গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, আরও ৯৫ ফিলিস্তিনি নিহত
Published: 1st, July 2025 GMT
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতা চলছেই। বাদ যাচ্ছে না সেখানে অবস্থিত ক্যাফে, স্কুল ও ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র। ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান সাম্প্রতিক হামলায় আরও ৯৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে।
স্থানীয় সময় সোমবার গাজা শহর ও উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় এসব হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে শুধু আল-বাকা নামে এক সমুদ্র তীরবর্তী ক্যাফেতেই নিহত হন ৩৯ জন। খবর আল জাজিরারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের পূর্বসতর্কতা ছাড়াই সেখানে যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলা হয়। ক্যাফেটিতে নারী ও শিশুসহ অনেকেই জড়ো হয়েছিলেন একটি জন্মদিন উদযাপন করতে। সেখানে নিহতদের মধ্যে এক সাংবাদিকও রয়েছেন। তার নাম ইসমাইল আবু হাতাব।
এদিকে গাজা শহরের ইয়াফা স্কুলে আশ্রয় নেওয়া কয়েকশ বাস্তুচ্যুত মানুষের ওপরও হামলা চালানো হয়। আবু জারাদে নামের একজন জানান, তারা হামলার মাত্র পাঁচ মিনিট আগে সরে যাওয়ার নোটিশ পান। তিনি বলেন, আমরা কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। গত ৬৩০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আমরা কোনো সাহায্য পাইনি। প্রতিদিন মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছি।
এছাড়া মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-আকসা শহীদ হাসপাতাল চত্বরে চালানো আরেক হামলায় আহত হন আরও অনেকে। সেখানে কয়েক হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। হামলার সময় আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে বিশৃঙ্খলা। অনেকেই দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। হাসপাতালটিতে এর আগেও অন্তত ১০ বার হামলা হয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, ত্রাণের আশায় দাঁড়ানো মানুষকে লক্ষ্য করেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিসে বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’-এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাবারের জন্য অপেক্ষারত মানুষের ওপর চালানো হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হন এবং ৫০ জন আহত হন।
ইসরায়েলের এই হামলার শিকার অধিকাংশই ছিলেন ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়ানো সাধারণ ফিলিস্তিনি। জিএইচএফ গত মে মাসের শেষ দিকে সীমিত পরিসরে গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে এসব কেন্দ্রে প্রায় প্রতিদিনই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এখন পর্যন্ত এসব হামলায় অন্তত ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৪ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনাদের সরাসরি নিরস্ত্র ত্রাণপ্রার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে বলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সেনা জানিয়েছেন, অনেক সময় কোনো হুমকি না থাকলেও ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও সহিংসতার নির্দেশ দেওয়া হয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় ত্রাণের আটার বস্তায় আফিমজাত ট্যাবলেট
গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল পরিচালিত ‘বিতর্কিত’ ত্রাণ সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মাধ্যমে বিতরণ করা আটার বস্তায় আফিমজাত ওষুধ ‘অক্সিকোডন’ ট্যাবলেট পাওয়া গেছে। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু, মিডল ইস্ট আই ও ডেইলি সাবাহর প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, আমরা এখন পর্যন্ত চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছি, যারা এই ট্যাবলেটগুলো আটার বস্তার ভেতর পেয়েছেন। সম্ভবত এই মাদকদ্রব্যগুলোর কিছু অংশকে গুঁড়া করে ইচ্ছাকৃতভাবে আটার মধ্যে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
ওষুধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অক্সিকোডন একটি আফিম জাতীয় ওষুধ, যা তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা উপশমের কাজ করে। সাধারণত ক্যান্সার রোগীদের এই ওষুধ সেবন করতে দেওয়া হয়। ওষুধটি অত্যন্ত আসক্তিকর এবং গ্রহীতার ওপর শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা, দৃষ্টিবিভ্রমসহ প্রাণঘাতী প্রভাব ফেলতে পারে।
একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ত্রাণের আটার বস্তায় অক্সিকোডন ট্যাবলেট পাওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে বিবৃতি দেয় গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। ফিলিস্তিনি ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ এ ঘটনাকে ‘গণহত্যার সবচেয়ে নিকৃষ্ট রূপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গাজার ফিলিস্তিনি চিকিৎসক খলিল মাজেন আবু নাদা ফেসবুকে এই ওষুধ সম্পর্কে পোস্ট করে বলেছেন, ‘এটি আমাদের সামাজিক চেতনা নিশ্চিহ্ন করার একটি মাধ্যম।’ এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলকে দায়ী করেছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোকে ‘মৃত্যুফাঁদ’ হিসেবে উল্লেখ করে তারা আরও বলছে, অবরোধের সুযোগ নিয়ে এই পদার্থগুলোকে ‘ত্রাণ ও সহায়তা’ হিসেবে পাচার করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গত বুধবার ১৫টি মানবাধিকার ও আইনি সংস্থা জিএইচএফের কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, এটি আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে দুর্বল করছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি’ ত্বরান্বিত করছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ‘যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা গণহত্যা’ হিসেবে গণ্য হতে পারে। এ বিষয়ে জানতে মিডল ইস্ট আইয়ের পক্ষ থেকে জিএইচএফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি।