কিছুদিন আগেও সড়কের দু’পাশের গাছগুলো ছায়া দিয়েছে মানুষের। শীতল বাতাসে প্রাণ জুড়িয়েছে সবার। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সেই সড়ক পরিণত হয়েছে গাছবিহীন বিরান ভূমিতে। সড়কের দু’পাশে কাটা গাছের গোড়া পড়ে আছে। গতকাল শনিবার রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মৌলভাগ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্যের। গাছ কাটার পর সড়কের দক্ষিণ পাশে এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি খুঁড়ে প্রশস্তকরণের জন্য গর্ত করা হচ্ছে।

এভাবে সড়ক প্রশস্ত করার নামে দরপত্র ছাড়া আড়াই শতাধিক গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসন বলছে, এ কাজের জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এলজিইডি ও বন বিভাগ একে অপরের ওপর দায় চাপালেও গাছগুলো রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কেটে নেওয়া গাছের সংখ্যা আড়াই শতাধিক। এর মধ্যে কিছু গাছের বয়স ছিল ২০ বছরের অধিক। আবার কিছু আছে ১৫ বছর আগের। এলজিইডি ও বন বিভাগের দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে গাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল।  ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন বলেন, প্রতিটি গাছের বর্তমান বাজারদর ১৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে অর্ধকোটি টাকার বেশি গাছ কাটা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ছায়া দেওয়া গাছগুলো কোন যুক্তিতে কাটা হলো– তা বুঝতে পারছেন না বাসুদেবপুর এলাকার রেজাউল করিম। তিনি বলেন, প্রকাশ্যে দিনের আলোয় কাটা হলেও কেউ বাধা দেয়নি। তাঁর অভিযোগ, উপজেলা এলজিইডি অফিস রাস্তার কাজ শুরু করতে পাশের জমির মালিকদের গাছগুলো কাটতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, উপজেলার হাবিবপুর থেকে মৌলভাগ বাসুদেবপুর পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কের দু’পাশে শত শত গাছ রয়েছে। পিচঢালা সড়কটি আগে ১০ ফুট থাকলেও দু’পাশে চার ফুট করে আট ফুট চওড়া করা হবে। সম্প্রতি ১৮ ফুট প্রশস্ত করে নতুন করে কার্পেটিং করার জন্য দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
এ কাজ করার জন্য গাছ কাটার অনুমোদন ছিল না। এরপরও বড় মেহগনি, কড়ই, আকাশমণি, শিশুসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল থেকে পাশের জমির মালিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা খেয়ালখুশিমতো গাছগুলো কাটা শুরু করেন। দুই সপ্তাহ ধরে কাটা চলছে।

কাজটি যারা করবে, তারা এসে গাছ কেটে নিতে বলেছে বলে দাবি সড়কের পাশের জমির মালিক রহিদুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘সড়ক প্রশস্ত হচ্ছে, এতে গাছগুলো কাটা পড়বে। আমি গাছ লাগাইনি। সবাই কেটে নিয়েছে বলে আমার জমির পাশে থাকা গাছ কেটেছি। আমি না কাটলে অন্য কেউ এসে কেটে নিত।’
গাছগুলো বন বিভাগের লাগানো জানিয়ে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী রতন কুমার বলেন, হাবিবপুর থেকে বাসুদেবপুর সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য পাশের গাছগুলো অপসারণে বন বিভাগের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। যে অংশে ফাঁকা পাওয়া গেছে, সেখানে ঠিকাদার কাজ শুরু করেছে।

যদিও গাছগুলো এলজিইডির লাগানো বলে দাবি করেছেন উপজেলা বন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, গাছগুলোর ব্যাপারে একটি চিঠি পেলেও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এর আগে যার যার খেয়ালখুশিমতো আড়াই শতাধিক গাছ কেটে নিয়েছে। যারা সড়কের কাজ করবেন, তারা কাটতে বলেছেন বলে শুনেছেন। অনেক চেষ্টা করেও তারা গাছ বাঁচাতে পারেননি।
গাছগুলো বাঁচানোর দায়িত্ব কেউ নেয়নি অভিযোগ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) চারঘাট উপজেলার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, এলজিইডি ও বন বিভাগ একে অপরকে দোষারোপ করছে। আড়াই শতাধিক পুরোনো গাছ নির্বিচারে কাটা হলেও সরকার রাজস্ব পেল না। যাদের গাফিলতির কারণে এ অবস্থা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো তারা রাস্তায় নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ইউএনও জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, সড়কের গাছের বিষয়ে বন বিভাগের কাছে করা আবেদনের অনুলিপি তিনি পেয়েছিলেন। বন বিভাগকে এ বিষয়ে তদন্ত করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কাউকে মৌখিক কিংবা লিখিতভাবে গাছ কাটতে অনুমতি দেননি কিংবা দরপত্রও হয়নি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র সড়ক র দ প রশস ত র জন য ব যবস উপজ ল সড়ক প

এছাড়াও পড়ুন:

প্রশাসনের সিদ্ধান্তের আগেই কাটা পড়ল আড়াইশ গাছ

কিছুদিন আগেও সড়কের দু’পাশের গাছগুলো ছায়া দিয়েছে মানুষের। শীতল বাতাসে প্রাণ জুড়িয়েছে সবার। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সেই সড়ক পরিণত হয়েছে গাছবিহীন বিরান ভূমিতে। সড়কের দু’পাশে কাটা গাছের গোড়া পড়ে আছে। গতকাল শনিবার রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মৌলভাগ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্যের। গাছ কাটার পর সড়কের দক্ষিণ পাশে এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি খুঁড়ে প্রশস্তকরণের জন্য গর্ত করা হচ্ছে।

এভাবে সড়ক প্রশস্ত করার নামে দরপত্র ছাড়া আড়াই শতাধিক গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসন বলছে, এ কাজের জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এলজিইডি ও বন বিভাগ একে অপরের ওপর দায় চাপালেও গাছগুলো রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কেটে নেওয়া গাছের সংখ্যা আড়াই শতাধিক। এর মধ্যে কিছু গাছের বয়স ছিল ২০ বছরের অধিক। আবার কিছু আছে ১৫ বছর আগের। এলজিইডি ও বন বিভাগের দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে গাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল।  ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন বলেন, প্রতিটি গাছের বর্তমান বাজারদর ১৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে অর্ধকোটি টাকার বেশি গাছ কাটা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ছায়া দেওয়া গাছগুলো কোন যুক্তিতে কাটা হলো– তা বুঝতে পারছেন না বাসুদেবপুর এলাকার রেজাউল করিম। তিনি বলেন, প্রকাশ্যে দিনের আলোয় কাটা হলেও কেউ বাধা দেয়নি। তাঁর অভিযোগ, উপজেলা এলজিইডি অফিস রাস্তার কাজ শুরু করতে পাশের জমির মালিকদের গাছগুলো কাটতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, উপজেলার হাবিবপুর থেকে মৌলভাগ বাসুদেবপুর পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কের দু’পাশে শত শত গাছ রয়েছে। পিচঢালা সড়কটি আগে ১০ ফুট থাকলেও দু’পাশে চার ফুট করে আট ফুট চওড়া করা হবে। সম্প্রতি ১৮ ফুট প্রশস্ত করে নতুন করে কার্পেটিং করার জন্য দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
এ কাজ করার জন্য গাছ কাটার অনুমোদন ছিল না। এরপরও বড় মেহগনি, কড়ই, আকাশমণি, শিশুসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল থেকে পাশের জমির মালিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা খেয়ালখুশিমতো গাছগুলো কাটা শুরু করেন। দুই সপ্তাহ ধরে কাটা চলছে।

কাজটি যারা করবে, তারা এসে গাছ কেটে নিতে বলেছে বলে দাবি সড়কের পাশের জমির মালিক রহিদুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘সড়ক প্রশস্ত হচ্ছে, এতে গাছগুলো কাটা পড়বে। আমি গাছ লাগাইনি। সবাই কেটে নিয়েছে বলে আমার জমির পাশে থাকা গাছ কেটেছি। আমি না কাটলে অন্য কেউ এসে কেটে নিত।’
গাছগুলো বন বিভাগের লাগানো জানিয়ে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী রতন কুমার বলেন, হাবিবপুর থেকে বাসুদেবপুর সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য পাশের গাছগুলো অপসারণে বন বিভাগের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। যে অংশে ফাঁকা পাওয়া গেছে, সেখানে ঠিকাদার কাজ শুরু করেছে।

যদিও গাছগুলো এলজিইডির লাগানো বলে দাবি করেছেন উপজেলা বন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, গাছগুলোর ব্যাপারে একটি চিঠি পেলেও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এর আগে যার যার খেয়ালখুশিমতো আড়াই শতাধিক গাছ কেটে নিয়েছে। যারা সড়কের কাজ করবেন, তারা কাটতে বলেছেন বলে শুনেছেন। অনেক চেষ্টা করেও তারা গাছ বাঁচাতে পারেননি।
গাছগুলো বাঁচানোর দায়িত্ব কেউ নেয়নি অভিযোগ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) চারঘাট উপজেলার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, এলজিইডি ও বন বিভাগ একে অপরকে দোষারোপ করছে। আড়াই শতাধিক পুরোনো গাছ নির্বিচারে কাটা হলেও সরকার রাজস্ব পেল না। যাদের গাফিলতির কারণে এ অবস্থা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো তারা রাস্তায় নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ইউএনও জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, সড়কের গাছের বিষয়ে বন বিভাগের কাছে করা আবেদনের অনুলিপি তিনি পেয়েছিলেন। বন বিভাগকে এ বিষয়ে তদন্ত করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কাউকে মৌখিক কিংবা লিখিতভাবে গাছ কাটতে অনুমতি দেননি কিংবা দরপত্রও হয়নি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ