রূপালী ব্যাংকে সরকারের মালিকানা বাড়ছে, কমছে সাধারণের অংশ
Published: 1st, July 2025 GMT
রাষ্ট্রমালিকানাধীন রূপালী ব্যাংককে সরকারের দেওয়া প্রায় ৭০০ কোটি টাকার পুনর্ভরণ সহায়তা অবশেষে শেয়ারে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলে অতীতে ব্যাংকটিকে বিভিন্ন সময় দেওয়া নগদ সহায়তা এখন ব্যাংকটির মূলধন হিসেবে যুক্ত হচ্ছে। তাতে রূপালী ব্যাংক প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকার মূলধনি ব্যাংকে পরিণত হবে।
রূপালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার শেয়ারধারীদের এ তথ্য জানানো হয়েছে। কয়েক বছর ধরে ব্যাংকটি সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় নেওয়া অর্থকে শেয়ারে রূপান্তর করে সরকারকে পরিশোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এখন সংশ্লিষ্টদের সম্মতিতে ব্যাংকটির পর্ষদ সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। এখন বাকি ব্যাংকের শেয়ারধারী তথা শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন। এ জন্য আগামী ২৭ আগস্ট বিশেষ সাধারণ সভা বা ইজিএম ডেকেছে ব্যাংকটি। ইজিএমে শেয়ারধারীদের অনুমোদনের পর সরকারের বিপরীতে নতুন করে শেয়ার ইস্যুর জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া হবে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে রূপালী ব্যাংক গতকাল সোমবার শেয়ারধারীদের নতুন শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। ব্যাংকটি জানিয়েছে, সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় নেওয়া আর্থিক সহায়তার বিপরীতে ব্যাংকটি নতুন করে ৪৫ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ২৫৩টি শেয়ার ইস্যু করবে। যার বিপরীতে সরকারের ৬৭৯ কোটি ৯৯ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ টাকার ঋণ শেয়ারে রূপান্তর করা হবে। প্রতিটি শেয়ারের দাম ধরা হয়েছে ১৫ টাকা। এর মধ্যে ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু আর ৫ টাকা প্রিমিয়াম বা অধিমূল্য। নতুন শেয়ার ইস্যুর ফলে ব্যাংকটির মূলধন বাড়বে ৪৫৩ কোটি টাকার বেশি। বাকি প্রায় ২২৭ কোটি টাকা শেয়ার প্রিমিয়াম হিসাবে ব্যাংকটির আর্থিক বিবরণীতে যুক্ত হবে। নতুন এসব শেয়ার ইস্যু করা হবে সরকারের পক্ষে অর্থসচিবের বিপরীতে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, রূপালী ব্যাংকের বর্তমান মূলধন ৪৮৮ কোটি টাকা, যা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৪৮ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৫ শেয়ারে বিভক্ত। নতুন করে ইস্যু করা ৪৫ কোটি শেয়ারের বিপরীতে ৪৫৩ কোটি টাকা মূলধন যুক্ত হলে তাতে ব্যাংকটির মোট মূলধন বেড়ে দাঁড়াবে ৯৪১ কোটি টাকা। আর মোট শেয়ারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৯৪ কোটি ১২ লাখ ৬২ হাজার ৩১৮। এদিকে নতুন শেয়ার ইস্যুর পর শেয়ারবাজারে রূপালী ব্যাংকের লেনদেনযোগ্য শেয়ারের সংখ্যা কমে যাবে। কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের হাতে শেয়ারের পরিমাণ কমবে। এর বিপরীতে সরকারের মালিকানা বেড়ে যাবে। বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের শেয়ারের ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ রয়েছে সরকারের হাতে। বাকি প্রায় ১০ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ আর ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে ব্যাংকটির প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ শেয়ার।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নতুন শেয়ার ইস্যুর পর ব্যাংকটির প্রায় ৯৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা চলে যাবে সরকারের হাতে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানার অংশ কমে ৫ শতাংশে নেমে আসবে। অথচ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ২০২১ সালে একটি বিধান করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, যেসব কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও–পরবর্তী পরিশোধিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকার বেশি হবে, সেসব কোম্পানির ক্ষেত্রে মোট শেয়ারের ন্যূনতম ১০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকতে হবে। ওই বিধান করার পর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ও ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের লেনদেনযোগ্য শেয়ার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। অর্থাৎ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে এই তিন কোম্পানির শেয়ার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। এরই অংশ হিসেবে বার্জার পেইন্টস ও ওয়ালটন তাদের শেয়ারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশ বাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র মো.
এ অবস্থায় বিএসইসি রূপালী ব্যাংককে নতুন করে ৪৫ কোটির বেশি শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে, যেখানে এসব শেয়ার ইস্যু করা হলে ব্যাংকটিতে সাধারণ শেয়ারধারীদের মালিকানার অংশ কমে যাবে। তাই বিএসইসির করা বিধান নিজেরাই মানছে না বলে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও বলা হচ্ছে, রূপালী ব্যাংক সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় অর্থ নিয়েছে। এখন সেই অর্থের বিপরীতে সরকারকে নতুন শেয়ার দিতে হবে। কারণ, সরকারের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ নগদে ফেরত দেওয়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা ব্যাংকটির নেই।
রূপালী ব্যাংকে সরকারের মালিকানার অংশ এমন এক সময়ে বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যখন সরকারি বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারবাজারে আনার নানামুখী চেষ্টা চলছে। সরকারি নতুন কোম্পানি বাজারে আনার পাশাপাশি বিদ্যমান কোম্পানিগুলোর অধিকতর শেয়ার বাজারে ছাড়ার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র ক ছ থ ক ব ভ ন ন সময় শ য় রব জ র র ব পর ত র প ন তর ব এসইস নত ন ক ম লধন
এছাড়াও পড়ুন:
২৮ প্রতিষ্ঠানের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও লস প্রভিশনিংয়ের সময় বৃদ্ধি
পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত ২৮টি মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানকে তাদের নেতিবাচক ইকুইটি ও অবাস্তব লোকসান সমন্বয়ের জন্য অতিরিক্ত সময়সীমা শর্তসাপেক্ষে বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই তালিকায় রয়েছে স্টকব্রোকার, ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকসহ একাধিক বাজার মধ্যস্থতাকারী।
বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার গেজেট প্রকাশ
নর্ডিক বাজারে রেনাটার আমান্টাডিন ওষুধ উন্মোচন
এতে বলা হয়েছে, বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯ নভেম্বর ৯৮২তম ও ১৩ নভেম্বর ৯৮৪তম কমিশন সভায় স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকার কর্তৃক কমিশনের কাছে দাখিল করা বোর্ড অনুমোদিত নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়সংক্রান্ত অ্যাকশন প্ল্যান বিবেচনা করে ২৮টি বাজার মধ্যস্থতাকারীর প্রতিষ্ঠানের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয় করার সময়সীমা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাজার মধ্যস্থতাকারীর প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস, ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজ, ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজ, শাহজালাজ ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ, উত্তরা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, এনসিসিবি সিকিউরিটিজ, আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজ, সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস, ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্টস, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, জিএসপি ইনভেস্টমেন্ট, অগ্রণী ইক্যুইটি, প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট, আইআইডিএফসি ক্যাপিটাল, ইসি সিকিউরিটিজ, যমুনা ব্যাংক ক্যাপিটাল, ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, পূবালী ব্যাংক সিকিউরিটিজ, এমটিবি সিকিউরিটিজ, এবি সিকিউরিটিজ, ফিনিক্স সিকিউরিটিজ, প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজ, এসবিএল ক্যাপিটাল, ট্রাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট, ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট এবং এমটিবি ক্যাপিটাল।
স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকাদের নেগেটিভ ইকুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের প্রভিশন ও সমন্বয়ের সময়সীমা কিছু শর্তসাপেক্ষে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে বর্ধিত সময়ে প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রে স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকারের নিট সম্পদের ঘাটতিসংক্রান্ত বিধান পরিপালনে সাময়িক শিথিলতা থাকবে। এ-সংক্রান্ত কমিশনের আদেশ কমিশনের ওয়েবসাইটের ‘সিকিউরিটিজ ল’ মেনুর ‘সিকিউরিটিজ ল, রুলস, রেগুলেশনসS’ সাব মেনুতে পাওয়া যাবে।
ঢাকা/এনটি/রাসেল