২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলা: খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন শুনানি ৬ মে
Published: 4th, May 2025 GMT
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সব আসামিকে খালাসের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের (লিভ টু আপিল) শুনানি আগামী মঙ্গলবার (৬ মে)।
রোববার আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ এই দিন ধার্য করে আদেশ দেয়।
গত ১ ডিসেম্বর এই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। সে রায়ে উচ্চ আদালত বলেন, যে চার্জশিটের ভিত্তিতে বিচারিক আদালত বিচার করেছিলেন তা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না। তাই বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করা হলো।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও কয়েকশো মানুষ আহত হন। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে শুরু হয় বিচার।
তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত মামলার রায় দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারিক আদালত বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায়’ ওই হামলা ছিল একটি দলকে ‘নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা’। আলোচিত ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন: আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা.
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়। সে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামীরা হলেন, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এছাড়া, বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয় আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় দেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ‘লিভ টু আপিল’ করে রাষ্ট্রপক্ষ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম র রহম ন ব চ রপত র আপ ল ন ওরফ ব এনপ আবদ র আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে ২০ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মাসুদপুর সীমান্ত দিয়ে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে ২০ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গতকাল বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে ভারতের ৭১ ব্যাটালিয়নের সভাপুর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা শিবগঞ্জ উপজেলার মাসুদপুর সীমান্তের ৪/৫-১ এস আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলারের পাশ দিয়ে তাদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়। ঠেলে দেওয়াদের মধ্যে ৭ নারী ও ১০ শিশু রয়েছে। বিজিবি তাদের আটক করেছে।
৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাহাদ মাহমুদ রিংকু জানান, ঠেলে দেওয়া ২০ জন প্রায় ১০ বছর আগে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম এলাকা থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। তারা ভারতের রাজধানীর দিল্লির হরিয়ান এলাকায় একটি ইটভাটায় কাজ করত। পরে ভারতীয় পুলিশ তাদের আটক করে। ওই ২০ জনকে শিবগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ঠেলে দেওয়াদের মধ্যে একজন রোজিনা বেগম জানান, কয়েক দিন ধরে বিএসএফ তাদের আটকে রেখেছিল। এ সময় সবাইকে নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে। ঠিকমতো খেতে দেয়নি। বাচ্চারা খাবারের জন্য কাঁদলেও তাদের মন গলেনি। বুধবার ভোরে প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে তাদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। এ সময় বৃষ্টিতে ভিজে তাঁর সন্তানসহ অন্য শিশুরা ঠান্ডায় কাঁপছিল। বাংলাদেশিরা আমাদের অনেক সাহায্য করছেন।
এদিকে, ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক আল-আমিন নামে এক কিশোরকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিজিবির কাছে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। মঙ্গলবার রাতে দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে ওই কিশোরকে ফেরত আনে বিজিবি। আল-আমিন হবিগঞ্জ জেলা সদরের কালিগাছতলা মহল্লার মোহাম্মদ আলীর ছেলে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবি জানায়, আল-আমিন গত ১৫ জুন জাফলং সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল। এরপর মঙ্গলবার হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা তাকে আটক করে। তাকে ফেরত পাঠাতে ওই দিনই বিএসএফ পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানায়। এরপর রাত ১০টায় বিজিবির কাছে তাকে ফেরত দেওয়া হয়। আল-আমিনের বিরুদ্ধে মামলা করে হাকিমপুর থানায় সোপর্দ করেছে বিজিবি।