গত শুক্রবার দিবাগত রাতে মারা গেছেন ভারতীয় সিনেমার দাপুটে অভিনেতা মুকুল দেব। ৫৪ বছর বয়সে তার প্রয়াণ মেনে নিতে পারছেন সহশিল্পীরা। জীবনের শেষ সময়ে একাকিত্বে ভুগেছেন এই অভিনেতা।

ব্যক্তিগত জীবনে মুকুল দেব ঘর বেঁধেছিলেন শিল্পা নামে এক নারীর সঙ্গে। ২০০০ সালে বিয়ে করেন তারা। শিল্পা শোবিজ অঙ্গনের কেউ নন। ২০০২ সালে তাদের সংসার আলো করে জন্ম নেয় সিয়া নামে একটি কন্যা। দাম্পত্য জটিলতা দেখা দিলে ২০০৪ সাল থেকে আলাদা থাকতে শুরু করেন। ২০০৫ সালে মেয়ে সিয়াকে নিয়ে দিল্লিতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন শিল্পা। এরপর মুকুলের কাছে আর ফেরেননি। তবে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল অভিনেতার।

মুকুলের মৃত্যুর পর আলোচনায় উঠে এসেছেন তার প্রাক্তন স্ত্রী শিল্পা। জানা যায়, মুকুলের মৃত্যুর পরও শেষবার দেখার জন্যও যাননি। কী কারণে মুকুলের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছিল, তাও আলোচনায় পরিণত হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

বিশালের হবু স্ত্রী সাইকে কতটা জানেন?

৩ লাখ মানুষ নিয়ে শুটিং, গিনেস বুকে রেকর্ড

এ বিষয়ে মুকুল দেবের এক পড়শি বলেন, “আমার মনে হয়, বেশ কিছু নগন্য বিষয় নিয়ে তৈরি মতবিরোধকে কেন্দ্র করে জটিলতার সূচনা। আপনি এখানে একজনকে দায়ী করতে পারবেন না। দুজনের কারণেই বিয়েটি টিকেনি। কিন্তু শিল্পার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর মুকুল দেব আমূল বদলে যান।” 

‘সন অব সরদার’ সিনেমায় মুকুল দেবের সহশিল্পী ছিলেন বিন্দু দারা সিং। ইন্ডিয়া টুডে-কে এ অভিনেতা বলেন, “বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর মুকুল নিজেকে আড়ালে নিয়ে যান। এমনকি ঘর থেকেও খুব একটা বের হতেন না বা কারো সঙ্গে দেখা করতেন না। গত কয়েকদিনে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে এবং হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার ভাই, তাকে যারা চিনতেন, ভালোবাসতেন তাদের সকলের প্রতি আমার সমবেদনা। মুকুল দেব অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। আমরা তাকে মিস করব।”

১৯৯৬ সালে ‘দাস্তাক’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন মুকুল দেব। এতে তার সহশিল্পী ছিলেন সুস্মিতা সেন ও শ্রুতি কাপুর। এটি প্রযোজনা করেন মুকেশ ভাট। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে ‘ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা’, ‘আর রাজকুমার’, ‘সন অব সরদার’, ‘ডন’সহ বেশ কিছু হিট সিনেমা উপহার দেন এই অভিনেতা।   

হিন্দি সিনেমা ছাড়াও তেলেগু, কন্নড়, পাঞ্জাবি, বাংলা ভাষার সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন মুকুল দেব। তাছাড়া ‘ঘরওয়ালি উপরওয়ালি’, ‘কাহানি ঘর ঘর কী’-এর মতো জনপ্রিয় টিভি ধারাবাহিকে দেখা গেছে তাকে।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

এই অপচয় রোধে প্রয়োজন টেকসই পদক্ষেপ

প্রতিবছরের মতো এবার যে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন ছিল না, এটা ভালো দৃষ্টান্ত। অতীতে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে আনুষ্ঠানিকতার নামে সরকারের মাহাত্ম্য প্রচার করা হতো। 

তবে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খুবই হতাশাজনক।  বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন পরীক্ষার্থী। পাস করেছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৪৬ জন। পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪; যা গতবার ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড যুক্ত করলে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ৬ লাখের বেশি।  

এই যে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলো, এর জন্য তাদের দায়ী করা যায় না। দায়ী হলেন শিক্ষার অভিভাবক বা রক্ষকেরা। বাংলাদেশে যখন যেই সরকার আসে, তাদের মতো করে একটি শিক্ষানীতি বা কমিশন করে। কিন্তু সেই শিক্ষানীতি বা কমিশন শিক্ষার মানোন্নয়নে আদৌ ভূমিকা রাখছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হয় না। 

এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কম হওয়ার জন্য শিক্ষার অভিভাবকেরা যেসব কারণ চিহ্নিত করেছেন, তাকে ‘ঐচ্ছিক’ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। মূল কারণ তাঁরা এড়িয়ে গেছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘আমাদের কোনো টার্গেট ছিল না যে পাসের হার এত করব, বাড়াব, নাকি কমাব। আমাদের মিশন ছিল পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।’ 

সুন্দরভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষা বোর্ড তথা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। এতে কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু নেই। মূল কথা হলো নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষার সমস্যাটি কীভাবে দেখেছেন এবং তার প্রতিকারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। করোনার কারণে দুই বছর ঠিকমতো বিদ্যালয়ে পাঠদান হয়নি, এটা সত্য; কিন্তু তার আগে কিংবা পরেও পাঠদান সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর মান যাচাই করার কথা থাকলেও সেটা হয় না। এ কারণেই এসএসসিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অকার্যকর হয়।

আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, শ্রেণিকক্ষের চেয়ে কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের বেশি উৎসাহিত করা হয়। আগে কোচিং সেন্টার ছিল শহরাঞ্চলে, এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রসারিত হয়েছে। কোচিং মানে শিক্ষা নয়, পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসবে, কী উত্তর  হবে; সেটা শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দেওয়া। বহু বছরের কু–অভ্যাসে আমরা শিক্ষাকে এই স্তরে নিয়ে এসেছি। 

প্রতিটি দেশের একটি শিক্ষা–দর্শন থাকে, যার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ ও ভবিষ্যতে তাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের শিক্ষার নীতিনির্ধারকেরা এর ওপর কখনো জোর দেননি।  অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অনেকের পড়াশোনা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে মেয়েশিক্ষার্থীদের। এটা কেবল পরিবার বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি নয়, মানবসম্পদেরও অপচয়। 

শিক্ষা খাতের প্রতি পূর্বাপর সব সরকারই উদাসীনতা দেখিয়ে আসছে। এমনকি গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারও শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। শিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বস্তরে মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, সময়মতো পাঠ্যবইসহ শিক্ষার সব উপকরণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর মেধাবীরা তখনই এই পেশায় আসবেন, যখন সম্মানজনক বেতন–ভাতা পাবেন। 

এসএসসি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়া ঠেকাতে সরকারকে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ঠকমতো পাঠদান ও মান যাচাই হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করার বিকল্প নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ