সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সমাজে যেভাবে নারী ও শিশু নিগ্রহের ঘটনা বেড়ে চলেছে, সেটা ভীষণ রকম উদ্বেগজনক। গত বৃহস্পতিবার রাতে মুরাদনগরে যে বর্বরোচিত ঘটনাটি ঘটল, তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। একজন নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ এবং সেই ঘটনার শিকার নারীকে একদল লোকের লাঞ্ছনা এবং তাঁর নগ্ন ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘৃণ্য ঘটনা কোনো সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই নারীর নিগ্রহের পেছনে দারিদ্র্য ও সুদের ব্যবসাও একটি কারণ। ভুক্তভোগী নারীর পরিবার সুদে নেওয়া টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে পারেনি। অভিযুক্ত ফজর আলী ভুক্তভোগী নারীর ঘরের দরজা ভেঙে তাঁকে ধর্ষণ করেন। অন্যদিকে সেই ঘটনা জানতে পেরে একদল যুবক ঘরে ঢুকে ভুক্তভোগী নারীকে মারধর এবং তাঁর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেছেন, ঘটনার পর থেকে অনেকেই ঘটনাকে পরকীয়া বলে প্রচার করেছে। প্রাথমিক তদন্তে এমন তথ্য নিশ্চিত করা যায়নি। প্রকৃত অর্থেই ওই নারী পাশবিক অত্যাচারের শিকার হয়েছেন।
মুরাদনগরে নারী নিগ্রহের খবরটি ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীসহ নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে এ ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তঁারা।
এদিকে ঘটনা আমলে নিয়ে ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নারীর ছবি ও ভিডিও সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও কনটেন্ট দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে নারী সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট’। আইন ও সালিশ কেন্দ্র এক বিবৃতিতে ঘটনাটিকে নারীর প্রতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণকে আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে।
বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন যথাক্রমে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত অধ্যাদেশ ২০২৫)-এর ৯(১) ধারায় ধর্ষণ অপরাধকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং ১৪ ধারায় অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্যাতনে ভুক্তভোগী নারীসংশ্লিষ্ট যেকোনো তথ্য বা ছবি প্রকাশকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
এখানে অপরাধীরা কেবল নারী নিগ্রহের ঘটনা ঘটাননি, তঁারা সামাজিকভাবে অপদস্থ করতে তাঁর নগ্ন ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে এই নারীকে অপমান করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলী ও ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপর চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্যই তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন গ রহ র অপর ধ ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণ-নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি বাম গণতান্ত্রিক জোটের
কুমিল্লার মুরাদনগরে এক হিন্দু নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে জোটের নেতারা এ দাবি জানান। বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী—এই বিবৃতি দেন।
মুরাদনগরে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ফজর আলী ও তাঁর সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ঘরের দরজা ভেঙে ধর্ষণ, নির্যাতন এবং তা ভিডিও করে প্রচারের মতো বর্বর ঘটনা কোনো সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না।
নেতারা বলেন, এমন ভয়াবহ ঘটনা প্রতিরোধে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। একই সঙ্গে সারা দেশে নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, অতীতে সংঘটিত দলবদ্ধ ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। তাঁরা বলেন, জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানে নারীরা যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে তাঁদেরকেই সামাজিকভাবে হেনস্তা ও নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। অথচ রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষ থেকে এসব ঘটনা রোধে কোনো দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২৬ জুন ঘটনাটি ঘটলেও সামাজিক মাধ্যমে আসার আগপর্যন্ত জনসাধারণ তা জানতে পারেনি, এটা সরকারের ব্যর্থতা এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার পরিচায়ক।
নেতারা নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে এবং স্থানীয় পর্যায়ে সচেতন জনগণকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।