গোপালগঞ্জে স্বামী অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারধর, জীবননাশের হুমকি, প্রতারণার অভিযোগ করেছেন স্ত্রী নওরিন সিদ্দিকা। তবে এই অভিযোগ মিথ্যা বলে জানিয়েছেন এস এম তাজউদ্দিন।

আজ শনিবার (১২ জুলাই) সকাল ১১টায় গোপালগঞ্জ জেলা শহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়ন গোপালগঞ্জ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ অভিযোগ করেন। 

নওরিন সিদ্দিকা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘‘পরিবারিকভাবে ২০১০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার সিংগাতী গ্রামের মৃত আওয়াল সরকারের ছেলে এস এম তাজউদ্দিনের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। আমাদের সংসারে দুটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের এক বছর পর থেকে যৌতুকের দাবিতে আমার স্বামী তাজউদ্দিন বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে আমাকে নির্যাতন শুরু করেন। আমি সব নির্যাতন আমি সহ্য করে সংসার করেছি। আমার স্বামীর পরকীয়া আমার কাছে ধরা পড়ে যাওয়ায় আমি বাধা দেই। এরপর থেকে শুরু হয় আমার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নির্যাতনের কারণে আমি রক্তাক্ত অবস্থায় বার বার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। সেই রেকর্ড আমার কাছে আছে।’’

আরো পড়ুন:

মুরাদনগরে নারী নির্যাতন ও ভিডিও ছড়ানোর নেপথ্যে ‘দুই ভাইয়ের বিরোধ’

‘নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কুইক রেসপন্স টিম মাঠে নামছে’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘আমার স্বামী ঘরের ভিতরে আটকিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন এবং শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করেন। আশপাশের লোকজন টের পেয়ে ছুটে আসলে আমি বেঁচে যাই।’’ 

নওরিন সিদ্দিকা বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে প্রতারণা করে আমার দুই ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে গেছেন। আমার সঙ্গে সন্তানদের যোগাযোগ করতে দেন না।’’ স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গোপালগঞ্জ আদালতে মামলা করেছেন বলে জানান তিনি। 

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার স্বামী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী এলাকার ডিভোর্সি নারী শেখ আসমা সুলতানাকে বিয়ে করেছেন ২০২৪ সালের ৮ জুলাই। ওই বিয়ে করে তিনি আমার হোয়াটসঅ্যাপে আমাকে ডিভোর্সের কাগজ পাঠিয়েছেন, তাতে তারিখ দেয়া আছে ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ সাল।’’ 

নওরিন সিদ্দিকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের শেখ দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে। এস এম তাজউদ্দিন চাকরিসূত্রে ঢাকায় অবস্থান করেন।  

এ ব্যাপারে এস এম তাজউদ্দিন বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি যৌতুকের জন্য তার (নওরিন সিদ্দিকা) উপর নির্যাতন করিনি বরং উল্টো আমার নামে গোপালগঞ্জ আদালতে তিনটি মামলা দিয়েছেন। একটি মামলায় আমি অব্যাহতি পেয়েছি।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘নওরিন সিদ্দিকা এখন আর আমার স্ত্রী নন। আমি তাকে ডিভোর্স দিয়েছি। তিনি যে সব অভিযোগ এনেছেন, তা পুরোপুরি মিথ্যা।’’ 

ঢাকা/বাদল/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নওর ন স দ দ ক ম ত জউদ দ ন আম র স ব ম গ প লগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন

যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।

যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে

২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’

গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের মৃত্যু
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন