গলায় যেন সুর নয়, আগুন, চোখে স্বপ্নের স্ফুলিঙ্গ। বলছি, মাইনুল আহসান নোবেলের কথা। কোনো পুরস্কার নয়, বরং নিজেই এক প্রতিশ্রুতির নাম। তার গাওয়া ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটি শুনে অনেকে বলেছিলেন— “নতুন জেমস এসে গেছে।” দুই বাংলার মানুষ যখন তার কণ্ঠের জাদুতে উন্মাদ, তখন কেউ ভাবতেও পারেননি, সেই নাম একদিন জায়গা করে নেবে থানার ডায়েরি, চার্জশিট আর নারীর কান্নায়!
তার গল্পটা যেন ঢালিউডের কোনো বাজে ফ্লপ সিনেমা— শুরুতে বাজেট কম, মাঝখানে কিছু উত্তেজক দৃশ্য, আর শেষে থানা-পুলিশ। এটা কোনো শিল্পীর জীবন নয়, বরং এক জোকারের আত্মজৈবনিক স্ক্রিপ্ট— যেখানে গান মানে শো শুরু হওয়া, আর গ্রেপ্তার মানেই পর্দা নামা।
নোবেল যেন সেই ট্র্যাজিক শিল্পীচরিত্র, যে অহংকারে নিজের শেষ অধ্যায়টাও নিজেই লিখে ফেলেন। জি বাংলার মঞ্চে ছিল তার সূর্যোদয়, কিন্তু আলোয় নয়— সরাসরি আগুনে। ভারতের জাতীয় টেলিভিশনে যখন এক বাংলাদেশি তরুণের গান শুনে কোটি বাঙালির চোখে জল, তখন মনে হচ্ছিল, এই তো শিল্পের জয়। তার গলায় ছিল দেশপ্রেম, প্রতিবাদ আর প্রেম। কিন্তু সেই সুর কোথায় হারিয়ে গেল? কেন তিনি গানের মঞ্চ থেকে নেমে এলেন কাঁটাতারে মোড়া বিতর্কের ভিড়ে?
আরো পড়ুন:
ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার নোবেল, যা বললেন প্রাক্তন স্ত্রী
পরিস্থিতি-ব্যবস্থা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন: বাঁধন
নোবেল বলেছিলেন— প্রিন্স মাহমুদের ‘বাংলাদেশ’ গানটাই জাতীয় সংগীত হওয়া উচিত। তিনি বোঝেননি—জাতীয় সংগীত কেবল গান নয়, এটি একটি জাতির আত্মা। সেই আত্মায় আঘাত করে হয়তো আলো খুঁজতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ফিরে পেলেন শুধুই আগুন।
কভার গান দিয়ে বিখ্যাত নোবেল নিজের গানে অনুপস্থিত। কখনো গাইলেন সামসুল হকের কথায়, কখনো লালনের ভাষা। কিন্তু নিজের লেখা বা সুরে একটি গান দিয়েও মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা তৈরি করতে পারলেন না। জনপ্রিয়তা এলো, কিন্তু স্থায়িত্ব পেল না। হঠাৎ পাওয়া খ্যাতির ঢেউ তাকে এমন এক ঘূর্ণিতে ফেলল, যেখান থেকে ফিরে আসতে হলে দরকার বিনয়, ধৈর্য ও শিল্পসাধনা। কিন্তু তিনি বেছে নিলেন বিতর্ক, অহংকার আর আত্মবিনাশ।
নারী, নেশা আর নষ্ট আলোর পেছনে ছুটেচলা এক ভাইরাল শিল্পীর নাম নোবেল। পতনের গল্প সবসময়ই নাটকীয়। আর তারটা যেন রীতিমতো থ্রিলার! এক কিশোরী ফেসবুকে তাদের সম্পর্কের বিবরণ প্রকাশ করে দিল, সঙ্গে নগ্ন ছবি। পরের অধ্যায়ে এক তরুণীর অভিযোগ, সাত মাস আটকে রেখে ধর্ষণ! যেন গানের নায়ক হয়ে উঠলেন সিনেমার খলনায়ক।
নারীলোভী এই শিল্পী একাধিক অনৈতিক সম্পর্ক, দাম্পত্য কলহ ও মাদকাসক্তির কারণে প্রায়ই বিতর্কে থাকেন! ২০১৯ সালে সালসাবিল মাহমুদকে বিয়ে করে আলোচনায় আসেন নোবেল। সেই সংসারও টেকেনি। কারণ হিসেবে উঠে আসে তার মাদকাসক্তি। ২০২৩ সালের শেষ দিকে আবার বিয়ের খবরে শিরোনামে আসেন। সাবেক স্ত্রী সালসাবিল বলেন, “নোবেল মাদকাসক্ত”। একটি সম্পর্কের ভাঙন নয়, যেন এক সময়ের সম্ভাবনাময় কণ্ঠের ছিন্ন স্বর।
নোবেল ভুলে গিয়েছিলেন, শিল্পী মানে কেবল তারকা হওয়া নয়। তারকা হওয়া মানে আলোয় থাকা, আর শিল্পী হওয়া মানে সেই আলো নিজেই সৃষ্টি করা। তিনি খুঁজেছিলেন শর্টকাট— গান না গেয়ে কভার, শ্রোতা না গড়ে ফলোয়ার, আর সৃষ্টির বদলে স্ক্যান্ডাল।
ফেসবুক লাইভ, ইউটিউবে অদ্ভুত স্টেটমেন্ট, গড়গড় শব্দে ধোঁয়াশা ছড়ানো বাক্য— সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন ভাইরাল পুরুষ। কিন্তু ভাইরাল জ্বর যেমন সহজে আসে, তেমনি চলে যায়। আর তার সংগীতজীবনও ঠিক সেভাবেই বিলীন হয়ে গেল সময়ের ধুলিতে।
সে ফিরবে কি না— তা কেউ জানেন না। কিন্তু নোবেলের গল্প আমাদের শিখিয়ে দেয়, গলার জোর থাকলেই শিল্প হয় না, দরকার হৃদয়, বোধ আর মানসিক ভারসাম্য। আলোচনায় নয়, শিল্পী খুঁজে নেয় শিকড়ের মাটি। আর নোবেল সেই শিকড় নিজেই বারবার কেটে দিয়েছেন।
নোবেলের জীবনে গানের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে গ্ল্যামার, বিভ্রান্তি আর বিকৃতি। তবুও যারা শিল্প ভালোবাসেন, জানি— একটি ভাঙা প্রতিভাও কোনো একদিন চোখে জল এনে দিতে পারে। কিন্তু সেই জল যেন এখন আর সুরে নয়, বরং এক নিঃশব্দ আক্ষেপেই ঝরে পড়ে। যদি শিল্প না বুঝে শিল্পে নাম লেখান, তাহলে গলায় সুর থাকবে, কিন্তু মুখে থাকবে শুধুই মামলা নাম্বার।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত