মির্জাপুরে ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে পুড়ে গেছে কৃষকের ক্ষেতের ধান। সপ্তাহখানেকের মধ্যে যে ধান কৃষক গোলায় তুলতেন সেই ধান পুড়ে জমিতেই পড়ে রইল। ১৫ একর জমির ধান পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শতাধিক কৃষক। বহুরিয়া ইউনিয়নের বহুরিয়া ও গোড়াই ইউনিয়নের পাথালিয়া পাড়া এলাকায় গত কয়েক দিনে এই ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিন ওইসব এলাকা ঘুরে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে বহুরিয়া এলাকার এমএসবি, আরবিসি ও বাটা নামক তিনটি ইটভাটার আগুন নেভানোর সময় সেখান থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ায় ওই এলাকার ৫টি প্রজেক্টের আওতাধীন অন্তত ১৫ একর জমির ধান ঝলসে গেছে। ওই এলাকায় স্থাপিত নতুন ৭টি ইটভাটার অনুমোদন না থাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে কিলন ও চিমনি গুঁড়িয়ে দিয়ে ভাটাগুলো বন্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু ভাটা মালিকরা অস্থায়ী চিমনি তৈরি করে ইট প্রস্তুত অব্যাহত রাখেন।
বহুরিয়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জুয়েল মিয়া জানান, ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসে তাঁর ২০ শতাংশ জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভাটার মালিক অনেককে টাকা দিয়েছেন কিন্তু তা ক্ষতির তুলনায় একেবারেই কম।
রাজিয়া নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘বিল্লালের ইটভাটার আগুনে তাঁর ৮০ শতাংশ জমির ধান ও ফরিদের ইটভাটায় তাঁর ৩০ শতাংশ জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিপূরণ দরকার নাই, আমাগো ধান দিক, গরুর খড় দিক।’
পাথালিয়া পাড়ার তাসলিমা নামে এক গৃহবধূ অভিযোগ করেন, ফরিদ ও মনির নামে দু’জনের ইটভাটার আগুনে তাঁর দুটি ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ফরিদ তাঁর ৮ শতাংশ জমির জন্য শতাংশ প্রতি মাত্র ২০০ টাকা করে দিয়েছেন। মনির কোনো টাকা দেননি।
বিরন সিকদার নামে এক কৃষক ক্ষোভের সঙ্গে জানান, ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে এই এলাকার ৫টি প্রজেক্টের  কইলা, সাইফুল, বদু, আনন্দ রাজবংশী, বাছেদসহ শতাধিক কৃষকের ক্ষেতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ইটভাটার ধোঁয়ায় এলাকার চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, গাছের ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
এমএসবি ইটভাটার মালিক ফরিদ বলেন, ‘আমি প্রজেক্টের লোকদের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১২ একর জমির ক্ষতিপূরণ দিয়েছি। এর মধ্যে ৫৩৯ শতাংশ জমির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে শতাংশ প্রতি ৫০০ টাকা ও  কাউকে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা দিয়েছি।
এইচইউবি ইটভাটার মালিক মনির জানান, তাঁর ইটভাটায় কোনো ক্ষেতের ধান পোড়েনি। যার ভাটার আগুনে পুড়েছে সে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।
বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাইদ মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি, কিন্তু আমার কী করার আছে? এ বিষয়ে প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিবে।’
মির্জাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুনের ভাষ্য, বিষাক্ত গ্যাসে ধান নষ্ট হওয়ার বিষয়টি উপজেলা পরিষদের সভায় উত্থাপন করেছেন তিনি। ভবিষ্যতে ওই জমিতে চাষাবাদের সম্ভাবনা কম। কৃষি বিভাগের প্রত্যয়নপত্র ছাড়াই ইটভাটাগুলো পরিচালিত হচ্ছিল বলেও জানান তিনি।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ নক ষ ত ভ ট র আগ ন ইটভ ট র র ইটভ ট এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

বদ নজরের দোয়া: ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা

‘বদ নজর’ ইসলামে একটি বাস্তব সত্য, যা মানুষের ঈর্ষা, হিংসা বা অতিরিক্ত প্রশংসার মাধ্যমে অন্যের ক্ষতি করতে পারে। কোরআন ও হাদিসে বদ নজরের বাস্তবতা এবং এর থেকে সুরক্ষা লাভের উপায় উল্লেখ করা হয়েছে।

তাই মুসলমানদের জন্য বদ নজর থেকে রক্ষার দোয়া ও আমল জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বদ নজরের বাস্তবতা

আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর নিশ্চয় যারা অবিশ্বাস করেছে, তারা যখন কোরআন শোনে তখন প্রায় তাদের দৃষ্টির দ্বারা তোমাকে পতিত করবে। আর তারা বলে: ‘সে তো অবশ্যই পাগল।’” (সুরা কলাম, আয়াত: ৫১)

রাসুল (সা.) বলেছেন: “চোখ লাগা (বদ নজর) সত্য।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৮৮)

আরও পড়ুনশিশুদের বদ নজর থেকে বাঁচাতে১৫ আগস্ট ২০২৫বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া

রাসুল (সা.) বদ নজর থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকটি প্রসিদ্ধ দোয়া হলো:

১. বদ নজর থেকে শিশুদের রক্ষার দোয়া

রাসুল (সা.) হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য এই দোয়া পড়তেন:

উচ্চারণ: উ‘ঈযুকুমা বি কালিমাতিল্লাহিত্তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন, ওয়া হাম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি ‘আইনিল লাম্মাহ।

অর্থ: “আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালিমার মাধ্যমে আশ্রয় দিচ্ছি, প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং ক্ষতিকর বদ নজর থেকে।” (সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস: ২০৬০)

২. বদ নজর থেকে রক্ষার সাধারণ দোয়া

উচ্চারণ: আ‘ঊযু বি কালিমাতিল্লাহিত্তাম্মাতি মিন শার্রি মা খালাক।

অর্থ: “আমি আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালিমার মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির অশুভ দিক থেকে আশ্রয় চাই।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭০৮)

৩. বদ নজর দূর করার আমল

রাসুল (সা.) বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের মধ্যে এমন কিছু দেখে যা তাকে ভালো লাগে, তখন সে যেন তার জন্য বরকতের দোয়া করে। কারণ বদ নজর সত্য।” (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৫০৯)

এক্ষেত্রে দোয়া করা যায়—

উচ্চারণ: বারাকাল্লাহু ফীক।

অর্থ: “আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দান করুন।”

আরও পড়ুনদোয়া কবুলের জায়গা০৪ জুন ২০২৪বদ নজর প্রতিরোধে করণীয়

১. সকালে-সন্ধ্যায় জিকির–আজকার পাঠ করা (যেমন আয়াতুল কুরসি, সুরা ফালাক, সুরা নাস)।

২. অন্যের প্রশংসায় বরকতের দোয়া করা।

৩. আল্লাহর উপর ভরসা রাখা এবং তাওয়াক্কুল করা।

বদ নজর মানুষের জন্য বাস্তব ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে আল্লাহর উপর ভরসা, কোরআনের আয়াতসমূহ পাঠ এবং রাসুল (সা.)-এর শিখানো দোয়া পাঠের মাধ্যমে মুসলমান সহজেই এর ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে।

তাই প্রতিদিনের জীবনে বদ নজর প্রতিরোধের দোয়াগুলো নিয়মিত পড়া প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব।

আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর ১০টি নির্দেশনা২০ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ