সাভারে রেলিক সিটি নামের একটি অবৈধ আবাসন কোম্পানি প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছে অন্যের জমি বিক্রি করছিল। অভিযোগ পাওয়ায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে রাজউক। কোম্পানিটি বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাদের ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর রাজারবাগ এলাকায় অভিযান চালায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ সময় রাজউকের লোকজন রেলিক সিটির সব সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড জব্দ করে। প্রতিষ্ঠানটির ভাড়া করা অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার জব্দের পাশাপাশি ভাড়া করা দুটি কক্ষে তালা ও একটি শেড গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে রাজউক। অভিযানের সময় ঘটনাস্থল উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক পরিচালক সাব্বির হোসেন।
জানা যায়, রাজারবাগ এলাকায় প্রথমে একটি বাড়ির দুটি কক্ষ ভাড়া নেয় রেলিক সিটি। এর পর আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের প্রায় দুই হাজার ৭০০ একর জমির ভুয়া লে-আউট দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়। ভুয়া কোম্পানিটি বৈশাখী অফার দিয়ে প্রবাসীসহ সাধারণ মানুষের কাছে প্রতারণার মাধ্যমে অন্যের জমি বিক্রি করছিল। কৃষি ও আবাসিক এলাকায় অবৈধ কোম্পানি করতে গিয়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে স্থানীয়দের ওপর হামলা-মামলা, হুমকি-ধমকিসহ বিবাদে জড়িয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী প্লট মালিক ও স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালায় রাজউক।
রাজউকের এস্টেট ও ভূমি-৩ এর উপপরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লিটন সরকার বলেন, রাজউকের নিবন্ধনহীন আবাসন কোম্পানি রেলিক সিটির কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তারা এ এলাকার কিছু জমি কিনেছে অথবা বায়না করেছে। কিন্তু তারা প্রায় দুই হাজার ৭০০ একর জমির একটি লে-আউট নকশা তৈরি করে বিভিন্নজনের কাছে বিভিন্ন দামে প্লট বিক্রি করছে।
লিটন সরকার বলেন, তারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালান। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক পরিচালককে পান। তিনি তাদের কাছে স্বীকার করেছেন, কোম্পানিটি ইতোমধ্যে কিছু জমি বিক্রি করেছে। দুই হাজার ৭০০ একর জমির লে-আউট নকশ করলেও রেলিক সিটির নামেমাত্র ১০ বিঘার মতো জমির কাগজপত্র দেখাতে পেরেছেন তিনি। যেহেতু রেলিক সিটির কোনো নিবন্ধন হয়নি, তাই এই প্রতিষ্ঠানের নামে তারা কোনোভাবেই প্লট বিক্রি করতে পারে না। এ জন্য তাদের যতগুলো সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড ছিল তা অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি এখানে যে অফিস ব্যবহার করছিল, সেটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার জব্দের পাশাপাশি অফিসটি বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের একটি শেডও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক পরিচালক তাদের দোষ স্বীকার করেছেন। এখন প্রতিষ্ঠানটি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে এ ধরনের কার্যক্রম আর চালাবে না বলে অঙ্গীকারনামা দেবে।
লিটন আরও বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ থাকায় রাজউক তাদের নোটিশ করে। কিন্তু তারা নোটিশের জবাব দেয়নি। তাই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা চলমান রয়েছে।
ভুক্তভোগী কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, রেলিক সিটি তাদের ফসলি জমিতে সাইনবোর্ড দিয়েছে। তারা এলাকার কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী বাহিনী ভাড়া করেছে। তাই ভয়ে তারা নিজেদের ক্ষেতে যেতে পারেন না। প্রতিবাদ করায় তারা বাড়িঘরে হামলা ও মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করছে।
অভিযোগের বিষয়ে রেলিক সিটির প্রশাসনিক পরিচালক সাব্বির হোসেন বলেন, কারও জায়গা তারা জোর করে দখল করেননি। অনেকেই তাদের কাছে জমি বিক্রি করার জন্য কাগজপত্র নিয়ে আসছে। তারা পর্যায়ক্রমে জমি বায়না করে বিক্রি করছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক গজপত র র জউক করছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার
ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।
আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।
বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।
অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।
আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।