সোমবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদনমতে, এ পর্যন্ত সরকারিভাবে সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা নিয়ে গাড়ি কিনেছেন ৪ হাজার ২০০ আমলা। এ সত্ত্বেও বেশির ভাগ কর্মকর্তা অবৈধভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এতে প্রতি মাসে চালক, রক্ষণাবেক্ষণ ও আনুষঙ্গিক খরচ হচ্ছে ২১ কোটি টাকা। সে হিসাবে বার্ষিক খরচ দাঁড়ায় ২৫২ কোটি টাকা।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সচিবদের জন্য গাড়ি ক্রয়ে সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা চালু করে। মূলত আমলাদের বাগে আনতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের জন্য নানা সুবিধার বন্দোবস্ত করেছিলেন। এটি ছিল তারই ধারাবাহিকতা। প্রতিবেদনে সাবেক এক সচিব এ নীতিকে ঘুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যখন গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধিত্বকারী সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ওঠে, তখন তা অত্যন্ত বেদনা ও হতাশার।
প্রতিবেদনমতে, উপদেষ্টাদের কারও কারও বিরুদ্ধে তিন-চারটি গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম দুটি গাড়ি ব্যবহার করছেন। তাঁর জন্য চালক বরাদ্দ রয়েছে ৩ জন। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ একাই ব্যবহার করছেন তিনটি গাড়ি। এভাবে অনেকেই একাধিক গাড়ি ব্যবহার করছেন, যা আইন ও নৈতিকতার পরিপন্থি।
অর্থ সচিব, খাদ্য সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এবং তাদের পিএস বেআইনিভাবে আলাদা গাড়ি ব্যবহার করছেন। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিবদের বিরুদ্ধেও এ অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া পরিবারের জন্য রেখেছেন আলাদা যানবাহন।
একটি মিথ্যা হাজার মিথ্যার জন্ম দেয়। তেমনিভাবে একটি অসৎ পন্থা আরও বহু অসততার দিকে ঠেলে দেয়। এ কারণে পরিবহন পুল থেকে সচিবদের জন্য গাড়ি সরবরাহ নীতি বন্ধ হওয়ার পরও বিভিন্ন অজুহাতে মন্ত্রণালয়গুলো গাড়ি কেনা বাড়িয়েছে। সুতরাং, প্রত্যাশিতভাবে আওয়ামী সরকার গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সুদমুক্ত যে ঋণ সুবিধা চালু করেছিল, তা রাষ্ট্রীয় তহবিল তছরুপের পথ প্রশস্ত করেছে। অর্থাৎ সদিচ্ছা ও স্বচ্ছতা না থাকায় একটি দুর্নীতি অন্যান্য দুর্নীতির পথ উন্মুক্ত করেছে। এই তো, ২০১৭ সাল থেকে উপসচিবদেরও একই ঋণ সুবিধা দেওয়া শুরু হয়। প্রতিবেদনমতে, শুরুতে গাড়ি কিনতে ২০ লাখ এবং চালক, তেল বাবদ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে গাড়ি বাবদ ৩০ লাখ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা বাড়ানো হয়।
গবেষক ও সাবেক আমলা আকবর আলি খান ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ গ্রন্থে সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতিকে ‘সামগ্রিক কাঠামোগত’ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে, এ ধরনের দুর্নীতি নিরন্তর প্রতিক্রিয়া বা চেইন রিঅ্যাকশন সৃষ্টি করে। ‘এক ধরনের দুর্নীতি অন্য ধরনের দুর্নীতির জন্ম দেয়, এক খাত হতে দুর্নীতি অন্য খাতে সংক্রমিত হয়।’ সচিবদের পর উপসচিবদের ঋণ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁর এ মন্তব্য প্রযোজ্য।
বাংলাদেশ এখন পাঁচ দশকের রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা ও দু্র্নীতির কবলে নিমজ্জিত। কাঠামোগত দুর্নীতির কারণে পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হলে আমাদের দরকার নতুন রাজনৈতিক কাঠামো, যা ‘শুয়রের বাচ্চাদের’ অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমেই এসব জঞ্জাল মুক্ত করা সম্ভব। তবে সেই আশা এখনও বহুদূর।
আমলা ও উপদেষ্টাদের গাড়িবিলাস নিয়ে যে প্রতিবেদন দেখা যাচ্ছে, তা স্পষ্টত গণভ্যুত্থানের ‘স্পিরিট’-এর পরিপন্থি। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা উঠলে সরকার তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেছে। আশা করি, গাড়ি বরাদ্দে যেসব অব্যবস্থাপনা রয়ে গেছে, সেগুলোর শিগগিরই নিরসন হবে।
ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল
Iftekarulbd@gmail.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র করছ ন ঋণ স ব ধ উপদ ষ ট ত কর ছ র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আধুনিক প্রযুক্তি ও স্মার্ট লাইফস্টাইলে এগিয়ে বিএইচএল সিরামিকস
সময়ের সঙ্গে বিশ্ববাজারে নিজের একটি আলাদা অবস্থান তৈরি করেছে বাংলাদেশের সিরামিক–শিল্প। গুণগত মান, নান্দনিকতা এবং প্রযুক্তির অসাধারণ সমন্বয়ে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো এখন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও সমান সফল। রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আয়োজিত ‘সিরামিক এক্সপো বাংলাদেশ ২০২৫’ সেই অগ্রযাত্রার একটি স্পষ্ট প্রতিফলন।
২৭ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সিরামিক–শিল্পের অন্যতম এ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে ২৫টি দেশের ৩০০টি গ্লোবাল ব্র্যান্ড। এর মধ্যে অন্যতম বিএইচএল গ্রুপ। এ প্রদর্শনীতে বিএইচএল গ্রুপ প্রদর্শন করেছে বিএইচএল সিরামিক, কুংফু সিরামিক, ভিঞ্চি সিরামিক এবং পারলা স্যানিটারিওয়্যারের সমন্বিত পণ্যতালিকা। স্টলজুড়ে ছিল নতুন প্রযুক্তির টাইলস, স্মার্ট কমোড, ওয়ান-পিস মডেল, ডুয়াল-লেভেল অজু বেসিন এবং হাইজিন-ফোকাসড স্যানিটারি পণ্যের বিস্তৃত প্রদর্শনী।
উদ্ভাবনী পণ্য: নজর কাড়ছে স্মার্ট স্যানিটারিওয়্যারবিএইচএল গ্রুপের চিফ মার্কেটিং অফিসার মো. খালেদুর রহমান বলেন, ‘এবারের সিরামিক এক্সপোর স্টল ডিজাইনে আমাদের মূলত তিনটি ভাবনা ছিল—দৃশ্যমান ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি, ব্যবহারকারীর বাস্তব পণ্য-অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনের উপস্থাপন।’
নতুন পণ্যগুলো সম্পর্কে খালেদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের পারলা স্যানিটারিওয়্যারের তিনটি পণ্য তিন ধরনের ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়েছে। আকসা অজু বেসিন, নেক্সোরা স্মার্ট ওয়াটার ক্লোজেট এবং মোনাকো ওয়ান-পিস ওয়াটার ক্লোজেট।’
মো. খালেদুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা চেয়েছি স্টলের প্রতিটি উপাদানে আমাদের ব্র্যান্ডের গুণগত মান, টেকসই নির্মাণের মানসিকতা এবং গ্রাহক-অভিজ্ঞতার মূল বার্তাটি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠুক। এর ধারাবাহিকতায় আমরা সামনে আরও ইনোভেটিভ, টেকসই ও স্মার্ট প্রযুক্তির পণ্যবাজারে আনতে কাজ করছি। একই সঙ্গে দেশীয় উৎপাদনকে আরও শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার লক্ষ্য নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
সিরামিক এক্সপো প্রদর্শনীতে বিএইচএল গ্রুপ প্রদর্শন করেছে বিএইচএল সিরামিক, কুংফু সিরামিক, ভিঞ্চি সিরামিক এবং পারলা স্যানিটারিওয়্যারের সমন্বিত পণ্যতালিকা