ফেসবুকে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখে আপনি হয়তো ‘অর্গানিক মাকা পাউডার’, ‘ন্যাচারাল হেলথ সাপ্লিমেন্ট’, ‘গ্যাস্ট্রিক ক্লিয়ার’ এবং ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ‘ডায়াকোর্স’ ফরমাশ দিয়েছিলেন। বিদেশি পণ্য ভেবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই যে পণ্যগুলো কিনছেন—একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে এসব পণ্যের নকল তৈরি করে বিক্রি করে আসছিল। এমনই এক প্রতারক চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি-মতিঝিল বিভাগের একটি দল গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর পূর্ব শেওড়াপাড়ার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে মো.

রাজু মিয়া (২৩) নামের ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করে। রাজু দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে ভুয়া ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করে নকল ওষুধ ও সাপ্লিমেন্ট বিক্রি করছিল।

ডিএমপি জানায়, অভিযানে রাজুর বাসা থেকে ১১৩ প্যাকেট নকল ‘অর্গানিক মাকা পাউডার’, ৯৫ প্যাকেট ‘ন্যাচারাল হেলথ সাপ্লিমেন্ট’, ১৫টি প্লাস্টিকের কৌটায় ‘গ্যাস্ট্রিক ক্লিয়ার’, ২০টি ‘ডায়াকোর্স’ ট্যাবলেট, ৪০টি ‘গ্যাসট্রিক ক্লিয়ার’ ও ‘ডায়াকোর্স’ লেবেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া তার বাসা থেকে একটি মুঠোফোন ও একটি ডিজিটাল স্কেলও উদ্ধার করা হয়।

ডিবি সূত্র জানায়, প্রতারক চক্রটি ফেসবুক পেজে বিদেশি পণ্যের ছবি এবং গুজবনির্ভর স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ দিয়ে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করত। এসব পণ্যের বিজ্ঞাপন এমনভাবে বানানো হতো, যাতে দেখে মনে হয়, এটি সত্যিকারের আমদানিকৃত বিদেশি ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট। অথচ বাস্তবে পুরান ঢাকার কোনো ভাড়া বাসায় সস্তা উপকরণ দিয়ে বানানোর পর এগুলোতে বসানো হতো বিদেশি কোম্পানির নামের লেবেল। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজের মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করা হতো।

ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, ‘আমরা ধারণা করছি, এই চক্রের সঙ্গে আরও কয়েকজন যুক্ত রয়েছে, যাঁরা সরবরাহ ও প্রচারের দায়িত্বে আছে। তাদের শনাক্তে অভিযান চলছে।’

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা রক্ষায় এ ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। অনলাইনে ওষুধ কেনার আগে জনগণকে সচেতন হওয়ার অনুরোধ করছি।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা 

সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ