গাজার বাসিন্দাদের প্রতি ‘দয়া’ দেখাতে ইসরায়েলের কাছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আহ্বান
Published: 23rd, May 2025 GMT
গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে ‘দয়া’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের নিজেদের স্বার্থেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ডব্লিউএইচওর বার্ষিক অধিবেশনে এক আবেগঘন বক্তৃতায় অশ্রু সংবরণ করে এসব কথা বলেন তেদরোস আধানোম।
বক্তৃতায় ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, এ যুদ্ধ ইসরায়েলকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং এতে কোনো স্থায়ী সমাধান আসবে না।
ইথিওপিয়ায় যুদ্ধের মধ্যে বড় হয়েছেন তেদরোস। তিনি সে কথা প্রায়ই স্মরণ করেন। আর সেদিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে গাজার মানুষ কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা আমি অনুভব করতে পারি। আমি সেটি টের পাই। আমি কল্পনা করতে পারি। এমনকি আমি সে শব্দও শুনতে পাই। আর এর কারণ হচ্ছে, আমার পিটিএসডি (পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার)।’
আরও পড়ুনইসরায়েলের ভেতরে যে প্রতিরোধের কথা আমরা জানি না২ ঘণ্টা আগেডব্লিউএইচও প্রধান আরও বলেন, ‘আপনি বুঝতে পারবেন, মানুষ কতটা কষ্টে আছে। খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা একেবারেই অন্যায়। চিকিৎসা সরঞ্জামকে অস্ত্র বানানো আরও নিকৃষ্ট।’
জাতিসংঘ গতকাল গাজায় প্রায় ৯০ ট্রাক ত্রাণ বিতরণ করে। গত ২ মার্চ ইসরায়েল সেখানে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করার পর এটি ছিল প্রথম ত্রাণ সরবরাহ।
ডব্লিউএইচওর জরুরি বিভাগের পরিচালক মাইকেল রায়ান বলেন, ‘গাজায় ২১ লাখ মানুষ তাৎক্ষণিক মৃত্যুঝুঁকিতে আছেন। আমাদের অনাহার বন্ধ করতে হবে, সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে পুনরায় কার্যকর করতে হবে এবং ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’৬০ বছর বয়সী তেদরোস বলেন, ‘শুধু একটি রাজনৈতিক সমাধানই প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ইসরায়েলের নিজেদের স্বার্থেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। আমি মনে করি, এ যুদ্ধ ইসরায়েলকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং এটি কোনো স্থায়ী সমাধান আনবে না। আমি আপনাদের কাছে দয়া দেখানোর অনুরোধ জানাচ্ছি। এটি আপনাদের জন্যও ভালো, ফিলিস্তিনিদের জন্যও ভালো, মানবতার জন্যও ভালো।’
আরও পড়ুনপানিসংকটে চরম দুর্দশায় গাজাবাসী, লবণাক্ত পানি পান করছে শিশুরা৯ ঘণ্টা আগেডব্লিউএইচওর জরুরি বিভাগের পরিচালক মাইকেল রায়ান বলেন, গাজায় ২১ লাখ মানুষ ‘তাৎক্ষণিক মৃত্যুঝুঁকিতে’ আছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনাহার বন্ধ করতে হবে, সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে পুনরায় কার্যকর করতে হবে এবং ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’
ডব্লিউএইচও জানায়, গাজার মানুষ তীব্র খাদ্য, পানি, চিকিৎসাসামগ্রী, জ্বালানি ও আশ্রয় সংকটে ভুগছেন।
এ মুহূর্তে গাজার মানুষ কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা আমি অনুভব করতে পারি। আমি সেটি টের পাই। আমি কল্পনা করতে পারি। এমনকি আমি সে শব্দও শুনতে পাই। আর এর কারণ হচ্ছে, আমার পিটিএসডি (পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার)।তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস, ডব্লিউএইচও প্রধানগত সপ্তাহে গাজার চারটি প্রধান হাসপাতাল চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, এসব হাসপাতালের অবস্থান সংঘাতপূর্ণ এলাকার খুব কাছে। হামলার শিকারও হয়েছে এগুলো।
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে ১৯টি। এসব হাসপাতালের কর্মীরা ‘অসম্ভব কঠিন পরিবেশে’ কাজ করছেন। সেখানকার প্রায় ৯৪ শতাংশ হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। উত্তর গাজার বাসিন্দারা প্রায় সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুনগাজা এখন ইসরায়েলের ভিয়েতনাম১৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ত দর স ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
হামলা চালিয়ে যাবে মস্কো, পুতিনে হতাশ ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তবে এবার তিনি যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো আশাবাদ দিতে পারেননি। উল্টো তাঁকে হতাশ হতে হয়েছে। তিনি জানান, আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। পুতিন যুদ্ধ থামাতে চাচ্ছেন– মনে হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার দুই নেতার কথোপকথনের পর ক্রেমলিন জানায়, লক্ষ্য অর্জনে হামলা চালিয়ে যাবে মস্কো।
দুই নেতার ফোনালাপের পর রাতে ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মস্কো। ইউক্রেনের আকাশে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের বৃষ্টি ঝরেছে। হামলায় ক্রুজ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করেছে রাশিয়া। এসব হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও ২৩ জন আহত হয়েছেন। এর আগে ২৮ জুন রাতের হামলাটিও ছিল ভয়াবহ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এসব তথ্য দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিনের অবস্থানের কারণে কূটনীতির মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের মার্কিন প্রচেষ্টা মূলত স্থগিত হয়ে গেল। এই অবস্থায় ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুতিনের ওপর চাপ বাড়ানোর পরামর্শ এসেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোর অভিযোগও উঠেছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এএফপিকে বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। কারণ, তারা কূটনৈতিক উপায়ে লক্ষ্য অর্জন করতে অক্ষম। বিশেষ সামরিক অভিযানের মাধ্যমে আমরা লক্ষ্য অর্জনে আগ্রহী এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে সংকটের সমাধান হওয়াই ভালো। কিন্তু যতক্ষণ না তা সম্ভব হয়, রাশিয়া বিশেষ অভিযান চালিয়ে যাবে। পুতিনের সহযোগী ইউরি উশাকভ জানিয়েছেন, দুই নেতার মধ্যে এক ঘণ্টার মতো কথা হলেও মুখোমুখি বসার ব্যাপারে তাদের কথা হয়নি।
ইউক্রেনের অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারেও কথা বলেছেন ট্রাম্প। আইওয়ার উদ্দেশে ওয়াশিংটন ত্যাগ করার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করিনি। তবে জো বাইডেনের প্রশাসন ইউক্রেনে অনেক বেশি অস্ত্র দিয়েছিল। এতে মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করছি। বাইডেনের মতো অস্ত্র সরবরাহ করে দেশকে খালি করে ফেলা যাবে না।’
তবে কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের চালান বন্ধ করে দিয়েছে। বিশেষ করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ কমিয়ে আনা হয়েছে। এই অবস্থায় ইউক্রেনের বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রাশিয়ার হামলা আরও বেড়েছে। এই অবস্থায় পুতিন জোর দিয়ে বলেছেন, ‘মূল সমস্যার সমাধান হলেই কেবল তিনি যুদ্ধ বন্ধ করবেন।’ পুতিন মূলত ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে দেখতে চান না।
অন্যদিকে ন্যাটো নেতারা বলছেন, রাশিয়া পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছে। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ইউক্রেন দুর্বল হয়ে পড়বে। জার্মানি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্যাট্রিয়ট কিনে ইউক্রেনে সরবরাহ করা সম্ভব। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল যুদ্ধবন্দিদের আরেকটি দল বিনিময় করেছে মস্কো-কিয়েভ।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফোনালাপ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা করেছে মস্কো। বিস্ফোরণ, ভারী মেশিনগানের গোলাবর্ষণ হয়েছে। রাশিয়া রেকর্ড সংখ্যক ড্রোন পাঠায়। একাধিক ভবন ও আবাসিক এলাকায় সেগুলো আঘাত করেছে। কিয়েভ শহর ও সামরিক কর্তৃপক্ষের মতে, ১৩ ঘণ্টা ধরে চলা এই হামলায় কমপক্ষে ২৩ জন আহত হয়েছেন। দেশটির বিমানবাহিনীর মতে, ইউক্রেনে রেকর্ড ৫৩৯টি রাশিয়ান ড্রোন ছোড়ে। এর মধ্যে ৪৭৬টি ধ্বংস করা হয়। ১১টি ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোরেও শহরজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। হাজার হাজার বাসিন্দা পাতাল রেলস্টেশন, ভূগর্ভস্থ পার্কিং লট কিংবা বাঙ্কারে রাত কাটান।
নেদারল্যান্ডসের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুবেন ব্রেকেলম্যানস মস্কোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া ব্যাপক রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করছে। ডাচ ও জার্মান গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাতে বহু প্রমাণ আছে। তাঁর দাবি, রাশিয়া আগের চেয়ে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে।