নতুন সিরিজের তিনটি মডেলের স্মার্টফোন প্রকাশ করেছে প্রযুক্তি ব্র্যান্ড ইনফিনিক্স। সিরিজের তিনটি মডেল যথাক্রমে– নোট ৫০, নোট ৫০ প্রো আর নোট ৫০ প্রো প্লাস। তিনটি মডেলই বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্মের জন্য ডিজাইন করা।
সব মডেলের ডিজাইনে মেটাল ফ্রেম, পারফরম্যান্স আর এআই প্রযুক্তির মিশেল রয়েছে বলে নির্মাতারা জানান। ডিসপ্লে অংশে রয়েছে ৬.

৭৮ ইঞ্চি অ্যামোলেড ডিসপ্লে, ১৪৪ হার্টজ রিফ্রেশ রেট। ক্যামেরা প্রযুক্তিতে নোট ৫০ সিরিজে রয়েছে ৫০ মেগা পিক্সেল ওআইএস নাইট মাস্টার ক্যামেরা, ১১২ ডিগ্রি আলট্রা ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্স আর মানোন্নত এআই ফটোগ্রাফি টুলস। নোট ৫০ প্রো+ মডেলে রয়েছে ১০০ এক্স পেরিস্কোপ টেলিফটো লেন্স এবং সনি আইএমএক্স ৮৯৬ সেন্সর, যা ফোরকে ৬০ এফপিএস ভিডিও রেকর্ডিং সুবিধা দেবে।
জানা গেছে, সিরিজের প্রতিটি মডেলে রয়েছে ৫ হাজার ২০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি, ফাস্টচার্জ ৩.০ প্রযুক্তি, যা দ্রুত চার্জিং পরিষেবা দেবে। ৫০ প্রো+ মডেলে ১০০ ওয়াট চার্জিং এবং ৫০ ওয়াট ওয়্যারলেস ম্যাগচার্জ সুবিধা রয়েছে। ব্র্যান্ডটি প্রথমবার সেন্সরকেন্দ্রিক স্বাস্থ্য ট্র্যাকিং ফিচার যুক্ত করেছে, যার মাধ্যমে হৃদস্পন্দন ও রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ মনিটর করা যাবে।
সিরিজের ৫০ আর ৫০ প্রো মডেলে রয়েছে মিডিয়াটেক হেলিও জি১০০ আলটিমেট চিপসেট। অন্যদিকে নোট ৫০ প্রো+ মডেলে থাকছে নেক্সট-জেন ৪ ন্যানোমিটার ডাইমেনসিটি, ৮ হাজার ৩৫০ আলটিমেট, ৫.৫ জি চিপসেট, যা স্মুথ মাল্টিটাস্কিং আর গেমিং অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করবে।
সব মডেলে থাকবে ডিপসিক এআই, ওয়ান-ট্যাপ এআই ক্যামেরা ও স্ক্রিন এবং এআই নয়েজ মিউট– যার মাধ্যমে ডিভাইসটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপ্লিকেশন, কাজের ধরন বা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অনুযায়ী কার্যক্ষমতা সামঞ্জস্য করতে পারে। নতুন থাকছে বায়ো-অ্যাকটিভ এআই লাইট, যা নোটিফিকেশন ও লাইভ লাইটিং ইফেক্ট প্রদর্শন করে।
কার্লকেয়ার পরিষেবায় থাকবে ১০০ দিন স্ক্রিন ড্যামেজ সুরক্ষা, ফ্রি ফার্ম ক্লিনিং, ফাস্ট রিপেয়ার আর সার্ভিস ডে অফার, যা এস-ভিআইপি কার্ডে নিশ্চিত করা হবে।
আগ্রহীর সুবিধার্থে পাম পের সঙ্গে অংশীজন চুক্তিতে শূন্য ইএমআই পাওয়া যাবে। ফলে ২০ ভাগ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ফোনটি কেনা যাবে।
চার মাসে কিস্তিতে দাম পরিশোধ করা যাবে। শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীর জন্য ফ্ল্যাগশিপ অভিজ্ঞতা উপভোগের
সুযোগ দেবে মডেল তিনটি। রঙের বৈচিত্র্যে সিরিজের স্মার্টফোনে থাকছে টাইটেনিয়াম গ্রে আর পার্পল।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন ট ৫০ প র

এছাড়াও পড়ুন:

আমাদের রক্ত বৃথা যায়নি

গতবছর জুলাই মাসের দিনগুলো যেমন ছিল ভয়ের; তেমনি আবেগ ও অর্জনের। ১৪ জুলাই বিকেলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের উদ্দেশ্য করে ‘রাজাকার’ বলেন। এর কিছুক্ষণ পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে আসে। আমি রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। হলের মেয়েরা রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় হলের মাঠে চলে আসে, তালা ভেঙে হল থেকে বের হয়ে আসে। 

১৫ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে প্রতিবাদ মিছিল হয়। অনেকক্ষণ রাজুতে অবস্থান করার পর আমরা ভিসি চত্বরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। এক পর্যায়ে সবাই রেজিস্ট্রার বিল্ডিং পর্যন্ত যাই। হঠাৎ দেখলাম, ছাত্রলীগের ছেলেরা আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আমরা ভিসি চত্বর, না-হয় শহীদ মিনারে অবস্থান করব। আমরা ভিসি চত্বর পর্যন্ত আসতেই ছাত্রলীগের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা আমাদের দিকে তেড়ে আসে। আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি। 

আমরা দৌড়াতে থাকি; কিন্তু পালানোর জায়গা নেই। সবাই জটলা হয়ে ভিসি চত্বরের বাসের পেছনে দাঁড়াচ্ছিল। আমিও ওখানে যাই, সেখানে দাঁড়াতেই পেছন থেকে আমার মাথায় রড দিয়ে আঘাত করা হয়। আমার কানের ভেতর একটা বিকট শব্দ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। তখন ভেবে নিয়েছিলাম, হয়তো মারা যাচ্ছি। হাত থেকে কখন ফোন পড়ল তারও খেয়াল নেই। অনেকক্ষণ নিচে পড়ে থাকার পর এক ভাই আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার অনেক কিছুই আমার মনে নেই। মাথায় ১০টা সেলাই দেওয়া হয়। জ্ঞান ফেরার পর মনে মনে ভাবছিলাম, আল্লাহ এটা যেন সবটাই কোনো দুঃস্বপ্ন হয়!

যে ভাই আমায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন, জ্ঞান ফেরার পর তিনি আমার কাছে ফোন নাম্বার চান। কোনো নাম্বার মনে পড়ছিল না। কীভাবে যেন আমার বড় ভাইয়ের নাম্বার দিয়েছিলাম আমি নিজেও জানি না। পরে আমাকে তিনি জিজ্ঞেস করছিলেন, তোমার নাম কী? প্রথমে নিজের নামটাও পর্যন্ত বলতে পারছিলাম না, কিছুই মনে করতে পারছিলাম না। এরপর জানতে পারলাম আমার ফোনটা হারিয়ে গিয়েছে। আমার ফোনে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম জহুরুল হলের এক ছোট ভাই ফোনটি পেয়েছে। কিছুক্ষণ পর আমার বড় বোন (বুবুর) এক কাজিনকে ফোন করে বলেন ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে আমাকে নিয়ে আসার জন্য। বুবুর বাসা মহাখালী, সেখানে যাওয়ার সময় সিএনজিতে আমি বমি করি, সোজা হয়ে বসতে পারছিলাম না। মনে মনে ভাবছিলাম– এই বুঝি মরে গেলাম! ইউনিভার্সাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেতেই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে দেয়। সেখানে কিছুক্ষণ চিকিৎসা দেওয়ার পর ডাক্তাররা বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সিটি স্ক্যান করতে হবে, কারণ এরই মধ্যে বমি হয়েছে এবং হাসপাতালে ভর্তি হতে বললেন। সেখানে প্রচুর খরচ হওয়ার ভয়ে আর ভর্তি হইনি। বুবুর বাসায় যাওয়ার সময় আবার বমি করি। বুবুর মনে ভয় হতে থাকে। আমার নিজেরও মনোবল ভেঙে যেতে থাকে। 

বাসায় নেওয়ার পর যখন আমাকে গোসল করাল পুরো বাথরুম তখন রক্তে লাল হয়ে যায়, যেন রক্তের বন্যা! বুবু আমাকে গোসল করানোর সময় বলেছিল– ‘ফরজ গোসল করে নে যদি মরে যাস!’ এই কথাটা এখনও মনে হলে বুক কেঁপে ওঠে, বড় বোনের কতটা অসহায় অবস্থা হলে তার মনে এই ভয় আসে!

বাসায় যাওয়ার পর থেকে যে পরিমাণ মাথায় যন্ত্রণা, তার থেকে বেশি ঘাড়ে যন্ত্রণা। এ জন্য উঠে দাঁড়াতে পারতাম না। মাথার শখের চুলগুলোও কাটাতে হলো। পরদিন সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট এলো। ইন্টারনাল ইনজুরি না হলেও মাথার স্কাল্প ফ্র্যাকচার হয়েছে। আঘাতের গভীরতা বেশ অনেকটা। 

অন্যদিকে দেশের এমন পরিস্থিতি যে বাইরে গিয়ে আশপাশের হাসপাতালে ড্রেসিং করাব সে ব্যবস্থা ছিল না। বাধ্য হয়ে বুবুই ড্রেসিং করানো শুরু করে। তবে ইনফেকশন হয়ে যায়। এক সপ্তাহ পর সেলাই খোলার কথা। বের হলাম হাসপাতালে যাব বলে; কিন্তু কারফিউ দেওয়ার কারণে যেতে পারছিলাম না। কোনোভাবে ইমপালস হাসপাতালে যাই। ডাক্তার আমার মাথার অবস্থা দেখেই বলেন, ইনফেকশন খুব বাজেভাবে ছড়িয়ে গেছে। রড দিয়ে আঘাত করার কারণে ভেতরে কিছু রয়ে গিয়েছিল। ওইদিন অনেক মানুষ আহত হন। ঢাকা মেডিকেলে প্রাণ বাঁচানোর জন্য যেভাবে পেরেছে কোনোমতে সেলাই করে দিয়েছে। 

সেলাই খোলা হয়। ইনফেকশন পরিষ্কার করতে প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যায়। মাথার চামড়ার নিচে গজ ঢুকিয়ে রাখা হয়। এভাবে অন্তত এক সপ্তাহ রাখতে বলা হয়, আর দুই দিন পরপর ড্রেসিং করতে হবে। এভাবে ড্রেসিং করানোর মতো কষ্ট এ দুনিয়ায় আছে কিনা সন্দেহ! এ অবস্থাতেই আম্মার অসুস্থতার জন্য যেতে হয় ময়মনসিংহে।
২৮ জুলাই মাথায় সেলাই করতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। যে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম, তিনি আমার কানে ফিসফিস করে বলছিলেন, আমি যে আন্দোলনকারী, এটা বলা যাবে না। অপারেশন থিয়েটারে ঢোকার পর ডাক্তার, নার্সরা আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন, আমি আন্দোলনকারী কিনা! ১ আগস্ট আম্মার অপারেশন শেষে বাড়িতে ফিরে আসি। 

৩ আগস্ট আমরা গ্রামের একটা চায়ের টং দোকানে বসে মিটিং করি। কিন্তু সে কথা গ্রামের আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা জেনে যান। সবার বাসায় ফোন দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। আমাদের নাম থানায় দেওয়া হয়। ৫ তারিখ সকাল থেকে টিভি চ্যানেলগুলো থেকে চোখ সরাতে পারিনি। দুপুরের পর যখন শুনতে পেলাম শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, কী যে আনন্দ লাগছিল! মনে হচ্ছিল– আমাদের রক্ত বৃথা যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ