একই ব্যক্তির একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হওয়া বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, ‘দিস ইজ দ্য বিগেস্ট কালপ্রিট আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য।’

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ‘প্রস্তাব থেকে বাস্তবতা: কমিশন প্রতিবেদন পুনর্মূল্যায়ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিকস (দায়রা) এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা অনেকটা সিভিল সোসাইটির মতো। তারা যখন নির্বাচন করে, তখন একটা ইশতেহার দেয় এবং তা বাস্তবায়নের জন্যই প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়। প্রার্থীরা ইশতেহার বাস্তবায়নের জন্যই নির্বাচিত হয়ে আসেন। তাই যিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি যেন দলের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন, সেই বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোতে থাকতে হবে।

নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নিরপেক্ষ জনবল খুঁজতে দুটি প্রস্তাব করেছেন তাঁরা। প্রথমটি সর্বদলীয় সার্চ কমিটি। যেখানে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব এবং নাগরিক প্রতিনিধির অংশগ্রহণ থাকবে। আর এর বিকল্প পদ্ধতি হলো এনসিসি (জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল)। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এনসিসি একটা ইনোভেশন এবং ভেরি অ্যাট্র্যাকটিভ।’

গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েক সাকি, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, আইনজীবী শিশির মনির, আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া, ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মির্জা এম এ হাসান, বিডি জবসের এমডি এ কে এম ফাহিম মাশরুর, রাজনৈতিক কর্মী সৈয়দ হাসিবুদ্দিন, এবি পার্টির যুগ্ম মহাসচিব নাসরিন সুলতানা মিলি প্রমুখ।

গোলটেবিলে বৈঠকে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দায়রার গবেষণা সহকারী ফারিহা আহমেদ। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

মারা গেছেন বাদী ও চার আসামি, ৩৫ বছরেও শেষ হয়নি অস্ত্র মামলার বিচার

চট্টগ্রামে একটি কলেজের গুদাম থেকে ককটেল, বিস্ফোরক ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার মামলার বিচার শেষ হয়নি ৩৫ বছরেও। ইতিমধ্যে মারা গেছেন মামলার বাদী, সাক্ষী ও চার আসামি। মামলার অন্যতম আসামি র‌্যাব-পুলিশের তালিকাভুক্ত ‘সন্ত্রাসী’ সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার (কাউন্সিলর) মামুনুর রশীদ মামুন ২২ বছর ধরে স্থগিতাদেশ নিয়ে আছেন। আড়াই বছর ধরে সেই আদেশটি উপস্থাপনের জন্য শুধু সময় চেয়ে যাচ্ছেন তাঁর আইনজীবী। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বর্তমানে বিচারাধীন মামলাটি। ১৪ সাক্ষীর মধ্যে নেওয়া হয়েছে মাত্র তিনজনের। সাক্ষীর জন্য মোট ২৫৮টি তারিখ পড়ে।

আইনজীবীরা জানান, অস্ত্র মামলায় ১৭ বছর একসঙ্গে চললে হবে ১০ বছর, আর বিস্ফোরক মামলায় সাজা হলে মৃত্যুদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবন। যাবজ্জীবন সাজার মেয়াদ ৩০ বছর। সেই হিসেবে আসামিদের সাজার মেয়াদই পার হয়ে গেছে, কিন্তু বিচার শেষ হচ্ছে না।

পুলিশ সূত্র জানায়, নিজ দলের নেতা-কর্মী খুন, দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার কার্যালয়ে ঢুকে সাংবাদিকদের মারধর, পুলিশের সহকারী কমিশনার বশির হত্যাসহ ২১টি মামলার আসামি মামুনুর রশীদ। ২০০০ সালে তিনি ওয়ার্ড কমিশনার (বর্তমানে কাউন্সিলর) নির্বাচিত হন। দলীয় চাপের কারণে ২০০১ সালে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। দুই বছর জেল খেটে ২০০৩ সালে জামিনে মুক্তি পান। ২০০৪ সালে র‍্যাব গঠনের পর ভারতে পালিয়ে যান। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় এলে দেশে ফিরে আসেন। এরপর রাজনৈতিক বিবেচনায় বেশির ভাগ মামলায় তাঁর নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় খালাস পান বাকি মামলায়।

ঘটনার শুরু ১৯৮৯ সালের ৭ অক্টোবর। সেদিন চট্টগ্রাম নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজ থেকে একদল লোক মাইক্রোবাসে করে গিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে গোলাগুলি করে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এমইএস কলেজের সংসদ কক্ষের পাশের একটি কক্ষে কলেজ গুদামের মাটির নিচে বস্তাবন্দী করে রাখা ১টি কাটা রাইফেল, একনলা বন্দুক, ২২টি ককটেল, ৪টি হাত বোমা, বোমা তৈরির বিস্ফোরক উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ডবলমুরিং থানার তৎকালীন এসআই সামসুল হক বাদী হয়ে সমীর দাশ, মো. জহির, অশোক চৌধুরী, মামুনুর রশীদ, জাহিদ হোসেন, চন্দন কুমার ভৌমিক, কনক, লোকমান হোসেনসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

চট্টগ্রামের এক অস্ত্র মামলায় চার আসামি ও বাদী মারা গেছেন, কিন্তু ৩৫ বছরেও শেষ হয়নি বিচার। ২২ বছর ধরে এক আসামির বিরুদ্ধে চলেছে স্থগিতাদেশ। সাক্ষ্যের জন্য পড়েছে ২৫৮টি তারিখ।

তদন্ত শেষে পুলিশ ১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি সমীর, জহির, মামুন, জাহিদ, কনক ও চন্দনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। দ্বিতীয় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে ছয় আসামির বিরুদ্ধে ২০০০ সালের ২৫ জুলাই অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। অভিযোগপত্রে সাক্ষী রয়েছেন মোট ১৪ জন।

২২ বছরে একজনেরও সাক্ষ্য হয়নি

অস্ত্র ও বিস্ফোরকের এই মামলায় ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র তিনজনের সাক্ষ্য হয়েছে। সর্বশেষ ২০০৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এই মামলায় সাক্ষ্য দেন ডবলমুরিং থানার তৎকালীন এসআই সুলতান আহমেদ। এরপর আর হয়নি। ১৪ জনের মধ্যে ১০ জনই পুলিশ সদস্য। বাকি চারজন এমইএস কলেজের তৎকালীন শিক্ষক মোর্শেদ কুলী খান ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যক্তি। এসব সাক্ষীদের হাজির করতে আদালত থেকে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে বারবার তাগাদাও চিঠি ইস্যু করা হলেও তাদের বর্তমান কর্মস্থলে পাওয়া যাচ্ছে না, পানিতে কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার তাঁদের শেষ কর্মস্থল জানা নেই বলে চিঠি দেওয়া হয়।

২০০০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য শুরু হয়ে ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২১১টি তারিখ পড়ে। এরপর ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত থেকে মামলাটি বদলি হয়ে আসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে। সেখানে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত তারিখ পড়ে ৪৬টি। অর্থাৎ সাক্ষীর জন্য মোট ২৫৮টি তারিখ পড়ে। হয়েছে মাত্র তিনজনের।

দীর্ঘদিন সাক্ষী হাজির না হওয়ায় আদালত ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর এই মামলার সাক্ষ্য সমাপ্ত করে আসামির পরীক্ষা ও যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য করেন। কিন্তু সেখানে বারবার সময় নেওয়া হচ্ছে। শেষ ৩ জুন ধার্য দিনে আবার সময় নেন আসামির আইনজীবী। পরে আদালত ২০ জুলাই পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন। এই পর্যন্ত যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য ১৫টি তারিখ পড়েছে। হাজির থাকা একমাত্র আসামি কনকের আইনজীবীও সময় নিচ্ছেন।

মামুনের বিচার স্থগিত যে কারণে

অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে মামুন ২০০৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ফৌজদারি মিস মামলা করলে আদালত তার বিচারিক কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর আদালত সেই স্থগিতাদেশের বিষয়ে বিস্তারিত আদেশ উপস্থাপনের জন্য নির্দেশে দেন। কিন্তু গত দুই বছর ধরে তার আইনজীবী শুধু সময় নিচ্ছেন এটি উপস্থাপনের জন্য।

জানতে চাইলে মামুনের আইনজীবী শেখ সরফুদ্দীন সৌরভ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা হাইকোর্ট থেকে কাগজপত্র জোগাড় করে উপস্থাপনের চেষ্টা করছি। স্থগিতাদেশ এখনো আছে কি না, জানি না। এ জন্য সময় নিচ্ছি।’

যুক্তিতর্ক শুনানিতে আসামি কনকের জন্য সময় নেওয়ার বিষয়ে শেখ সরফুদ্দীন বলেন,‘এটি পুরোনো মামলা। আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য তাই সময় নেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুনমহিউদ্দিনের গলায় '৪১ তালিকার' মামুনের মালা১২ ডিসেম্বর ২০১৪মারা গেছেন চার আসামি ও বাদী

মামলার ছয় আসামির মধ্যে জামিনে আছেন শুধু মামুন ও কনক। বাকির চার আসামি জাহিদ, সমীর, জহির ও চন্দন দীর্ঘদিন থেকে পলাতক। আসামিরা জীবিত নাকি মৃত, তা জানতে ২০২২ সালের ১০ আগস্ট তৎকালীন বিচারক পুলিশকে আদেশ দেন। তদন্ত শেষে একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানার এসআই সোমনাথ পাল আদালতকে জানান, সমীর দাশের ঠিকানায় যোগাযোগ করলে তাঁর ভাই সুমন কুমার দাস জানান, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। চন্দন কুমার ভৌমিকের আত্মীয় জানান, মারা গেছেন। ২০১৫ সালের ১৯ মে মারা যান জহির, যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান জাহিদ।

এদিকে মামলার বাদী ও সাক্ষী ডবলমুরিং থানার এসআই সামসুল হক মারা যান ২০০৭ সালের ৬ জানুয়ারি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আফাজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছি। পুরোনো এই মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা রয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাইকোর্ট বেঞ্চ বিভাগীয় শহরে স্থানান্তর না করতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন
  • শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ১০ জুলাই
  • শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ ১০ জুলাই 
  • মারা গেছেন বাদী ও চার আসামি, ৩৫ বছরেও শেষ হয়নি অস্ত্র মামলার বিচার
  • দুর্নীতি মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না জ্যাকুলিন
  • রংপুরে শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রে মানসিক-যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আদালতের মামলা