রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কমলার দিঘি- কচুখাইন সড়কটির দুরবস্থা ছিল দীর্ঘদিন। প্রায় ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কাঁচা সড়কটি অনেক দিন সংস্কার হয়নি। শেষ পর্যন্ত মানুষের কষ্ট লাঘবে এগিয়ে এসেছেন এক প্রবাসী, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত খাত থেকে প্রায় ১২ কোটি টাকা খরচ করে সড়কটি পাকা করে দিচ্ছেন। সড়কটি ১৭ থেকে ২১ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত করা হচ্ছে। যা আগে ছিল ১০ থেকে ১২ ফুট। ব্যক্তি উদ্যোগে পাকা সড়ক তৈরি হওয়ায় এলাকার মানুষ দারুণ খুশি।
সড়কটি স্থায়ী ও টেকসই করতে দু’পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে প্রতিরক্ষা দেয়াল। বন্যার পানিতে যাতে প্লাবিত না হয় সেজন্য দুই থেকে আড়াই ফুট উঁচু করে ভরাট করে ঢালাই দেওয়া হচ্ছে সড়কে।  সড়কজুড়ে বসানো হচ্ছে সড়কবাতি, ক্লোজ সার্কিট (সিসিটিভি ক্যামেরা)। সড়কের দুই পাশে লাগানো হবে এক হাজার খেজুর গাছ। সড়কের ধারে স্থানে স্থানে সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে বসানো হবে ১০টি গভীর নলকূপ। এ ছাড়া সড়কের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হবে জনসাধারণের জন্য গণশৌচাগার ও যাত্রীছাউনি। এই কাজে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে ধারণা করছেন ঠিকাদার মফিজুল হক।
সরেজমিন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়কটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আলহাজ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রবাসী ব্যবসায়ী আলহাজ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। যা সম্পূর্ণ এককভাবে প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের ব্যক্তিগত অর্থ্যায়ণে ব্যয় করা হচ্ছে। তবে এই কাজে কত টাকা ব্যয় হচ্ছে তা প্রকাশ করতে চাননা প্রবাসী ব্যবসায়ীর পরিবার। 
আলহাজ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময়ে দীর্ঘদিন সড়কটি সংস্কার কাজ না করায় এবং বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে খাদ হয়ে যায়। এতে যান চলাচলে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। একারণে দীর্ঘস্থায়ী টেকসই সড়ক করার এ উদ্যোগ নেন এলাকার প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। এছাড়া সড়কের স্থানে স্থানে যেসব সেতু- কালভার্ট সংকোচিত ছিলো সেগুলোর দুপাশে বিকল্প সেতু সংযোগ করে প্রশস্ত করা হচ্ছে। গত দুই মাস ধরে চলছে এই সড়ক নির্মাণের কাজ। ২০০ এর বেশী শ্রমিক দিন রাত কাজ করছে যেন দ্রুত সড়কটি তৈরী করে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া যেতে পারে।
জানতে চাইলে পূর্ব কচুখাইন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি জাহেদুল ইসলাম বলেন, এই সড়কটি দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকায় যান চলাচলে দুর্ভোগে ছিলো ৫ থেকে ৭ গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। এখন যেভাবে পাথর ঢালায় দেয়া হচ্ছে সেটি দীর্ঘস্থায়ী টেকসই হবে। ব্যক্তি উদ্যোগে এরকম এত বড় ব্যয়ে সড়ক নির্মাণের কাজের রেকর্ড খুবই কম।
৩০ এপ্রিল বুধবার বিকেলে কচুখাইন গ্রামের মোড় হতে ঢালায় কাজ উদ্বোধন করেন এই কাজের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের বড় ভাই আলহাজ মুহাম্মদ রফিক। এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভাই আলহাজ মুহাম্মদ মোখতার, আলহাজ মুহাম্মদ আবু তাহের। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রব স ব যবস য় প রব স সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

দুই দপ্তরের অধীন ২৯ কিমি সরু সড়কে চলাচলে ঝুঁকি

নওগাঁ সদর উপজেলার কাঁঠালতলী মোড় থেকে আত্রাই পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার সড়ক এক সময় ছিল নাটোর ও বগুড়ায় যাওয়ার প্রধান মাধ্যমে। আশির দশকের আগে এটি ছিল ইটের সলিং রাস্তা। পরবর্তী সময়ে পাকা করা হলেও আর প্রশস্ত হয়নি। বর্তমানে সড়কের বেশির ভাগ অংশের প্রস্থ মাত্র ১০ থেকে ১২ ফুট। ফলে দুই দিক থেকে আসা গাড়ির মুখোমুখি হলে প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাণহানিও হয়েছে অনেকে।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, ৪৫ বছর ধরে যাতায়াতে গুরুত্বপূর্ণ নওগাঁ-রাণীনগর-আত্রাই আঞ্চলিক সড়ক প্রশস্ত করা হয়নি। ফলে তিনটি উপজেলার লাখো মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা সড়কটি পরিণত হয়েছে ‘মরণফাঁদে’। সরু সড়ক, বিপজ্জনক বাঁক এবং যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। সড়কটির দুই অংশ দুই সরকারি দপ্তরের অধীন হওয়ায় প্রশস্তকরণের উদ্যোগ আলোর মুখ দেখে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির আধুনিকায়ন ও প্রশস্তকরণের দাবি জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলা দেশের প্রান্তিক এ জনপদের মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে সড়কটির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। রাণীনগর মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন বলেন, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন তিন উপজেলার লাখো মানুষ যাতায়াত করেন। সরু হওয়ায় প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। অথচ দীর্ঘদিনেও সড়কটি প্রশস্ত করা হয়নি।
বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে এ সড়কে ইঞ্জিনচালিত ভটভটি উল্টে একজন নিহত ও দু’জন আহত হন। ফেব্রুয়ারি মাসে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত যানের সংঘর্ষে প্রাণ হারান দু’জন। একজন আহত হন। গত এপ্রিল মাসে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। গত বছরের আগস্টে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে একজন নিহত হন। আহত হন একজন। এর বাইরে ছোট অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
জানা গেছে, সড়কের দু’পাশে গড়ে উঠেছে ঘন জনবসতি। রয়েছে হাটবাজার, ধানের চাতাল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন পণ্যবাহী ট্রাক, অটোরিকশা, ভটভটি, সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ অসংখ্য ছোট-বড় যানবাহন এ সড়ক ব্যবহার করে। অথচ প্রশস্ত ও ডিভাইডার নেই। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সংস্কারও করা হয়নি।
সড়কটির প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ রয়েছে নওগাঁ সড়ক বিভাগের অধীনে। আর বাকি ১৭ কিলোমিটার রাণীনগর থেকে আত্রাই পর্যন্ত অংশ ‘ছোট যমুনা নদীর বাঁধ’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায়। এ মালিকানা জটিলতা সড়ক প্রশস্তকরণে অন্যতম বাধা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
‘রক্তদহ-লোহচূড়া বিল নিষ্কাশন স্কিম’ প্রকল্পের আওতায় ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ আত্রাই-রাণীনগর অংশে সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানান নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ না থাকায় বাঁধ প্রশস্ত করা যাচ্ছে না। ২৮ কিলোমিটার অংশ পুনর্নির্মাণের জন্য ডিপিপি পাঠানো হয়েছে।
সড়কের কিছু অংশ ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে জানিয়ে নওগাঁ সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নূরে আলম সিদ্দীক বলেন, সড়কটি দ্রুত প্রশস্ত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান বলেন, সড়কটি তিনটি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত ও কৃষিপণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। পথ এতটাই সরু যে, বড় আকারের একটি যানবাহন চলাচল করাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। আধুনিকায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এ কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বান্দরবানে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তা ঢালাই, কাজের মান নিয়ে স্থানীয়দের উদ্বেগ
  • ৬৭ কোটি টাকায় সংস্কার, দুই বছর না যেতেই ধস
  • দুই দপ্তরের অধীন ২৯ কিমি সরু সড়কে চলাচলে ঝুঁকি
  • নড়াইলে ভারী বৃষ্টিতে আঞ্চলিক সড়কে ধস
  • সড়কের খানাখন্দে বৃষ্টির পানি, দুর্ঘটনার ঝুঁকি