Samakal:
2025-07-11@09:13:30 GMT

গাড়িবিলাস

Published: 4th, February 2025 GMT

গাড়িবিলাস

সোমবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদনমতে, এ পর্যন্ত সরকারিভাবে সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা নিয়ে গাড়ি কিনেছেন ৪ হাজার ২০০ আমলা। এ সত্ত্বেও বেশির ভাগ কর্মকর্তা অবৈধভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এতে প্রতি মাসে চালক, রক্ষণাবেক্ষণ ও আনুষঙ্গিক খরচ হচ্ছে ২১ কোটি টাকা। সে হিসাবে বার্ষিক খরচ দাঁড়ায় ২৫২ কোটি টাকা। 

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সচিবদের জন্য গাড়ি ক্রয়ে সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা চালু করে। মূলত আমলাদের বাগে আনতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের জন্য নানা সুবিধার বন্দোবস্ত করেছিলেন। এটি ছিল তারই ধারাবাহিকতা। প্রতিবেদনে সাবেক এক সচিব এ নীতিকে ঘুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যখন গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধিত্বকারী সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ওঠে, তখন তা অত্যন্ত বেদনা ও হতাশার।

প্রতিবেদনমতে, উপদেষ্টাদের কারও কারও বিরুদ্ধে তিন-চারটি গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম দুটি গাড়ি ব্যবহার করছেন। তাঁর জন্য চালক বরাদ্দ রয়েছে ৩ জন। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ একাই ব্যবহার করছেন তিনটি গাড়ি। এভাবে অনেকেই একাধিক গাড়ি ব্যবহার করছেন, যা আইন ও নৈতিকতার পরিপন্থি।

অর্থ সচিব, খাদ্য সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এবং তাদের পিএস বেআইনিভাবে আলাদা গাড়ি ব্যবহার করছেন। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিবদের বিরুদ্ধেও এ অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া পরিবারের জন্য রেখেছেন আলাদা যানবাহন। 

একটি মিথ্যা হাজার মিথ্যার জন্ম দেয়। তেমনিভাবে একটি অসৎ পন্থা আরও বহু অসততার দিকে ঠেলে দেয়। এ কারণে পরিবহন পুল থেকে সচিবদের জন্য গাড়ি সরবরাহ নীতি বন্ধ হওয়ার পরও বিভিন্ন অজুহাতে মন্ত্রণালয়গুলো গাড়ি কেনা বাড়িয়েছে। সুতরাং, প্রত্যাশিতভাবে আওয়ামী সরকার গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সুদমুক্ত যে ঋণ সুবিধা চালু করেছিল, তা রাষ্ট্রীয় তহবিল তছরুপের পথ প্রশস্ত করেছে। অর্থাৎ সদিচ্ছা ও স্বচ্ছতা না থাকায় একটি দুর্নীতি অন্যান্য দুর্নীতির পথ উন্মুক্ত করেছে। এই তো, ২০১৭ সাল থেকে উপসচিবদেরও একই ঋণ সুবিধা দেওয়া শুরু হয়। প্রতিবেদনমতে, শুরুতে গাড়ি কিনতে ২০ লাখ এবং চালক, তেল বাবদ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে গাড়ি বাবদ ৩০ লাখ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা বাড়ানো হয়। 
গবেষক ও সাবেক আমলা আকবর আলি খান ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ গ্রন্থে সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতিকে ‘সামগ্রিক কাঠামোগত’ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে, এ ধরনের দুর্নীতি নিরন্তর প্রতিক্রিয়া বা চেইন রিঅ্যাকশন সৃষ্টি করে। ‘এক ধরনের দুর্নীতি অন্য ধরনের দুর্নীতির জন্ম দেয়, এক খাত হতে দুর্নীতি অন্য খাতে সংক্রমিত হয়।’ সচিবদের পর উপসচিবদের ঋণ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁর এ মন্তব্য প্রযোজ্য। 

বাংলাদেশ এখন পাঁচ দশকের রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা ও দু্‌র্নীতির কবলে নিমজ্জিত। কাঠামোগত দুর্নীতির কারণে পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হলে আমাদের দরকার নতুন রাজনৈতিক কাঠামো, যা ‘শুয়রের বাচ্চাদের’ অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমেই এসব জঞ্জাল মুক্ত করা সম্ভব। তবে সেই আশা এখনও বহুদূর।
আমলা ও উপদেষ্টাদের গাড়িবিলাস নিয়ে যে প্রতিবেদন দেখা যাচ্ছে, তা স্পষ্টত গণভ্যুত্থানের ‘স্পিরিট’-এর পরিপন্থি। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা উঠলে সরকার তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেছে। আশা করি, গাড়ি বরাদ্দে যেসব অব্যবস্থাপনা রয়ে গেছে, সেগুলোর শিগগিরই নিরসন হবে। 

ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল
Iftekarulbd@gmail.

com 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র করছ ন ঋণ স ব ধ উপদ ষ ট ত কর ছ র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দুই বাণিজ্য সংগঠনে প্রশাসক নিয়োগ

বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এন্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ এসিড মার্চেন্ট এসোসিয়েশনে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন–এর মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মুহাম্মদ রেহান উদ্দিন স্বাক্ষরিত পৃথক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।

আদেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শায়লা ইয়াসমিনকে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশন এর প্রশাসক এবং উপসচিব মো. আব্দুল মালেককে বাংলাদেশ এসিড মার্চেন্ট এসোসিয়েশন এর প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।

আদেশে বলা হয়, যেহেতু, বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি নিবন্ধিত বাণিজ্য সংগঠন; যেহেতু, বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশনের বর্তমান কমিটি সংগঠনটিকে কেন সুপ্ত সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হবে না সে মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশের সন্তোষজনক জবাব উপস্থাপন করতে পারেননি; যেহেতু, তদন্তকারী কর্মকর্তা ভোটার তালিকা প্রণয়নে ত্রুটি ও বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে মর্মে মতামত দিযেছেন: যেহেতু, এফবিসিসিআই এর সালিশী ট্রাইব্যুনাল রোয়েদাদে জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এন্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচন ২০২৫-২০২৭ এর জন্য ঘোষিত ১৩/০২/২০২৫ তারিখের নির্বাচন তফসিল বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, ১৯৯৪ এর বিধি ১৫ এর উপবিধি (২) অনুসারে ঘোষিত না হওয়ায় তা ত্রুটিপূর্ণ হওয়াসহ ভোটার তালিকা ত্রুটিপূর্ণ; যেহেত, বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এন্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশন এর কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না; সেহেতু, বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২ এর ১৭ ধারা মোতাবেক সংগঠনটির পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ বাতিলপর্বক সরকারের অনুমোদনক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শায়লা ইয়াসমিনকে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এন্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশন এর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হলো। তিনি ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করত: নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করে এ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন।

আরেক আদেশে বলা হয়, যেহেতু, বাংলাদেশ এসিড মার্চেন্ট এসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি নিবন্ধিত বাণিজ্য সংগঠন;
যেহেত, বাংলাদেশ এসিড মার্চেন্ট এসোসিয়েশন এর বর্তমান কমিটি এফবিসিসিআই এর সালিশী ট্রাইব্যুনাল মামলা নং-০১/২০২৫ এর ৯ ফেব্রুয়ারির রায় অমান্য করে নির্বাচন করেছে।

যেহেতু, এফবিসিসিআই কর্তৃক ০৯.০২.২০২৫ তারিখের আদেশ বাস্তবায়ন এবং সংগঠনের সংঘবিধি ও সংঘস্মারক অনুসরণ করে যথাযথ নিয়মে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে।

যেহেতু বাংলাদেশ এসিড মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ত্রুটি বিদ্যমান; সেহেতু, বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২ এর ১৭ ধারা মোতাবেক সংগঠনটির পরিচালনা পর্যদ বাতিলপূর্বক সরকারের অনুমোদনক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আব্দুল মালেক-কে বাংলাদেশ এসিড মার্চেন্ট এসোসিয়েশন এর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হলো। তিনি ১২০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করত: নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করে এ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংসদ নির্বাচন: চার ইসির নেতৃত্বে পাঁচ বিশেষ কমিটি
  • দুই বাণিজ্য সংগঠনে প্রশাসক নিয়োগ