Samakal:
2025-07-07@09:02:22 GMT

অন্যের জমি বিক্রি করছিল তারা

Published: 23rd, May 2025 GMT

অন্যের জমি বিক্রি করছিল তারা

সাভারে রেলিক সিটি নামের একটি অবৈধ আবাসন কোম্পানি প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছে অন্যের জমি বিক্রি করছিল। অভিযোগ পাওয়ায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে রাজউক। কোম্পানিটি বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাদের ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর রাজারবাগ এলাকায় অভিযান চালায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ সময় রাজউকের লোকজন রেলিক সিটির সব সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড জব্দ করে। প্রতিষ্ঠানটির ভাড়া করা অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার জব্দের পাশাপাশি ভাড়া করা দুটি কক্ষে তালা ও একটি শেড গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে রাজউক। অভিযানের সময় ঘটনাস্থল উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক পরিচালক সাব্বির হোসেন।

জানা যায়, রাজারবাগ এলাকায় প্রথমে একটি বাড়ির দুটি কক্ষ ভাড়া নেয় রেলিক সিটি। এর পর আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের প্রায় দুই হাজার ৭০০ একর জমির ভুয়া লে-আউট দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়। ভুয়া কোম্পানিটি বৈশাখী অফার দিয়ে প্রবাসীসহ সাধারণ মানুষের কাছে প্রতারণার মাধ্যমে অন্যের জমি বিক্রি করছিল। কৃষি ও আবাসিক এলাকায় অবৈধ কোম্পানি করতে গিয়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে স্থানীয়দের ওপর হামলা-মামলা, হুমকি-ধমকিসহ বিবাদে জড়িয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী প্লট মালিক ও স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালায় রাজউক। 

রাজউকের এস্টেট ও ভূমি-৩ এর উপপরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লিটন সরকার বলেন, রাজউকের নিবন্ধনহীন আবাসন কোম্পানি রেলিক সিটির কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তারা এ এলাকার কিছু জমি কিনেছে অথবা বায়না করেছে। কিন্তু তারা প্রায় দুই হাজার ৭০০ একর জমির একটি লে-আউট নকশা তৈরি করে বিভিন্নজনের কাছে বিভিন্ন দামে প্লট বিক্রি করছে। 

লিটন সরকার বলেন, তারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালান। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক পরিচালককে পান। তিনি তাদের কাছে স্বীকার করেছেন, কোম্পানিটি ইতোমধ্যে কিছু জমি বিক্রি করেছে। দুই হাজার ৭০০ একর জমির লে-আউট নকশ করলেও রেলিক সিটির নামেমাত্র ১০ বিঘার মতো জমির কাগজপত্র দেখাতে পেরেছেন তিনি। যেহেতু রেলিক সিটির কোনো নিবন্ধন হয়নি, তাই এই প্রতিষ্ঠানের নামে তারা কোনোভাবেই প্লট বিক্রি করতে পারে না। এ জন্য তাদের যতগুলো সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড ছিল তা অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি এখানে যে অফিস ব্যবহার করছিল, সেটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার জব্দের পাশাপাশি অফিসটি বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের একটি শেডও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক পরিচালক তাদের দোষ স্বীকার করেছেন। এখন প্রতিষ্ঠানটি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এ ধরনের কার্যক্রম আর চালাবে না বলে অঙ্গীকারনামা দেবে।

লিটন আরও বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ থাকায় রাজউক তাদের নোটিশ করে। কিন্তু তারা নোটিশের জবাব দেয়নি। তাই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা চলমান রয়েছে।

ভুক্তভোগী কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, রেলিক সিটি তাদের ফসলি জমিতে সাইনবোর্ড দিয়েছে। তারা এলাকার কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী বাহিনী ভাড়া করেছে। তাই ভয়ে তারা নিজেদের ক্ষেতে যেতে পারেন না। প্রতিবাদ করায় তারা বাড়িঘরে হামলা ও মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করছে। 

অভিযোগের বিষয়ে রেলিক সিটির প্রশাসনিক পরিচালক সাব্বির হোসেন বলেন, কারও জায়গা তারা জোর করে দখল করেননি। অনেকেই তাদের কাছে জমি বিক্রি করার জন্য কাগজপত্র নিয়ে আসছে। তারা পর্যায়ক্রমে জমি বায়না করে বিক্রি করছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক গজপত র র জউক করছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভূমি অধিগ্রহণ না করেই কাজ

সাঁথিয়া উপজেলার গাগড়াখালী-সোনাতলা বাইপাস সড়ক উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছিল ছয় বছর আগে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগের অপ্রশস্ত সড়কের পাশে মাটি ফেলাসহ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে। সড়কের বর্ধিত অংশের বেশির ভাগই ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে কাজে বাধা দেন। তারা একজোট হয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতে মামলা করলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে সড়কটি খুঁড়ে রাখায় খানাখন্দে ভরে গেছে। বৃষ্টিতে বেহাল সড়কটি কাদাপানিতে সয়লাব। পাটগাড়ি এলাকায় কালভার্ট নির্মাণ করে ফেলে রাখা হয়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় সেটিও কোনো কাজে আসছে না। এতে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ পথে চলাচলকারী ৫০ হাজার মানুষ। 
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াই গাগড়াখালী-সোনাতলা বাইপাস সড়কের কাজ শুরু হয়। আট কিলোমিটারে  ব্যয় ধরা হয় ২৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কাজ পায় ঢাকার এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কাজের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। প্রথমদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের পাশে মাটি ফেলাসহ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে। 
গাগড়াখালি, ফেচুয়ান ও তেঘরি গ্রামের সড়কের বর্ধিত অংশের বেশির ভাগ জমিই ব্যক্তিমালিকানাধীন। মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কাজ শুরু করায় তারা বাধা দেন এবং ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করেন। এখনও মামলার চূড়ান্ত রায় হয়নি। এ কারণে কাজ বন্ধের জন্য আদালত থেকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বর্ধিত অংশ অধিগ্রহণের জন্য টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কাগজপত্র জমা দিয়ে ভূমিমালিকরা টাকা তুলে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নামমাত্র কয়েকজন জমির মালিক ক্ষতিপূরণ পেলেও অনেকেই পাননি। কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের কাগজপত্র সঠিক নয়। 
এ বিষয়ে জমির মালিক তেঘড়ি গ্রামের সৈয়দ গোলাম মওলা বলেন, ‘আমার কাগজপত্র সঠিক আছে। আমার মতো গাগড়াখালি, ফেচুয়ান ও তেঘরি গ্রামের ৩০ থেকে ৩৫ জনের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও তারা ক্ষতিপূরণ পায়নি।’ 
তেঘড়ি গ্রামের সৈয়দ গোলাম মাওলা, গোলাম রসুল, আব্দুস সাত্তার, আব্দুল ওহাব, গোলাম মোস্তফা, আব্দুল বারি, আলমগীর হোসেন, রিজিয়া খাতুনসহ কয়েকজন জমির মালিক বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট ক্ষতিপূরণ চেয়ে পাবনা আদালতে মামলা করেছি। ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাড়া পাইনি। ক্ষতিপূরণ পেলে মামলা তুলে নেব।’ 
মামলার বাদী ফেচুয়ান গ্রামের মকবুল হোসেন, সুজন হোসেন ও আজিজ খাঁ জানান, সড়ক হলে সবারই সুবিধা হয়। জমির মালিকরা সড়কের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। 
কথা হলে সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী মাহবুব হাসান জানান, সোনাতলা থেকে পাটগাড়ি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ঠিকাদারের সময় পেরিয়ে যাওয়াসহ কিছু জটিলতার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। 
সরেজমিন পাটগাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক ছাড়াই কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ কালভার্টের দুই পাশে মাটি ফেলে রাখায় কাদামাটিতে একাকার। এ পথ দিয়ে চলাচল এখন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কটি দ্রুত নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন তেঘড়ি গ্রামের গোলাম কিবরিয়া, পাটগাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম সান, স্কুলশিক্ষার্থী সিমি খাতুনসহ অনেকে। 
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রহ্লাদ কুমার বলেন, ‘আমরা যথাসময়ে কাজ শুরু করেছিলাম। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং মামলার কারণে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। এরই মধ্যে সময় পেরিয়ে যাওয়ায় আমাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়েছে।’
পাবনা সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী  সাদেকুর রহমান বলেন, ‘যাদের জমির কাগজপত্র সঠিক ছিল, তারা টাকা পেয়েছেন। যাদের কাগজ সঠিক নেই, তারা পাননি। জটিলতা এখনও কাটেনি। মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন প্রকল্প এলে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। অনুমোদন হলে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সড়কটির কাজ শুরু করা হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২০০ রোহিঙ্গাকেও ঠেলে পাঠিয়েছে ভারত
  • রোমানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: আইইএলটিএস স্কোর ৬, খরচ–বৃত্তিসহ জেনে নিন সব তথ্য
  • ফসলের সঙ্গে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন
  • ভূমি অধিগ্রহণ না করেই কাজ
  • সাবেক কাউন্সিলর বকুলকে রেখে এজাহারভুক্ত ৩ আসামি বাদ