যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য সারা আলী খানের পরামর্শ
Published: 15th, January 2025 GMT
বলিউড অভিনেত্রী সারা আলী খানের সৌন্দর্য যে কাউকে মোহিত করে। যদিও এক সময় স্থূলতার জন্য মানুষের কটাক্ষ শুনতে হয়েছে তার। এই নায়িকার ওজন ছিল ৯৬ কেজি। সে সময় তিনি বি-টাউনে পরিচিত ছিলেন সাইফ আলীর কন্যা হিসেবে। শোবিজে পা রাখার আগে নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার জোর চেষ্টা শুরু করেন সারা।
একটি সাক্ষাৎকারে সারা জানান, করণ জোহর সারাকে একটি চরিত্রের জন্য ভেবেছিলেন। তবে তিনি শর্ত দিয়েছিলেন সারাকে তার অর্ধেক ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে। যদিও সারা আলী খান প্রথম সিনেমা করেন ২০১৮ সালে। অভিষেক কাপুর পরিচালিত ‘কেদারনাথ’ সিনেমায় সারার বিপরীতে ছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। করণ জোহর কোন সিনেমা আর কোন চরিত্রে সারা আলী খানকে ভেবে রেখেছেন তা এখন অস্পষ্ট। কিন্তু সারা আলী খান এগিয়ে গেছেন অনেক দূর। বলিউডে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন অভিনয় ও সৌন্দর্যগুণে। করণ জোহরের সিনেমায় অভিনয় করার ইচ্ছা থেকেই স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে ওঠেন সারা।
অভিনেত্রী জানিয়েছেন, তার বাড়তি ওজনের জন্য শুধুমাত্র খাবার দায়ী ছিল না, এজন্য দায়ী ছিল হরমোন। হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে শুরু করেন। এর পাশাপাশি কড়া ডায়েট এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করেছেন।
আরো পড়ুন:
যে অভ্যাসগুলো তারুণ্য ধরে রাখে
আজ ‘ধন্যবাদ জানানোর দিন’
সারার পরামর্শ, মেদ ঝরাতে হলে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শতবর্ষের শিক্ষালয়
উপমহাদেশে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৬৪ বছরের মধ্যে (১৮৫৭-১৯২১) প্রতিষ্ঠিত ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাকাল বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপমহাদেশে ১২তম, অবিভক্ত বাংলায় দ্বিতীয় আর পূর্ববঙ্গে প্রথম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ভারতভাগ পর্যন্ত আরও অন্তত ২৬ বছর ব্রিটিশরা শাসন করে। এই ২৬ বছরে (১৯২২-১৯৪৭) তারা আরও চারটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন করে। সব শেষ প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় চারটি হলো: দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় (দিল্লি ১৯২২), নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয় (মহারাষ্ট্র ১৯২৩), অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় (বিশাখাপত্তম, অন্ধ্রপ্রদেশ ১৯২৬) ও আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় (উত্তরপ্রদেশ ১৯২৭)।
ঢাকা ছাড়া ব্রিটিশ আমলে পূর্ববঙ্গে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের গোড়াপত্তন ঘটেনি, এমনকি পাকিস্তান অঞ্চলেও না। সর্বশেষ আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার (১৯২৭) পর ইংরেজ শাসন আরও ২০ বছর স্থায়ী হয়। এ সময়ে (১৯২৭-১৯৪৭) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অন্য সবকিছুর তুলনায় স্বরাজ-স্বায়ত্তশাসন-স্বাধীনতার প্রশ্নটি বড় হয়ে ওঠে। আন্দোলন-সংগ্রামের নানা কর্মসূচিতে সরকারও থাকে ব্যতিব্যস্ত। ভারতকে ভাগ করে কীভাবে পৃথক দুই নেতৃত্বের হাতে তুলে দিয়ে সসম্মানে বিদায় হওয়া যায়, এটি তাদের ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত হয়। তা না হলে ইংরেজ শাসনের শেষের দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এমন ছেদ পড়ার কথা নয়।
এ বিশ্ববিদ্যালয় এই ভূখণ্ডে বহু ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনকারী হলেও এটি নিজেই এখনও বিভিন্ন কাঠামোগত সংকট, রাজনৈতিক দলীয়করণ, আবাসন সংকট ও প্রশাসনিক অদক্ষতার মতো মৌলিক সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষ করে এ প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ও গবেষণাভিত্তিক উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রে রূপ দেওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা, তার বাস্তবায়ন সুদূরপরাহত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ১ হাজার ৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। শিক্ষার্থীদের মতে, এই বরাদ্দ বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যতের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
গত ১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। দৈনিক ইত্তেফাকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ উপলক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান গবেষণা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘বৃহত্তর অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে গবেষণা খাতকে সমৃদ্ধ করতে চাই। বাজেট বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক মানের গবেষক তৈরিসহ গবেষণাকে প্রাধান্য দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’ তিনি ‘পঠন-পাঠন ও গবেষণাকে রাজনৈতিক মতাদর্শের বাইরে রাখতে’ চান। ‘শিক্ষার্থীদের রাজনীতি থাকবে, তবে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে, কোনো বহিঃপ্রভাব নয়’, বলেছেন তিনি। উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমরা বৈষম্যহীন অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ তৈরি করতে চাই। বহু মানুষের রক্তের ওপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি। দেশের এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দেশপ্রেমিক প্রজন্ম উপহার দিয়ে জাতির দায় এড়াতে চাই।’
শিক্ষার্থীরাও মনে করছেন, একটি মুক্ত, সৃজনশীল এবং গবেষণাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সময় এসেছে। তাদের প্রত্যাশা– আধুনিক ল্যাব, মানসম্মত আবাসন, সময়োপযোগী পাঠদান ও গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ হোক। তাদের মত, ‘রাজনীতির ভয় নয়, জ্ঞানের আধিপত্য চাই। গেস্টরুম কিংবা গণরুমের পরিবর্তে গ্রন্থাগার হোক আমাদের নির্ভরতার জায়গা।’
সেই ব্রিটিশ আমলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ অভিধায় ভূষিত হয়। নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির এগিয়ে চলা। চলার পথে অনেক ক্ষেত্রে গতিও হারিয়েছে কখনও কখনও। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস নয়, এটি একটি জাতির আত্মবিকাশের কাহিনি। প্রধানত এই প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসা লোকেরাই বাংলাদেশ চালাচ্ছে। বিশেষত পাকিস্তানি প্রায়-ঔপনিবেশিক আমলে এ বিশ্ববিদ্যালয় বাতিঘরের ভূমিকা পালন করেছে। শুধু তা কেন, সর্বশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও একই ভূমিকা রেখেছে গর্বের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিমল সরকার: অবসরপ্রাপ্ত
কলেজ শিক্ষক