সেন্টমার্টিনে আগুনে পুড়ে ছাই ২ রিসোর্ট
Published: 15th, January 2025 GMT
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ২টি রিসোর্ট। পুড়ে যাওয়া রিসোর্টগুলো হলো- বীচ ভ্যালি এবং কিংশুক ইকো রিসোর্ট।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২টা ১০ মিনিটের দিকে সাইরী ইকো রিসোর্টের রিসেপশনে মাল্টি প্লাগের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। পরে দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক এবং যৌথ বাহিনীর প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আবদুল মালেক বলেন, ‘‘বাতাসের কারণে সাইরী ইকো রিসেপশনের পেছনে অবস্থিত বীচ ভ্যালী ইকো রিসোর্টে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি হওয়ায় মুহূর্তেই পুরো রিসোর্টটি পুড়ে যায়। পরে আগুন পাশের কিংশুক ইকো রিসোর্টেও ছড়িয়ে পড়ে এবং সেটিও সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়।’’
আরো পড়ুন:
সাভারে চার জন নিহতের ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্স ও বাসের চালক গ্রেপ্তার
সাভারে আগুনে পুড়ে নিহত ৪ জন এক পরিবারের
কিংশুক ইকো রিসোর্টের মালিক সরওয়ার আহমেদ বলেন, “বহুদিন পর স্ত্রী ও ছোট বাচ্চাদের নিয়ে সেন্টমার্টিনে এসেছি। কিন্তু, তাদের সামনেই আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটি পুড়ে শেষ হয়ে গেল।”
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘সেন্টমার্টিনের এই অগ্নিকাণ্ডে স্থানীয় পর্যটনশিল্পে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত রিসোর্ট মালিকরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা, প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাটি তদন্ত করছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘এ ঘটনায় রিসোর্ট মালিকদের পাশাপাশি দ্বীপের পর্যটন ব্যবসায় জড়িত সবাই উদ্বিগ্ন। দ্বীপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো উন্নত করার জন্য কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’’
এ বিষয়ে জানতে ফায়ার সার্ভিসে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
ঢাকা/তারেকুর/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শক্ত হস্তে দমনই সংগত
দেশে অব্যাহত মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাইয়াছে, উহা সংগত। আমরাও মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের ১০ মাসাধিকাল পরেও উচ্ছৃঙ্খল জনতা এইভাবে আইন স্বীয় হস্তে তুলিয়া লইতে পারে না। চট্টগ্রামের পটিয়া, কুমিল্লার মুরাদনগর, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, ফরিদপুরসহ সমগ্র দেশে ‘মব সন্ত্রাস’ অব্যাহত থাকিবার কারণে উক্ত রাজনৈতিক জোট ও দলগুলি শুক্রবার পৃথক বিবৃতি দিয়া উদ্বেগ প্রকাশের পর সংশ্লিষ্টদের নিদ্রাভঙ্গ হইবে বলিয়া আমরা প্রত্যাশা করি।
সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমসূত্রে আমরা দেখিতেছি, শুধু গত সপ্তাহেই মব সন্ত্রাসের বলি হইয়াছেন ছয়জন মানুষ। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির হিসাব অনুসারে, গত বৎসরের ৫ আগস্টের পর হইতে ১০ মাসে অন্তত ১৪৩ জন মব সন্ত্রাসে প্রাণ হারাইয়াছেন। অপর মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মতে, সংখ্যাটা ১৭৯। এই একই সময়ে মব সৃষ্টি করিয়া অনেক মাজার ও আখড়া ভাঙিবার পাশাপাশি ভিন্ন মতাবলম্বীদের উপরও হামলা হইয়াছে। ধর্মীয় ও নৃগোষ্ঠীগত সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতন চলিয়াছে, নারীর ক্রীড়া আয়োজন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পণ্ড হইয়াছে। পাঠাগারও পায় নাই রেহাই। একই বেআইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভাঙার ঘটনাও অব্যাহত রহিয়াছে।
দুর্ভাগ্যবশত, এই সকল ঘটনার বহুলাংশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করিয়াছে। কোনো কোনো ঘটনায় পুলিশ নিজেও মব সন্ত্রাসের শিকার হইয়াছে। এই ক্ষেত্রে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ নিজেরাই চাপের মুখে রহিয়াছে, সত্য; কিন্তু মূলধারার রাজনৈতিক দলসমূহের ভূমিকাও বিস্ময়ের জন্ম দেয় বৈকি। অন্যদিকে, মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকার নিছক বিবৃতি দিয়াই দায়িত্ব শেষ করিতে চাহিয়াছে। সরকার যদি আন্তরিকভাবেই পুলিশকে স্বাধীনভাবে তাহার দায়িত্ব পালন করিতে দিত তাহা হইলে ঘটনাগুলি এড়ানো যাইত বলিয়া আমরা মনে করি। ইহাও উল্লেখ করা প্রয়োজন, যেই পুলিশকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের আন্দোলন বন্ধে ইতোমধ্যে বেশ তৎপর দেখা গিয়াছে, সেই পুলিশের মব সন্ত্রাসের ঘটনা নীরবে সহ্য করিবার কথা নহে।
এই কথা আমরা পূর্বেও বলিয়াছি, কোনো অন্যায় বা অবিচারের বিরুদ্ধে জনরোষ এক কথা আর মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে কাহারও বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা চরিতার্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন। উপরন্তু, আইনের শাসন রহিয়াছে এইরূপ কোনো রাষ্ট্রে কোনো অবস্থাতেই কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হস্তে আইন তুলিয়া লইবার সুযোগ নাই। একটা রাষ্ট্রে বা সমাজে যখন দীর্ঘদিন ধরিয়া মব সন্ত্রাস চলে, তখন সেইখানকার সমাজও মাৎস্যন্যায়ে ভরিয়া যায়। শুভ বোধসম্পন্ন নাগরিকগণ এই পরিস্থিতি কামনা করিতে পারে না। তাই মব সন্ত্রাসসহ সকল সহিংসতা বন্ধে অবিলম্বে সরকারকে যদ্রূপ জাগিয়া উঠিতে হইবে তদ্রূপ রাজনৈতিক দলসমূহকেও দায়িত্বশীল আচরণ করিতে হইবে। সমাজের সচেতন মানুষেরও সক্রিয় হইবার প্রয়োজন রহিয়াছে বৈকি।