গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে ‘দয়া’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের নিজেদের স্বার্থেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

গতকাল বৃহস্পতিবার ডব্লিউএইচওর বার্ষিক অধিবেশনে এক আবেগঘন বক্তৃতায় অশ্রু সংবরণ করে এসব কথা বলেন তেদরোস আধানোম।

বক্তৃতায় ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, এ যুদ্ধ ইসরায়েলকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং এতে কোনো স্থায়ী সমাধান আসবে না।

ইথিওপিয়ায় যুদ্ধের মধ্যে বড় হয়েছেন তেদরোস। তিনি সে কথা প্রায়ই স্মরণ করেন। আর সেদিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে গাজার মানুষ কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা আমি অনুভব করতে পারি। আমি সেটি টের পাই। আমি কল্পনা করতে পারি। এমনকি আমি সে শব্দও শুনতে পাই। আর এর কারণ হচ্ছে, আমার পিটিএসডি (পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার)।’

আরও পড়ুনইসরায়েলের ভেতরে যে প্রতিরোধের কথা আমরা জানি না২ ঘণ্টা আগে

ডব্লিউএইচও প্রধান আরও বলেন, ‘আপনি বুঝতে পারবেন, মানুষ কতটা কষ্টে আছে। খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা একেবারেই অন্যায়। চিকিৎসা সরঞ্জামকে অস্ত্র বানানো আরও নিকৃষ্ট।’

জাতিসংঘ গতকাল গাজায় প্রায় ৯০ ট্রাক ত্রাণ বিতরণ করে। গত ২ মার্চ ইসরায়েল সেখানে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করার পর এটি ছিল প্রথম ত্রাণ সরবরাহ।

ডব্লিউএইচওর জরুরি বিভাগের পরিচালক মাইকেল রায়ান বলেন, ‘গাজায় ২১ লাখ মানুষ তাৎক্ষণিক মৃত্যুঝুঁকিতে আছেন। আমাদের অনাহার বন্ধ করতে হবে, সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে পুনরায় কার্যকর করতে হবে এবং ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’

৬০ বছর বয়সী তেদরোস বলেন, ‘শুধু একটি রাজনৈতিক সমাধানই প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ইসরায়েলের নিজেদের স্বার্থেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। আমি মনে করি, এ যুদ্ধ ইসরায়েলকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং এটি কোনো স্থায়ী সমাধান আনবে না। আমি আপনাদের কাছে দয়া দেখানোর অনুরোধ জানাচ্ছি। এটি আপনাদের জন্যও ভালো, ফিলিস্তিনিদের জন্যও ভালো, মানবতার জন্যও ভালো।’

আরও পড়ুনপানিসংকটে চরম দুর্দশায় গাজাবাসী, লবণাক্ত পানি পান করছে শিশুরা৯ ঘণ্টা আগে

ডব্লিউএইচওর জরুরি বিভাগের পরিচালক মাইকেল রায়ান বলেন, গাজায় ২১ লাখ মানুষ ‘তাৎক্ষণিক মৃত্যুঝুঁকিতে’ আছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনাহার বন্ধ করতে হবে, সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে পুনরায় কার্যকর করতে হবে এবং ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’

ডব্লিউএইচও জানায়, গাজার মানুষ তীব্র খাদ্য, পানি, চিকিৎসাসামগ্রী, জ্বালানি ও আশ্রয় সংকটে ভুগছেন।

এ মুহূর্তে গাজার মানুষ কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা আমি অনুভব করতে পারি। আমি সেটি টের পাই। আমি কল্পনা করতে পারি। এমনকি আমি সে শব্দও শুনতে পাই। আর এর কারণ হচ্ছে, আমার পিটিএসডি (পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার)।তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস, ডব্লিউএইচও প্রধান

গত সপ্তাহে গাজার চারটি প্রধান হাসপাতাল চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, এসব হাসপাতালের অবস্থান সংঘাতপূর্ণ এলাকার খুব কাছে। হামলার শিকারও হয়েছে এগুলো।

জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে ১৯টি। এসব হাসপাতালের কর্মীরা ‘অসম্ভব কঠিন পরিবেশে’ কাজ করছেন। সেখানকার প্রায় ৯৪ শতাংশ হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। উত্তর গাজার বাসিন্দারা প্রায় সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন।

আরও পড়ুনগাজা এখন ইসরায়েলের ভিয়েতনাম১৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ত দর স ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

চার-পাঁচ হাতবদল হওয়াসহ পণ্যের দাম বৃদ্ধির যত কারণ

পণ্যের দাম বাড়ার প্রাথমিক কারণ সরবরাহের ঘাটতি। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের অতি মুনাফার কারণেও পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায়। কৃষকের মাঠ থেকে উৎপাদিত প্রতিটি পণ্য চার–পাঁচ হাত ঘুরে ক্রেতার হাতে পৌঁছায়। যদিও পণ্যের দামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন কৃষক বা উৎপাদকেরা। অর্থাৎ লাভ কিংবা লোকসান—দুটিরই বড় হিস্যা যায় কৃষকের ঘাড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশের ১৪টি জেলায় অত্যাবশ্যকীয় পাঁচটি কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করতে জরিপটি করেছে। যে পাঁচটি পণ্যের ওপর জরিপ করা হয় সেগুলো হচ্ছে—চাল, আলু, পেঁয়াজ, ডিম ও ব্রয়লার মুরগি।

জরিপে উঠে আসে বছরের যে সময়ে ধান, আলু ও পেঁয়াজের মতো পণ্যের উৎপাদন মৌসুম থাকে না, ওই মাসগুলোতে এসব পণ্যের দাম বেশি বাড়ে। এ জন্য মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে এসব পণ্য আমদানি উৎসাহিত করার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানোরও সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যের পেছনে যে খরচ হয়, তার প্রায় চার ভাগের এক ভাগ যায় চাল কিনতে। উৎপাদন পর্যায় (কৃষক) থেকে অন্তত পাঁচ–ছয় হাত ঘুরে ক্রেতার কাছে চাল বিক্রি হয়। এ কারণে একজন ক্রেতাকে উৎপাদন ব্যয়ের দ্বিগুণ বা তার বেশি দামে চাল কিনতে হয়। জরিপে বলা হয়েছে, এক কেজি মোটা চালের (ধান) উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৩৪ টাকা; সেই চাল খুচরায় ক্রেতারা কেনেন ৬২–৬৩ টাকায়।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, গত বছর দেশে বন্যা ও অতিরিক্ত পোকার আক্রমণে আমন ধানের উৎপাদন কম হয়েছিল। এতে বাজারে চালের ঘাটতি দেখা দেয়। এ ছাড়া ডলার–সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় চাল আমদানিও সম্ভব হয়নি। এ কারণে চালের দাম বাড়তি ছিল। এ ছাড়া ধান চাষের কৃষিজমি কমে যাওয়া; বিদ্যুৎ, সার, ডিজেল, শ্রমিকের মজুরি ও সুদহার বৃদ্ধি—প্রভৃতি কারণও চালের মূল্যবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

চার পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণ

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে গত অর্থবছরে ১ কোটি ৬ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছিল। আর দেশে আলুর চাহিদা বছরে আনুমানিক ৯০ লাখ টন। তারপরও গত বছরের নভেম্বরে আলুর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল। কারণ, চাহিদা ও উৎপাদনের তথ্যে বেশ গরমিল ছিল। এ সুযোগে আলুর সরবরাহব্যবস্থায় থাকা মধ্যস্বত্বভোগীরা দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। গত বছর প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় হয় ১৭ টাকা, যা তাঁরা ১৮ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করেন। সেই আলু বাজার থেকে খুচরায় ক্রেতারা কিনেছেন ৪০ থেকে ৯০ টাকা দরে। চালের মতো আলুও চার–পাঁচ হাত ঘুরে ক্রেতার কাছে পৌঁছায়। এর মধ্যে হিমাগার থেকে আলু ছাড়ের সময় দামে বড় পার্থক্য তৈরি হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, দাম স্থিতিশীল রাখতে আলুর সঠিক চাহিদা ও উৎপাদনের তথ্য জানা জরুরি। সে আলোকে হিমাগার থেকে ধাপে ধাপে আলু ছাড়ের ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। হিমাগার থেকে আলু ছাড়ের ক্ষেত্রে বাজার পরিস্থিতি অনুসারে প্রতি মাসে দামের সীমা নির্ধারণেরও প্রস্তাব করা হয় প্রতিবেদনে।

জরিপে উঠে আসে, কয়েক বছর ধরেই দেশে পেঁয়াজের দাম উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায় উঠেছিল। গত বছর কয়েক দফা অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে বহু পেঁয়াজ নষ্ট হয়। এসব কারণে মূলত সরবরাহ সংকট থেকে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষক ও মধ্যস্বত্বভোগীদের মজুতের কারণেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কৃষকের মাঠে উৎপাদনের পরে অন্তত পাঁচ হাত ঘুরে ক্রেতার কাছে পৌঁছায় পেঁয়াজ। অবশ্য গত বছরের তুলনায় এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম অনেক কম। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকেরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, চলতি বছর প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যয় ছিল ৫৪ টাকা। গত জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি মাসে সেই পেঁয়াজ কৃষক বিক্রি করেছেন ৩৫–৪৮ টাকায়। গত বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজে কৃষকেরা ১৭৪ শতাংশ মুনাফা করেছিলেন। সেখানে এ বছর ২৪ শতাংশ লোকসান হয়েছে তাঁদের। লোকসানের কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর অতিরিক্ত মুনাফা করায় এ বছর বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। পাশাপাশি পেঁয়াজ বীজ, জমি ইজারা, শ্রমের মজুরিও বেড়েছে।

ডিম ও ব্রয়লার মুরগির বাজারেও ২–৩ ধরনের মধ্যস্বত্বভোগী রয়েছে বলে জরিপে উঠে আসে। তবে এই দুই পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে পোলট্রি খাদ্য ও মুরগির বাচ্চার দাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিম উৎপাদনের ৭৪ শতাংশ ও ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনের ৬৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয় খাদ্যের পেছনে। আর বাচ্চা কিনতে ১৪–২০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়। পোলট্রি খাদ্যের প্রায় ৭০ শতাংশই আমদানিনির্ভর। গত তিন–চার বছরে বৈশ্বিক বাজারে খাদ্যের কাঁচামালের দাম বেশি থাকায় দেশেও পোলট্রি খাদ্যের দাম বেশি ছিল। এদিকে বাড়তি ব্যয় সামলাতে না পেরে অনেক ছোট খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক পোলট্রি খাদ্য ও বাচ্চার দাম কমানো এবং ছোট ও মাঝারি আকারের খামারিদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে শুরু, এখন বছরে ১০০ টন মধু কেনাবেচা করেন তিনি
  • মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে, কমেছে মিনিকেট চালের দাম
  • হাড় ক্ষয়ে যাওয়া রোগ
  • পানিসংকটে চরম দুর্দশায় গাজাবাসী, লবণাক্ত পানি পান করছে শিশুরা
  • সিলেটে পাঁচ দিন ৩৯ এলাকায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে
  • চার-পাঁচ হাতবদল হওয়াসহ পণ্যের দাম বৃদ্ধির যত কারণ
  • নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
  • মহামারি ঠেকাতে একমত বিশ্ব
  • লোডশেডিংয়ে ‘নাকাল’ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা