কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ২টি রিসোর্ট। পুড়ে যাওয়া রিসোর্টগুলো হলো- বীচ ভ্যালি এবং কিংশুক ইকো রিসোর্ট।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২টা ১০ মিনিটের দিকে সাইরী ইকো রিসোর্টের রিসেপশনে মাল্টি প্লাগের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। পরে দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক এবং যৌথ বাহিনীর প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

আবদুল মালেক বলেন, ‘‘বাতাসের কারণে সাইরী ইকো রিসেপশনের পেছনে অবস্থিত বীচ ভ্যালী ইকো রিসোর্টে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি হওয়ায় মুহূর্তেই পুরো রিসোর্টটি পুড়ে যায়। পরে আগুন পাশের কিংশুক ইকো রিসোর্টেও ছড়িয়ে পড়ে এবং সেটিও সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়।’’

আরো পড়ুন:

সাভারে চার জন নিহতের ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্স ও বাসের চালক গ্রেপ্তার

সাভারে আগুনে পুড়ে নিহত ৪ জন এক পরিবারের

কিংশুক ইকো রিসোর্টের মালিক সরওয়ার আহমেদ বলেন, “বহুদিন পর স্ত্রী ও ছোট বাচ্চাদের নিয়ে সেন্টমার্টিনে এসেছি। কিন্তু, তাদের সামনেই আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটি পুড়ে শেষ হয়ে গেল।”

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘সেন্টমার্টিনের এই অগ্নিকাণ্ডে স্থানীয় পর্যটনশিল্পে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত রিসোর্ট মালিকরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা, প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাটি তদন্ত করছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘এ ঘটনায় রিসোর্ট মালিকদের পাশাপাশি দ্বীপের পর্যটন ব্যবসায় জড়িত সবাই উদ্বিগ্ন। দ্বীপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো উন্নত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’’

এ বিষয়ে জানতে ফায়ার সার্ভিসে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা/তারেকুর/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

চাষিদের রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিন

ভরা মৌসুমে টানা ১৫ দিন মাঠে নেই কক্সবাজারের লবণচাষিরা। উৎপাদন খরচের প্রায় অর্ধেক দামে লবণ বিক্রি করে লোকসান দিতে চান না কেউ। পরিস্থিতি বিচার করলে স্পষ্ট বোঝা যায়, লবণশিল্প ও চাষিরা দাঁড়িয়ে আছেন এক গভীর সংকটের মুখে।

প্রথম আলোর খবরে এসেছে, লবণ চাষের প্রয়োজনীয় জমির ইজারামূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ৭০-৮০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। অন্যদিকে গত মৌসুমে উৎপাদিত লবণের দাম বাজারে না ওঠায় চাষিরা লোকসানে পড়েছেন। উৎপাদন খরচ যেখানে প্রতি মণে প্রায় ৪০০ টাকা, সেখানে বাজারদর নেমে এসেছে ২৩০ টাকায়। ফলে অনেক চাষিই নতুন মৌসুমে মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছেন। এ পরিস্থিতি শুধু চাষির জীবিকাকেই হুমকিতে ফেলে না, দেশের লবণশিল্প ও খাদ্যনিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়।

দেশে বার্ষিক লবণের চাহিদা ২৭ লাখ টনের কাছাকাছি। অথচ মাঠে এখনো আগের মৌসুমের সাড়ে পাঁচ লাখ টন লবণ মজুত রয়ে গেছে। নতুন মৌসুমে উৎপাদন বিলম্বিত হলে ডিসেম্বর নয়, জানুয়ারিতেই দেশে লবণের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এমন আশঙ্কা করছেন বিসিকের কর্মকর্তারাও। পরিস্থিতি এমন হলে সরকারকে বাধ্য হয়ে লবণ আমদানির দিকে ঝুঁকতে হবে। ইতিমধ্যে দেড় লাখ টন আমদানির আবেদন জমা পড়েছে, যদিও প্রান্তিক চাষিদের স্বার্থ বিবেচনায় সরকার আবেদনগুলো স্থগিত রেখেছে। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতা বজায় থাকলে সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে।

সরকারের এখন জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর মনিটরিং চালু করতে হবে এবং প্রান্তিক চাষিদের জন্য ন্যূনতম মূল্য ঘোষণার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, লবণ চাষের জমির ইজারামূল্য নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে, যাতে অযৌক্তিক ইজারা বৃদ্ধির কারণে চাষ বাধাগ্রস্ত না হয়। তৃতীয়ত, লবণ সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ জরুরি। প্রয়োজনে কৃষিঋণ ও ভর্তুকিও দেওয়া যেতে পারে।

লবণ আমদানি বন্ধ, উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্যসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজারের চাষিরা। তাঁদের দাবিগুলো দীর্ঘদিনের বঞ্চনার প্রতিফলন। এসব দাবি বাস্তবায়ন হলে চাষে স্থিতিশীলতা ফিরবে। লবণশিল্পে সাত লাখ মানুষের জীবিকা জড়িয়ে আছে। তাঁদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় দ্রুত, সমন্বিত ও কার্যকর সরকারি পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।

আমরা আশা করি, লবণ চাষের সংকট সমাধানে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে সরকার। নয়তো যেমন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে দেশের লবণশিল্প, তেমনই সেই সংকট নিরসনে লবণ আমদানি করা হলে তা হবে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের দেশের জন্য চূড়ান্ত লজ্জার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ