সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যবসা শুরুর দরকারি ৫ সেবা এক আবেদনে: বিডা
Published: 25th, May 2025 GMT
বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করার প্রক্রিয়াকে আরও সহজ, দ্রুত ও ডিজিটাল করতে রোববার বিডার কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে ছয়টি সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা ব্যবসা শুরুর প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় পাঁচটি সেবা- নামের ছাড়পত্র, কোম্পানি নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন সার্টিফিকেট এবং ব্যাংক হিসাব খোলা- একটি মাত্র আবেদন ও এককালীন ফি’র মাধ্যমে বিডার অনলাইন ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টাল থেকে পাবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। সভাপতিত্ব করেন বিডার নির্বাহী সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) শাহ মোহাম্মদ মাহবুব। সমঝোতা স্মারকে অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলো হলো- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেড।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আশিক চৌধুরী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই সাত দিনের মধ্যে ব্যবসা শুরু করা যায়। আমাদেরও তেমন একটি স্বপ্ন রয়েছে। যদি ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক সেবাগুলো বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) প্ল্যাটফর্মের আওতায় এনে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে বাংলাদেশেও অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবসা শুরুর বাস্তবতা তৈরি করা সম্ভব হবে। যদিও এটি রাতারাতি সম্ভব নয়, এজন্য ধাপে ধাপে সময় ও প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে।
তিনি বলেন, আমরা এই মুহূর্তে একক আবেদনের মাধ্যমে ব্যবসা শুরুর জন্য জরুরি পাঁচটি সেবা বিডা ওএসএস প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য হলো, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এই পাঁচটি সেবা অনলাইনে চালু করা। এর পরপরই ধাপে ধাপে অন্যান্য সেবাও এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে। এই সেবা চালু হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। তারা একটিমাত্র ফর্ম পূরণ করে ব্যবসা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ও অনুমোদন পেয়ে যাবেন এবং সেই প্রক্রিয়াটি অনলাইনে ট্র্যাক করতেও পারবেন। এটি নিঃসন্দেহে একটি গেম চেঞ্জার উদ্যোগ, যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যবসায়িক পরিবেশকে আরও সহজ, দ্রুত ও ডিজিটাল করে তুলবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিডার নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব বলেন, ওয়ান প্রসেস ওয়ান ফি ধারণায় ব্যবসা শুরু করার এই ডিজিটাল ও সমন্বিত সেবা পদ্ধতি দেশের বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও কার্যকর ও বিনিয়োগবান্ধব করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে বিডার মহাপরিচালক জীবন কৃষ্ণ সাহা রায়, ওয়ান প্রসেস, ওয়ান ফি ভিত্তিক এই সমন্বিত সেবা প্রদানের পদ্ধতি, ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য এর সম্ভাব্য সুফল নিয়ে একটি ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা তুলে ধরেন। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস অন ষ ঠ ন স ম রক ব যবস সমঝ ত
এছাড়াও পড়ুন:
এই অপচয় রোধে প্রয়োজন টেকসই পদক্ষেপ
প্রতিবছরের মতো এবার যে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন ছিল না, এটা ভালো দৃষ্টান্ত। অতীতে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে আনুষ্ঠানিকতার নামে সরকারের মাহাত্ম্য প্রচার করা হতো।
তবে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খুবই হতাশাজনক। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন পরীক্ষার্থী। পাস করেছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৪৬ জন। পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪; যা গতবার ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড যুক্ত করলে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ৬ লাখের বেশি।
এই যে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলো, এর জন্য তাদের দায়ী করা যায় না। দায়ী হলেন শিক্ষার অভিভাবক বা রক্ষকেরা। বাংলাদেশে যখন যেই সরকার আসে, তাদের মতো করে একটি শিক্ষানীতি বা কমিশন করে। কিন্তু সেই শিক্ষানীতি বা কমিশন শিক্ষার মানোন্নয়নে আদৌ ভূমিকা রাখছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হয় না।
এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কম হওয়ার জন্য শিক্ষার অভিভাবকেরা যেসব কারণ চিহ্নিত করেছেন, তাকে ‘ঐচ্ছিক’ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। মূল কারণ তাঁরা এড়িয়ে গেছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘আমাদের কোনো টার্গেট ছিল না যে পাসের হার এত করব, বাড়াব, নাকি কমাব। আমাদের মিশন ছিল পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।’
সুন্দরভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষা বোর্ড তথা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। এতে কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু নেই। মূল কথা হলো নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষার সমস্যাটি কীভাবে দেখেছেন এবং তার প্রতিকারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। করোনার কারণে দুই বছর ঠিকমতো বিদ্যালয়ে পাঠদান হয়নি, এটা সত্য; কিন্তু তার আগে কিংবা পরেও পাঠদান সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর মান যাচাই করার কথা থাকলেও সেটা হয় না। এ কারণেই এসএসসিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অকার্যকর হয়।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, শ্রেণিকক্ষের চেয়ে কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের বেশি উৎসাহিত করা হয়। আগে কোচিং সেন্টার ছিল শহরাঞ্চলে, এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রসারিত হয়েছে। কোচিং মানে শিক্ষা নয়, পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসবে, কী উত্তর হবে; সেটা শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দেওয়া। বহু বছরের কু–অভ্যাসে আমরা শিক্ষাকে এই স্তরে নিয়ে এসেছি।
প্রতিটি দেশের একটি শিক্ষা–দর্শন থাকে, যার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ ও ভবিষ্যতে তাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের শিক্ষার নীতিনির্ধারকেরা এর ওপর কখনো জোর দেননি। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অনেকের পড়াশোনা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে মেয়েশিক্ষার্থীদের। এটা কেবল পরিবার বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি নয়, মানবসম্পদেরও অপচয়।
শিক্ষা খাতের প্রতি পূর্বাপর সব সরকারই উদাসীনতা দেখিয়ে আসছে। এমনকি গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারও শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। শিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বস্তরে মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, সময়মতো পাঠ্যবইসহ শিক্ষার সব উপকরণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর মেধাবীরা তখনই এই পেশায় আসবেন, যখন সম্মানজনক বেতন–ভাতা পাবেন।
এসএসসি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়া ঠেকাতে সরকারকে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ঠকমতো পাঠদান ও মান যাচাই হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করার বিকল্প নেই।