কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার গোয়েন্দা তথ্য আগেই ছিল: কর্মকর্তাদের দাবি
Published: 3rd, May 2025 GMT
ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটকদের নিশানা করে ১৯ এপ্রিলের কাছাকাছি সময়ে হামলা হতে পারে বলে স্থানীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছিল। ভারতের গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি) এবং অন্যান্য সংস্থা স্থানীয় কর্মকর্তাদের এই সতর্কবার্তা দিয়েছিল।
আইবি ও অন্যান্য সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (ইউটি) ও শ্রীনগরে ১৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্ধারিত সফরসূচি ছিল। এ উপলক্ষে শ্রীনগর শহর ও এর আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হোটেল এবং শ্রীনগর শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দাচিগাম ন্যাশনাল পার্কের মতো পর্যটনস্থলগুলোতেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল।
কিন্তু আবহাওয়ার কারণে নির্ধারিত সফরের চার দিন আগে মোদির সফর বাতিল করা হয়। এই অবস্থায় ২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরের বাইসারান উপত্যকায় বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের প্রায় সবাই পর্যটক। শ্রীনগর থেকে পেহেলগামের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার।
এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘১০ বারের মধ্যে এমন সতর্কবার্তা নয়বারই সঠিক হয় না। কিন্তু এবার পর্যটকদের নিয়ে দেওয়া সতর্কতা সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। তবে স্থান ঠিক হয়নি। এখন সেটা বুঝতে পারাটাই কঠিন বিষয়।’ এই কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, এটা ঠিক যে প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে জম্মু ও কাশ্মীরের সেনাবাহিনী ও বেসামরিক নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের শ্রীনগরের কাছাকাছি পর্যটন এলাকায় হামলা হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছিল। তাঁদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল।
মোদির নির্ধারিত সফরের চার দিন আগে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ১৮-১৯ এপ্রিলের আশপাশে জম্মু ও কাশ্মীরের আবহাওয়া খারাপ থাকতে পারে। পূর্বাভাস আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর (পিএমও) সফরটি বাতিল করে। এই সফরে মোদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রায় তিনটি সেক্টরের ওপর দিয়ে হেলিকপ্টারে করে যেতে হতো। খারাপ আবহাওয়ার কারণে তাঁর যাত্রা ব্যাহত হতে পারত। তবে মোদির সফর বাতিল করা হলেও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাঁদের সতর্কতা ও প্রস্তুতি কিন্তু কমাননি।
হিন্দুস্তান টাইমস জানতে পেরেছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক নলিন প্রভাত শ্রীনগরে চার দিন অবস্থান করেছিলেন এবং শহরটির চারপাশের সব এলাকার খোঁজখবর নিয়েছিলেন। ২২ এপ্রিল পেহেলগামে বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর দিন সকালে তিনি জম্মুতে পৌঁছান। কিন্তু হামলার পরপরই তিনি আবার সেখানে ফিরে যান।
হিন্দুস্তান টাইমস যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁরা সবাই নিশ্চিত করেছেন, তাঁদের কোনো গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে পেহেলগামের কথা বলা হয়নি।
কিন্তু এখন জানা গেছে, বন্দুকধারীরা আগে থেকেই পেহেলগামে অবস্থান করছিলেন এবং এখনো তাঁরা সেখানে রয়েছেন। তাই স্থানীয় গোয়েন্দা তথ্যের ব্যর্থতার বিষয়টি বড় হিসেবে সামনে আসছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, যেহেতু এখন জানা গেছে যে সন্ত্রাসীরা ওই এলাকায় বসবাস করছিলেন এবং এখনো ওই অঞ্চলে রয়েছেন, তাই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল স্থানীয় গোয়েন্দা তথ্যের।
মাঠপর্যায়ের সেনা কর্মকর্তারা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, তাঁরা এসব তথ্য সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র কর মকর ত র শ র নগর হয় ছ ল সতর ক অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশের’ ক্ষতি হাজার কোটি রুপির বেশি
এক বছর আগেও কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’খ্যাত অংশটি ছিল শহরের হোটেল ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসার জমজমাট এক জায়গা। রাজনৈতিক অস্থিরতায় এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি আমূল বদলে যায়। বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। আর তাতে কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’খ্যাত এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এক বছর পরও সেই অস্থিরতার ধাক্কা টের পাওয়া যাচ্ছে। এক বছরে এই এলাকার ব্যবসা–বাণিজ্যের লোকসানের অঙ্ক ছাড়িয়েছে এক হাজার কোটি রুপি। এমনটাই জানানো হয়েছে ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কলকাতার নিউমার্কেটের কাছে ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও মারকুইস স্ট্রিটঘেঁষা এই এলাকা বহু বছর ধরেই বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রিয় জায়গা। সাশ্রয়ী হোটেল, ‘ওপারের বাংলা’ খাবার পরিবেশনকারী রেস্তোরাঁ, কলকাতার প্রধান বাস ও রেলস্টেশনের কাছাকাছি অবস্থান আর সহজলভ্য চিকিৎসাসেবার জন্য এই এলাকা ছিল জমজমাট। এক বছর আগেও এই এলাকায় পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকত। একদা ব্যস্ত এই এলাকার গলিগুলো এখন সুনসান।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির হিসাবে বলা হয়, এক বছরে ‘মিনি বাংলাদেশ’–এর লোকসান হয়েছে এক হাজার কোটি রুপির বেশি। অনেকে বলছেন, ক্ষতির প্রকৃত অঙ্ক আরও বড়। ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী খান জানান, ‘হোটেল, রেস্তোরাঁ, খুচরা বিক্রি, ভ্রমণ এজেন্সি, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়, চিকিৎসা ও পরিবহন—সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি রুপির ব্যবসা হতো। নিউমার্কেট ও বুররাবাজারের ক্ষতি হিসাবে ধরলে বার্ষিক ক্ষতির এই অঙ্ক ৫ হাজার কোটি ছাড়াবে।’
মারকুইস স্ট্রিটের এক ট্রাভেল কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রবীর বিশ্বাস টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, এলাকার অনেক ব্যবসা হয় বন্ধ হয়ে গেছে অথবা স্থানীয় ক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এক বছর আগেও একসঙ্গে একাধিক বাসে পর্যটক আসতেন, পার্কিংয়ের জায়গা পাওয়া কঠিন ছিল। এখন দিনের পর দিন চলে যায়, একজন পর্যটকও আসেন না।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশি টাকার সঙ্গে যুক্ত বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের ব্যবসা কার্যত অচল। মারকুইস স্ট্রিটের কারেন্সি এক্সচেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মোহাম্মদ ইন্তেজার এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমাদের এই ব্যবসা পুরোপুরি বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। বাস্তবতা হলো, আমরা এখন টিকে থাকার জন্য লড়াই করছি।’
ব্যবসায়ীদের মতে, সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশ ছোট ও মাঝারি রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। বড় রেস্তোরাঁগুলোও এখন সীমিত বাজেটে চলছে। এক রেস্তোরাঁর মালিক এন সি ভৌমিক বলেন, ‘ব্যবসা ২০ শতাংশে নেমে গেছে। এভাবে বেশি দিন চালানো সম্ভব নয়। কোনোভাবে ধরে আছি আর ভাবছি, কোনো একটা পরিবর্তন হলো বলে।’
ঢাকার রাজনৈতিক অস্থিরতা এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য দ্বিতীয় ধাক্কা, প্রথম ধাক্কা এসেছিল মহামারিতে। এক জনপ্রিয় রেস্তোরাঁর মালিকের ভাই জানান, ‘মহামারির পর ব্যবসা বাড়বে ভেবে অনেক বিনিয়োগ করেছিলাম, ঋণ নিয়ে সংস্কারও করেছি। অস্থিরতার আগে ব্যবসা ভালোই চলছিল। কিন্তু এখন আমার বড় ভাই মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমাদের মাসে দেড় লাখ রুপি কিস্তি দিতে হয়, অথচ আয় প্রায় নেই বললেই চলে।’
শুধু বড় ব্যবসা নয়, পর্যটনকেন্দ্রিক অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি—ঘরোয়া খাবার সরবরাহকারী, আবাসনমালিক, পর্যটন গাইড—সব ব্যবসাই কমবেশি ভেঙে পড়েছে। হোটেলের কর্মী, রাঁধুনি, ড্রাইভার, দোকানকর্মী হিসেবে কাজ করা শত শত স্থানীয় বাসিন্দাও তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রাসুল বলেন, ‘মহামারির পর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দুটি বাণিজ্যিক গাড়ি কিনেছিলাম। তখন ব্যবসা এত ভালো চলত যে অনেক সময় গ্রাহক ফেরাতে হতো। এখন মাসে পাঁচ-ছয়টা বুকিংও জোটে না, তা–ও স্থানীয়রা এসব ভাড়া নিচ্ছেন। এতে ভাড়াও বেশি পাওয়া যায় না। অথচ গাড়ির কিস্তি দিতে হচ্ছে।’