ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে আজকাল মানুষ বেশি ঝুঁকছে প্রাকৃতিক, পরিবেশবান্ধব আর দেশীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি হোম ডেকরের দিকে। এই চাহিদার অন্যতম সুন্দর সমাধান হতে পারে শিকা বা হ্যাঙ্গার। সহজভাবে বললে এটি একটি ঝুলন্ত সাজানোর উপায়; যা ঘরের প্রতিটি কোণকে করে তোলে শিল্পময় ও মনোমুগ্ধকর।
শিকা মূলত পাট, ম্যাক্রামে বা প্রসেসড রঙিন/সাদাকালো দড়ি দিয়ে তৈরি হয়। পাট দিয়ে তৈরি শিকাগুলো আমাদের দেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। এগুলো দেখতে যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব। অন্যদিকে তুলার দড়ি বা সুতা দিয়ে তৈরি ম্যাক্রামে শিকা বর্তমানে খুবই জনপ্রিয়। এগুলোর জ্যামিতিক নকশা ও গিঁটের কাজ ঘরে আনে একটি বোহেমিয়ান ও আধুনিক ছোঁয়া। এ ছাড়া বাজারে পাওয়া যায় রঙিন ও প্রসেসড দড়ি দিয়ে তৈরি শিকা; যেগুলো শিশুদের রুম বা রঙিন কোনো থিমে সাজানো ঘরের জন্য দারুণ মানানসই।
শিকা দিয়ে কীভাবে ঘর সাজাবেন?
বেডরুমে আপনি শিকায় ছোট আয়নাঘর, অ্যারোমা বোতল বা শুকনো ফুল ঝুলিয়ে দিতে পারেন; যা ঘরে এনে দেবে অন্যরকম এক সৌন্দর্য। ড্রইংরুমে ম্যাক্রামে বা দড়ির শিকায় পটেড প্লান্ট, লাইট কিংবা ফটোফ্রেম ঝুলিয়ে তৈরি করতে পারেন ওয়াল গ্যালারি লুক। ব্যালকনিতে পাটের মোটা দড়ির শিকায় ক্যাকটাস, মানি প্লান্ট বা বোতল গাছ রেখে তৈরি করতে পারেন ছোট্ট এক কোনা বাগান। রান্নাঘরে শক্ত দড়ি দিয়ে বানানো শিকায় ছোট ছোট কাচের জার, কাপ, চা-পাতার কৌটা কিংবা রান্নার টুলস ঝুলিয়ে রাখলে কাজের সুবিধাও হবে, ঘরটাও ভিন্নভাবে সাজানো হবে। এমনকি বাথরুমেও শিকায় তোয়ালে, ব্রাশ স্ট্যান্ড বা স্যানিটারি জিনিস ঝুলিয়ে গুছিয়ে রাখা যায় বেশ স্টাইলের সঙ্গে। বাথরুম যদি একটু বড় হয়, এক কর্নারে সিলিংয়ের পাশ থেকে ঝুলিয়ে দিতে পারেন কোনো ইনডোর প্লান্ট বসানো একটা টবসহ শিকা।
শিকাগুলোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এগুলো ঘরের যে কোনো জায়গায় ব্যবহার করা যায়। ঘরের যে কোনো খালি জায়গায় শিকা ব্যবহার করে সহজেই একটা ‘ন্যাচারাল টাচ’ আনা যায়। এতে খরচ কম, এগুলো স্থাপন করা সহজ এবং ঘরের চেহারাই বদলে যায়। সেই সঙ্গে আপনি দেশীয় হস্তশিল্পকেও উৎসাহ দিচ্ছেন; যা আজকের এ আর্টিফিশিয়াল দিনে খুবই দরকার।
শিকা কোথায় পাওয়া যায়?
দেশজ পণ্যের দোকান, হস্তশিল্প মেলা কিংবা লোকশিল্প উৎসবগুলোয় আপনি সহজেই নানা রকম শিকা খুঁজে পাবেন। এখন ঘরে বসেই অনলাইনে কেনা সম্ভব। অনেক ফেসবুক পেজ, ইনস্টাগ্রাম শপ এবং হোম ডেকর সাইটে নানা ডিজাইনের হ্যান্ডমেইড শিকা পাওয়া যায়। এসব সাইটে লোকাল আর্টিসান বা হস্তশিল্প কারিগররা নিজেদের হাতে বানানো পাট, ম্যাক্রামে এবং রঙিন দড়ির শিকা সরবরাহ করেন সারাদেশে এবং দেশের বাইরেও। বিভিন্ন ধরনের শিকা এখন দেখা যায় এসব অনলাইন সাইটে। আবার অনেকে কাস্টমাইজ করেও বানিয়ে নেন বিভিন্ন হ্যান্ডিক্রাফটের দোকান বা পেজ থেকে।
‘আই অ্যান্ড উই হ্যান্ডিক্রাফট’-এর কর্ণধার সোহরাওয়ার্দী মিয়া বলেন, ‘আমরা শুধু পাটের শিকা বানাই না, বরং তুলার সুতা, ম্যাক্রামে এবং নানা ধরনের দড়ি দিয়ে নানা ডিজাইনের হ্যাঙ্গার বানিয়ে থাকি। প্রতিটি শিকা আমাদের হাতে তৈরি। চাইলে কাস্টম ডিজাইনেও অর্ডার নেওয়া হয়। প্রতিটি শিকার মাধ্যমে আমরা ঘরে একটা দেশীয় সৌন্দর্য পৌঁছে দিতে চাই।’
ঘর সাজানো মানেই শুধু দামি আসবাব নয়, ছোট ছোট জিনিস দিয়েও ঘরে আনা যায় সৌন্দর্য ও আপনিত্ব। পাট, দড়ি ও সুতা দিয়ে তৈরি একখানা শিকা শুধু দেয়াল বা কোণ নয়, বদলে দিতে পারে আপনার পুরো ঘরের পরিবেশ। হাতে তৈরি এসব শিকার প্রতিটিতে মিশে থাকে একজন কারিগরের মমতা আর দেশীয় হস্তশিল্পের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঘর ত র স ন দর ঘর স জ
এছাড়াও পড়ুন:
বর্ণিল আয়োজনে ঢাবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জাসহ বর্ণিল আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল, হোস্টেল ও প্রশাসনিক ভবন থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারীদের নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।
সকাল ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সম্মুখের পায়রা চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলোর পতাকা উত্তোলন এবং কেক কাটা হয়। টিএসসি মিলনায়তনে ‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। অনুষ্ঠানে একটি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে উপাচার্য ভবন, কার্জন হল, কলা ভবন, টিএসসিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সড়কে আলোকসজ্জা করা হয়।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক, সভ্যতা গঠনের শিকড় ও স্বাধীনতার জাগরণ গাথা।
অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে এটির অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈশিষ্ট্য। এখানে ধনী-গরিব, শহর-গ্রাম, নারী-পুরুষ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ-সংখ্যালঘু– সবাই পেয়েছেন সমান মর্যাদা। এখানে প্রতিটি কণ্ঠের রয়েছে মূল্য, প্রতিটি স্বপ্নের রয়েছে ছুঁয়ে দেখার অধিকার। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মই হয়েছিল বৈষম্য দূরীকরণের তাগিদে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় মাত্র ৬০ জন শিক্ষক ও ৮৭৭ শিক্ষার্থী নিয়ে। আজ সেই প্রতিষ্ঠান পরিণত হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং শিক্ষক আছেন প্রায় দুই হাজার। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে ২০০টি প্রতিষ্ঠান। এতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়নেও আমরা দায়বদ্ধ। যারা গণঅভ্যুত্থানে রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে, তারা আমাদের কাঁধে কিছু দায়িত্ব রেখে গেছেন। সেই দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে বিশ্বাস ও সহযোগিতার বন্ধন অটুট রাখা।
উপাচার্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা কখনও শুধু একাডেমিক পরিসরে সীমাবদ্ধ ছিল না। ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১ এবং ১৯৯০-এর প্রতিটি আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান ইতিহাসে গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান আমাদের সংগ্রামের নতুন অধ্যায়। দেশের মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভরসা রেখেছে বলেই প্রতিটি ক্রান্তিকালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকে সাড়া দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জাতীয় সংগীত ও উদ্দীপনামূলক দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হয়। এ ছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সংগীত পরিবেশিত হয়। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।