছিল। সব শেষে যুক্ত হলো জুলাই হত্যাকাণ্ড। এখন আর সেই ‘কমন’ শত্রু নেই। সবাই তাই নিজের মতো ক্ষমতায় যেতে চায়।
বিএনপিকে এখন জামায়াত, হেফাজত এবং সরকারের অঘোষিত সমর্থক হিসেবে এনসিপিকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। জামায়াত চায় বিএনপি ও বাম বাদে অন্য সবার সমর্থন। চলার শুরুতেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, গাড়িবহর নিয়ে নেতাদের এলাকায় শোডাউন এবং জামায়াতের লোকবলের ওপর নির্ভরতার কারণে এনসিপি জনগণের চিন্তায় খুব বেশি নেই। সরকারের চাওয়া অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের আন্দোলন এবং বিএনপিকে খোঁচাখুঁচি করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেওয়া ছাড়া এনসিপি নেতাদের আর কোনো কাজ আছে বলে মনে হয় না।
সরকারিভাবে আলোচনার সুযোগ না দিলেও রাজনৈতিক আলোচনায় গত কয়েক মাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ-আরাকান করিডোর এবং দেশের সবচেয়ে লাভজনক চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের ব্যবস্থাপনা বিদেশি সংস্থার কাছে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত। এখন পর্যন্ত বিএনপি জোরালোভাবে এতে আপত্তি জানিয়েছে। সিপিবি-বাসদ ও তাদের মিত্র কয়েকটি বাম দল এসবের বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ করেছে। আর কোনো দল ও সংগঠন কিছু বলছে না। এমনকি বিগত সময়ে এ বিষয়ে সোচ্চার ছিল যে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, তারও খুব বেশি নড়াচড়া নেই।
করিডোর প্রসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, ‘কে কী বলে, তাতে কিছু আসে যায় না।’ কর্তৃত্ববাদী এ ভাষা বিগত সময়ে বহুবার শুনেছি আমরা। এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের সরকার। তাই কেউ প্রশ্ন তুললে সেটা তাদের ‘আসতে-যেতে’ হবে অবশ্যই। মিয়ানমার সরকার এই করিডোর চাচ্ছে না– স্পষ্ট জানান দিয়েছে তারা। তাহলে করিডোর কে চাচ্ছে? কারা চাচ্ছে? কেন চাচ্ছে? এগুলো তো আমাদের জানতে হবে। সরকার যদি না জানায়, তাহলে তারা কার পক্ষের– এর উত্তর বের করতে নিরাপত্তা বিশ্লেষক হতে হয় না।
বাম দলগুলো প্রতিবাদ করাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, বামপন্থিরা দেশটাকে ‘বনসাই’ করে রাখতে চায়। অনেকটা প্রতিবাদী নারীদের নিয়ে জামায়াত-হেফাজতের মন্তব্যের মতো হলো না? নারীরা যখন জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিল; মাঝরাতে হল থেকে রুমের পোশাক পরেই মিছিলে এসেছিল; তখন হেফাজত, জামায়াত কোনো কিছু বলেনি। কারণ তখন তাদের নারীদের দরকার। কিন্তু যখন নারীরা ন্যায্য হিস্যা বা অধিকার চাইল, তখনই তাদের পাবলিক পরিসরে ‘বেশ্যা’ গালাগাল শুরু হলো। সে রকমই বামদের সহযোগিতায় আন্দোলন হলে তার সুফল ভোগ করতে প্রেস সচিবের সমস্যা নেই। কিন্তু বামদের কোনো কথা তাদের বিপক্ষে গেলেই সমস্যা। তখনই ‘বনসাই’। এর আগে আরেকজন উপদেষ্টা ‘মুজিববাদী’ বামদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে হুঁশিয়ার করেছেন। যতক্ষণ আমার পক্ষে কথা বলবে সে ‘ভালো’– সে ডান হোক আর বাম হোক। আর আমার পক্ষের না হলেই তাকে তকমা দিয়ে ফ্যাসিবাদের ‘দোসর’ বানিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা!
বাংলাদেশের ডানপন্থি দলগুলো মোটামুটি সমআদর্শের হলেও, নানা কারণে বাম দলগুলো সমজমিনে থাকতে পারে না। তারা নানা ঘরানার। তাই আমার পক্ষের বামেরা ভালো, অন্য বামেরা দেশের শত্রু। এগুলো আওয়ামী লীগ সরকারও করত। সবই তো তাদের নকল বলে মনে হচ্ছে। তাই জোর দিয়েই বলছি– জনমতের তোয়াক্কা করতেই হবে। এখানে পক্ষ কিন্তু একটা, আর তা হলো দেশ।
ছোটবেলায় নির্বাচনের স্লোগান শুনতাম– দক্ষ দেখে পক্ষ নিন। বাংলাদেশের দক্ষতাকে সম্মান করুন। তাই পক্ষ এখানে বাংলাদেশই। তাই তো স্লোগান ওঠে– ‘মা মাটি মোহনা, বিদেশিদের দেব না’। এই স্লোগানের গুরুত্ব দিতেই হবে।
জোবাইদা নাসরীন: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
zobaidanasreen@gmail.com