ঘরের মাঠ নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে গুজরাট টাইটানস ৩৮ রানে হারিয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে। ব্যাট হাতে ৩৮ বলে ৭৬ রান করে দলের সবচেয়ে বড় পারফরমার শুভমান গিল। তবে ম্যাচে গুজরাট কাপ্তান গিল আম্পায়ারের সঙ্গে কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে আলোচনায়। তাও একবার নয়; ম্যাচের দুই ইনিংসে দুবার এই ব্যাটসম্যানকে আম্পায়রের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করতে দেখা যায়।
প্রথম ঘটনাটি ঘটে গুজরাট কাপ্তান গিলের রান আউটকে কেন্দ্র করে। ইনিংসের ১৩তম ওভারের শেষ বলে নন স্ট্রাইকার প্রান্ত থেকে দৌড়ান শুভমন। জস বাটলারের শট সোজা যায় হর্ষাল প্যাটেলের হাতে। তিনি বল দেন উইকেটরক্ষক হেনরিখ ক্লাসেনকে। ক্লাসেনও দ্রুত উইকেট ভাঙেন। মাঠের আম্পায়ারেরা থার্ড আম্পায়ারের শরণাপন্ন হন।
আরো পড়ুন:
হায়দরাবাদ দেখাল আইপিএলে এক মৌসুমের রাজা পরেরবার ফকির
সুরিয়াবানশি দেখে ফেললেন ক্রিকেট বাস্তবতা
রিপ্লেতে দেখা যায় ক্লাসেন উইকেট ভাঙার সময় শুভমনের ব্যাট ক্রিজের খানিকটা বাইরে। তবে বোঝা যাচ্ছিল না বল সোজাসুজি স্টাম্পে লেগেছে নাকি আগেই ক্লাসেনের হাত লেগে উইকেট ভেঙে গিয়েছে। তৈরি হয় সংশয়। যদিও থার্ড আম্পায়ার গিলকে রান আউট ঘোষণা করেন। পরে দেখা যায়, বল লাগার সামান্য আগে ক্লাসেনের গ্লাভসের ছোঁয়ায় উইকেট ভেঙেছে। বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শুভমন। তখন তাঁকে তর্ক করতে দেখা যায় আম্পায়ারদের সঙ্গে।
এরপর হায়দরাবাদের ইনিংসের সময় আবার বিপত্তি। ওপেনার অভিষেক শর্মার বিপক্ষে একটি এলবিডব্লিউ’র আবেদন নিয়ে মাঠের আম্পায়ারদের সঙ্গে আবারও তর্কে জড়িয়ে পড়েন গিল। হায়দরাবাদের ১৪তম ওভারে প্রসিধ কৃষ্ণার একটি ডেলিভারিতে অভিষেকের বুটে বল লাগে। গিল ও তার সতীর্থরা আবেদন করেন। আম্পায়ার আবেদন আমলে না নেওয়ায়, গিল ডিয়ারএস নেন, যা পুরো পরিস্থিতিকে বিশৃঙ্খল করে তোলে।
টিভি রিপ্লেতে দেখানো হয়নি বলটি কোথায় পড়েছে। কেবলমাত্র ইমপ্যাক্ট এবং স্টাম্পে আঘাতের সম্ভাবনা দেখানো হয়। এই কারণে গিল রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং আম্পায়ারদের সঙ্গে উত্তপ্ত কথোপকথনে জড়িয়ে পড়েন। এই সময় অভিষেক, যিনি গিলের শৈশবের বন্ধু, এগিয়ে এসে তাকে শান্ত করেন।
নিয়ম অনুযায়ী, এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্তের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক। বলটি অবশ্যই স্টাম্পের লাইনে, অফ স্টাম্পের বাইরে বা ফুল টস হতে হবে; ফুল টস হলে পিচ করার শর্ত প্রযোজ্য নয়। প্যাডে বল লাগার স্থানটি অবশ্যই স্টাম্পের লাইনে হতে হবে, অথবা যদি তা বাইরের দিকে হয়, তবে ব্যাটসম্যানকে শট না খেলা অবস্থায় থাকতে হবে। সবশেষ বলটি স্টাম্পে আঘাত করবে বলে অনুমানযোগ্য হতে হবে।
যদি এটি একটি ফুল টস হয় ও ইমপ্যাক্ট অফ স্টাম্প লাইনের বাইরে হয় এবং ব্যাটসম্যান শট খেলার চেষ্টা করেন, তবে ক্রিকেট আইন (ধারা ৩৬) অনুযায়ী তিনি আউট হবেন না। কারণ, শট খেলার সময় ইমপ্যাক্ট যদি অফ স্টাম্পের বাইরে হয়, তবে ব্যাটসম্যান এলবিডব্লিউ হতে পারেন না। বল পিচ করুক বা না করুক।
সুতরাং শর্তগুলি বিবেচনা করে মনে হচ্ছে, যে গিলের আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্ক করা সঠিক ছিল না। যদি অভিষেক শট না খেলতেন, তবে তাকে আউট দেওয়া হতে পারত।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব য টসম য ন উইক ট ভ ঙ আম প য় র আম প য
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় উন্নয়ন কৌশলের কেন্দ্র ঠিক করুন
দশকের পর দশক বাংলাদেশের স্কুল ও উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ ও সচেতন নাগরিকদের মধ্যে আলোচনা চলেছে। প্রতিটি শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে এসেছে নতুন বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ। আর বিশ্বের অনেক দেশই সেই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় কাঠামোগত রূপান্তর ঘটিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সে অর্থে কোনো মৌলিক রূপান্তর ঘটেনি। ফলে শিক্ষা আজ জীবনের প্রয়োজন মেটানোর মাধ্যম না হয়ে পরিণত হয়েছে ব্যবস্থার ভার বহনের এক আনুষ্ঠানিকতায়।
সাম্প্রতিক সময়ে আবারও একটি নতুন শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবি জোরালোভাবে উঠছে। অতীতেও একাধিক শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছিল, যারা নানা স্তরের অংশগ্রহণ ও গবেষণার মাধ্যমে সুপরিকল্পিত প্রতিবেদন ও বাস্তবসম্মত সুপারিশ করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, আমলাতান্ত্রিক স্থবিরতা, ধারাবাহিকতা না থাকায় এসব উদ্যোগ কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। শিক্ষা যেমন এক দিনে বদলায় না, তেমনি তা কেবল একটি কমিশনের রিপোর্টেই আমূল রূপান্তর হয় না। এ জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও কাঠামোগত সমাধান।
আজকের বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তনশীল, যার অন্যতম চালিকাশক্তি চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। স্বয়ংক্রিয়তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, জেনারেটিভ এআই, ব্লকচেইন এবং ডিজিটাল কানেক্টিভিটির যুগে দাঁড়িয়ে কেবল প্রথাগত পাঠ্যবইভিত্তিক শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীরা যদি বিশ্লেষণ, অভিযোজন, সমস্যা সমাধান ও জীবনব্যাপী শিক্ষার সক্ষমতা অর্জন না করে, তবে তারা ভবিষ্যতে চাকরি বা উদ্যোগ– কোনোটিতেই কার্যকরভাবে টিকে থাকতে পারবে না। যথাযথ দিকনির্দেশনার অভাবে শিক্ষিত তরুণরা যুগোপযোগী দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হবে, যা তাদের বাস্তব জীবনের চাহিদা পূরণ ও চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশ যদি বৈশ্বিক পরিবর্তনের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারে, তবে আমাদের বিপুল তরুণ জনগোষ্ঠী সম্ভাবনার উৎস না হয়ে এক সময় হতাশা ও বেকারত্বের ভারে দেশের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের উচ্চশিক্ষা এবং স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থা গভীর সংকটে নিমজ্জিত। বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসা– এই তিন ধারার মধ্যে বিভক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুখস্থনির্ভর পাঠ্যপুস্তক ও পরীক্ষাভিত্তিক মানদণ্ডের কারণে শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনে প্রয়োজনীয় সৃজনশীলতা, বিশ্লেষণ ও নৈতিক দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে। শিশুরা ভারী ব্যাগে বই বহন করলেও চিন্তা বহন করতে শেখে না। ফলে আমরা তথ্যবহুল কিন্তু জ্ঞানশূন্য একটি প্রজন্ম গড়ে তুলছি। এই প্রেক্ষাপটে একটিমাত্র শিক্ষা কমিশন দিয়ে স্কুল ও উচ্চশিক্ষা– এই দুটি স্তরের স্বতন্ত্র সংকট ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ সম্ভব নয়। কারণ দুটি স্তরের কাঠামো, লক্ষ্য, পদ্ধতি ও চ্যালেঞ্জ ভিন্ন। অতএব, এখন সময় হয়েছে দুটি পৃথক কমিশন গঠনের– একটি স্কুল শিক্ষা কমিশন, অপরটি উচ্চশিক্ষা কমিশন।
স্কুল শিক্ষা কমিশন কাজ করবে মৌলিক শিক্ষা দক্ষতা, পাঠ্যক্রম সংস্কার, মূল্যায়ন পদ্ধতির আধুনিকায়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং তিন ধারার শিক্ষার (বাংলা, ইংরেজি ও মাদ্রাসা) সমন্বয়ের লক্ষ্যে। এটি ভবিষ্যৎমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
অপরদিকে উচ্চশিক্ষা কমিশনের দায়িত্ব হবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি, গবেষণা সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিকীকরণ, নতুন পেশাভিত্তিক কারিকুলাম; বিশ্ববিদ্যালয়কে কেবল শিক্ষালয় নয়– উদ্ভাবন, শিল্প সংযোগ ও উদ্যোক্তা তৈরির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলা।
একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ববিদ্যালয়কে হতে হবে সমাজের সমস্যা সমাধানের কেন্দ্র; শুধু ডিগ্রি বিতরণের নয়।
যদিও এ দুটি কমিশন আলাদা কাঠামোতে কাজ করবে, তবুও তাদের অভিন্ন উদ্দেশ্য– দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন। স্কুল ও উচ্চশিক্ষা একটি ধারাবাহিক পরিক্রমার অংশ। একটির ব্যর্থতা অপরটির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই এ দুটি কমিশনের মধ্যে সমন্বয়, তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং অভিন্ন জাতীয় লক্ষ্য নির্ধারণ অপরিহার্য।
আমাদের সামনে সময় সীমিত। পরিবর্তনের জানালা দ্রুত বন্ধ হয়ে আসছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আজকের শিক্ষানীতির ওপর। তরুণ জনগোষ্ঠীকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা খাতকে জাতীয় উন্নয়ন কৌশলের কেন্দ্রস্থলে আনতেই হবে। এখনই সময় দ্বিধাহীন, সুস্পষ্ট ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়ার।
nএম এম শহিদুল হাসান: ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি