পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকল্প আর পরিকল্পনাহীনতা যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে। কয়রার বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি তার জীবন্ত দৃষ্টান্ত। ১ হাজার ১৭২ কোটি টাকার প্রকল্পটি গত বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও কাজের অগ্রগতি মাত্র ২৬ শতাংশ। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক চিত্র। এর মাধ্যমে পাউবোর অদক্ষতাও প্রকাশ পায়।

বিগত বছরগুলোয় উন্নয়ন প্রকল্প মানেই দফায় দফায় মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল। ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, রাজনৈতিক দলের নেতা ও একশ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের যে অসাধু চক্র গড়ে উঠেছিল, তারাই মূলত প্রকল্পে থেকে লাভবান হতো। অন্যদিকে সময়মতো প্রকল্প শেষ না হওয়ায় নাগরিকেরা কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন। পাউবোর প্রকল্পগুলোও এই কাঠামোবদ্ধ অনিয়মের বাইরে ছিল না।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় কয়রার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতীরবর্তী প্রায় ৩২ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও টেকসইকরণের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে। খুলনা পাউবো ও সাতক্ষীরা পাউবো-২ যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে। বাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা বাড়ানো, ঢাল সংরক্ষণ, নদীশাসন ও বনায়ন করা হবে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা থেকে উপকূলীয় এলাকার জীবন ও সম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এটি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রকল্প। কেননা উপকূলীয় অঞ্চলে বেশির ভাগ বেড়িবাঁধ অনেক পুরোনো। উচ্চতা ও প্রশস্ততা কম থাকায় সেগুলোর বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর মতো সক্ষমতা নেই।

গত বছরেও সাতক্ষীরা, বাগেরহাটে বন্যার সময়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। তাতে ফসল, মাছের ঘেরও ভেসে গিয়েছিল। এখন প্রশ্ন হলো কোনো প্রকল্প যদি সময়মতো না–ই করা গেল, তাহলে প্রকল্প নেওয়ার অর্থ কী? কয়রার বেড়িবাঁধ নির্মাণে শম্বুকগতিতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোয় মেরামতকাজ শেষ না হলে অনেক এলাকা প্লাবিত হতে পারে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, কাজ দেরি হওয়ার মূল কারণ জমি অধিগ্রহণে জটিলতা ও বরাদ্দ ছাড় না পাওয়া। পাউবোও বরাদ্দের সংকটের কথা বলেছে। কিন্তু প্রকল্প নেওয়ার ২৮ মাস পরে এসে তহবিলসংকট ও জমি অধিগ্রহণের যুক্তি কতটা যৌক্তিক? পাউবোকে তার পুরোনো চর্চা থেকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে। আমরা মনে করি, কয়রার বাসিন্দাদের জানমাল রক্ষায় বেড়িবাঁধ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প কয়র র

এছাড়াও পড়ুন:

৭০ শতাংশ নির্বাচন সামগ্রী কেনাকাটা সম্পন্ন

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, “আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচন সামগ্রীর ৭০ শতাংশ কেনাকাটা এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।”

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

সিনিয়র সচিব জানান, মার্কিং সিল, গালা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক, হেসিয়ান ব্যাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন সামগ্রী এরইমধ্যে ইসির গুদামে পৌঁছেছে। চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই অবশিষ্ট সামগ্রী সরবরাহ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।”

তিনি বলেন, “প্রায় ৭০ শতাংশ কেনাকাটার কাজ শেষ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে অবশিষ্ট কেনাকাটাও শেষ হবে। চাহিদা অনুযায়ী সব সামগ্রী সময়মতো পৌঁছে যাবে।”

তিনি জানান, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী— স্ট্যাম্প প্যাড ও অমোচনীয় কালি সরবরাহ করা হবে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এই সামগ্রী হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইউএনডিপি। এর একটি অংশ চলতি মাসেই আসবে এবং বাকিটা আগামী মাসে।

তিনি বলেন, “স্থানীয় বাজার থেকে আট ধরনের সামগ্রী সংগ্রহ করা হচ্ছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে- গালা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, হেসিয়ান বড় ব্যাগ, হেসিয়ান ছোট ব্যাগ ও গানি ব্যাগ।

সচিব আশ্বস্ত করে বলেন, “নির্বাচন সামগ্রী নিয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই। আমরা যে সময়সীমা নির্ধারণ করেছিলাম, সেই সময়ের মধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারব। নির্বাচনের আগে মাঠ পর্যায়ে সব নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে যাবে।”

ইসির ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন সামগ্রী বিতরণ সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে থাকবে- ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, সিল, কালি ও ভোট গ্রহণের প্রয়োজনীয় সব উপকরণ।

সচিব বলেন, “সময়মতো সামগ্রী পৌঁছানো গেলে নির্বাচন পরিচালনায় কোনো ধরনের বাধা তৈরি হবে না। এতে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”

ঢাকা/এএএম/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৭০ শতাংশ নির্বাচন সামগ্রী কেনাকাটা সম্পন্ন