বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু দেশটির সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুতের কী হয়েছে, তা নিয়ে জাতিসংঘ পরিদর্শকদের সামনে জটিল এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের মজুত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কিছু অংশ পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি মাত্রায় ছিল।

পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার আগে ইরান কি সেগুলো গোপনে অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলেছে, নাকি সবই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে?

গত সপ্তাহান্তে ইরানের বড় তিন পারমাণবিক স্থাপনা—ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ওই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংকার–বিধ্বংসী বোমার ব্যবহার করেছে, বিশেষ করে পার্বত্য এলাকায় ভূপৃষ্ঠের অনেক গভীরে অবস্থিত ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাতে এ বোমা ব্যবহার করা হয়।

হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোলাবারুদের আঘাতে ইরানের ওই সব স্থাপনা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।

কিন্তু ট্রাম্পের এ দাবির সঙ্গে একমত হতে পারছে না আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)।

এ হামলা ইরানের জন্য হয়তো তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত গোপন করে ফেলার একটি আদর্শ সুযোগ তৈরি করেছে। এখন এ বিষয়ে আইএইএর যেকোনো তদন্ত সম্ভবত আরও সময়ক্ষেপণকারী ও জটিল হয়ে যাবে।

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থাটি তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর নজরদারি করে। সংস্থাটি বলেছে, ফর্দোতে ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত এ স্থাপনা ইরানের সবচেয়ে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র।

রোববার আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, হামলায় ফর্দোর ভেতরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত সংবেদনশীল সেন্ট্রিফিউজগুলো গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। তবে ইরানের ৯ টন সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম—যার মধ্যে ৪০০ কেজির বেশি পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি মাত্রায় সমৃদ্ধ, তা ধ্বংস হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তেমন কোনো স্পষ্ট তথ্য নেই।

পশ্চিমা দেশগুলো এখন মরিয়া হয়ে ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামগুলো কোথায় গেল, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র

এছাড়াও পড়ুন:

শেষ হলো এক ছাদের নিচে ৩ খাতের প্রদর্শনী

দেশের আবাসন, নির্মাণ, পানি ও বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী আজ শনিবার শেষ হয়েছে। এতে ২০ দেশের দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান এক ছাদের নিচে তিন খাতের প্রায় সব ধরনের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করেছে।

প্রদর্শনীটির আয়োজন করে সেমস গ্লোবাল। এতে ওয়ালটন, এসিআই, রহিমআফরোজ, ওমেরা, এসএসজিসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো তাদের সর্বশেষ পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করেছে। গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী প্রতিদিনই ব্যবসায়ী, গ্রাহক ও দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় বলে জানান আয়োজকেরা।

আজ প্রদর্শনীতে গিয়ে স্টলগুলোতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা দেখা যায়। সবাই ক্রেতা–দর্শনার্থীকে নিজেদের পণ্যসেবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। একই সঙ্গে আগ্রহীদের নাম, মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাখছিলেন বিক্রয় প্রতিনিধিরা। আয়োজকেরা জানান, প্রদর্শনীতে সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক বুথ ও আন্তর্জাতিক প্যাভিলিয়ন ছিল।

ওয়ালটনের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি তাদের নতুন কেব্‌ল পণ্য প্রদর্শন করছে। এ বছরের জানুয়ারিতে কেব্‌লের ব্যবসায়ে আসে দেশীয় টেক ইলেকট্রনিকস প্রতিষ্ঠানটি। এখন দেশের বাজারের পাশাপাশি ৭টি দেশে কেব্‌ল রপ্তানি করছে বলে জানান ওয়ালটনের বিপণন কর্মকর্তা ইদ্রিস মোল্লা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কাসহ সাত দেশে আমাদের পণ্য যাচ্ছে। আমাদের পণ্যের মধ্যে এলিভেটর এবং ক্রেনে ব্যবহার করার কেব্‌ল রয়েছে। তা ছাড়া ফায়ার অ্যালার্ম কেব্‌লও আছে আমাদের।’ প্রদর্শনীতে তাদের লিফটও দেখছেন ক্রেতারা।

এসিআইয়ের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, দেশের ভ্রমণপিপাসুদের কথা চিন্তা করে পোর্টেবল এসির প্রদর্শনী করছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে যাঁরা তাঁবু টাঙিয়ে ক্যাম্প করতে পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য ৫ থেকে ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় তাঁবুর পরিবেশ ঠান্ডা এ গরম করার ব্যবস্থা থাকবে। দেড় ঘণ্টার চার্জে এটি টানা ৮ ঘণ্টা ব্যবহার করা যাবে। তবে পণ্যটি এখনো বাজারে আসেনি। তাই এর দাম সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী নাবিল মোর্শেদ। প্রথম আলোকে তিনি জানান, পণ্যটি চীনে ব্যাপক চলছে। চায়না ইকো ফ্লো কোম্পানির একক পরিবেশক হিসেবে দেশের বাজার যাচাই করার জন্য প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে ১৫ কেজি ওজনের যন্ত্রটি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি চীনের তৈরি ৫০০ ওয়াটের ১ ঘণ্টা ব্যাকআপের আইপিএস প্রদর্শনীতে নিয়ে আসে। এটির দাম ৭৭ হাজার ৯০০ টাকা।

সুপার স্টার কোম্পানি সৌরচালিত সেচপাম্প প্রদর্শনীতে নিয়ে আসে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা জানান, খরচ কমে আসায় এখন কৃষিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এই সোলার পাম্প।

ওমেরা সোলার তাদের তৈরি সোলার প্যানেল নিয়ে আসে। ওমরা সেলারের প্রধান ডিজাইনার আমির হামজা প্রথম আলোকে জানান, এখন দেশের বাজারের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় তাদের সোলার প্যানেল রপ্তানি হচ্ছে। দেশের মধ্যে পাহাড়ি এলাকায় ছোট আকারের সোলার প্যানেল বেশি বিক্রি হচ্ছে।

প্রদর্শনীর আবাসন অংশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রকল্পগুলো নিয়ে আসে। তাদের আবাসিক ভবন ছাড়াও বিভিন্ন হোটেল এবং রিসোর্টে বিনিয়োগের জন্য ক্রেতা–দর্শনার্থীদের নানা অফার দিতে দেখা যায়। কুয়াকাটায় পাঁচ তারকা মানের হোটেল তৈরি করছে ম্যানগ্রোভ ইকো রিসোর্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ৫০ শতাংশ শেয়ারের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার ইউনিটের মালিকানা বিক্রি করছে তারা। ৪ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকায় এই হোটেলের মালিকানা নেওয়ার অফার করা হয় প্রদর্শনীতে।

প্রদর্শনীর পানির অংশে বিভিন্ন পণ্যের সমাহার দেখা যায়। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে অফিস কিংবা কারখানার সুপেয় পানি বিশুদ্ধকরণের নানা প্রযুক্তি নিয়ে হাজির হয়েছিল বিভিন্ন কোম্পানি। ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিভিন্ন মানের পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানগুলো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেষ হলো এক ছাদের নিচে ৩ খাতের প্রদর্শনী